তিন-চার দিন ধরে কোনো সাড়া-শব্দ নেই বাড়িটিতে। কারও আসা-যাওয়াও চোখে পড়ছে না। বাড়ির গেটে ঝুলছে তালা। বাড়িটি ব্যবসায়ী আবদুল গণি মিয়ার। স্ত্রী তাজিরন বেগম, কিশোর বয়সী ছেলে তাইজুল ও শিশু সন্তান সাদিয়াকে নিয়েই গণি মিয়ার সংসার। কিন্তু তাদের বাড়ির দরজায় তালা ঝুলতে দেখে প্রতিবেশীরা ভেবেছেন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে হয়তো বেড়াতে গেছেন। গণি মিয়া রিকশা-ভ্যানের ব্যবসা করতেন। পাশাপাশি করতেন সুদের ব্যবসা। যে কারণে টাকার প্রয়োজনে লোকজন তার বাসায় আসতেন নিয়মিত। কিন্তু কয়েকদিন ধরে গণি মিয়ার বাড়ির দরজা বন্ধ পেয়ে লোকজন এসে ফিরে চলে যান। ফোন করেও তাকে পাওয়া যায় না। গণি পরিবারের তিনটা মোবাইল ফোনই বন্ধ থাকায় প্রতিবেশীরা গণির বড় মেয়ে সোনিয়ার কাছে ফোন দেন। তারা গণি মিয়ার খবর জানতে চান। বড় মেয়ে সোনিয়া থাকেন অন্য গ্রামে। তিনিও বাবা ও মায়ের ফোনে পাচ্ছেন না বলে জানান। এক সময় সন্দেহ হয়। গণি মিয়ার শ্যালক খবর নিতে যান গণি মিয়ার বাসায়। দরজায় তালা ঝুলতে দেখে জানালা দিয়ে ঘরের ভিতর চোখ রাখেন। ভিতর থেকে পচা গন্ধ বেরিয়ে আসছিল। ভিতরে চোখ রাখতেই আঁতকে ওঠেন তিনি। তার ভগ্নিপতি গণি মিয়ার লাশ পড়ে আছে ভিতরে। পাশেই তার বোনের লাশ! দুজনের গলা কাটা। চিৎকার দেন গণির শ্যালক। প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। আসে পুলিশও। পুলিশ দরোজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে। দুটি লাশ উদ্ধারের পর তাদের দুই সন্তানের খোঁজ শুরু হয়। পাশের কক্ষেই মেলে দুই সন্তানের লাশ। তাদের কুপিয়ে হত্যা করা হয়। থেঁতলে দেওয়া হয় মুখ। ঘটনাটি ২০২০ সালের জুলাই মাসের। ঘটেছে টাঙ্গাইলের মধুপুরে। পুলিশের তদন্ত শুরু হয়। ঘটনাস্থল থেকে একটি কুড়াল পাওয়া গেছে। নিহতদের শরীরে কুড়ালের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ কুড়াল নিয়ে পুলিশের তদন্ত এগোয়। কেন এরকম সাধারণ একটি পরিবারের সব সদস্যকে হত্যা করা হলো বলতে পারছেন না এলাকাবাসী। প্রাথমিক তদন্তে বিশেষ কোনো ক্লু পায় না পুলিশ। গণি আর তার পরিবারের সদস্যদের মোবাইল ফোনগুলো খুঁজে পায় না পুলিশ। তার ফোনে সর্বশেষ কারা ফোন করেছিল, তাদের নামের তালিকা তৈরি করে র্যাব খুনি শনাক্তের চেষ্টা চালায়। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার করে পুলিশ সাগরকে চিহ্নিত করে। পরে তাকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় তার সঙ্গে জড়িত আরও একজনের নাম বলেন। আবদুল গণির সফঙ্গ সাগর আলীর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল। সাগর আলী আবদুল গণির বাসার কাছেই ভাড়া থেকে মধুপুরে রিকশা চালাতেন। বিভিন্ন সময় গণির কাছ থেকে সাগর সুদে টাকা ঋণ নিয়েছেন। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে আগে কয়েকবার ব্যর্থ হয়েছেন। ১৫ জুলাই সকালে গণির কাছে সাগর ২০০ টাকা ঋণ চাইতে যান। এ সময় আবদুল গণি সাগরকে অপমান করেন এবং তাকে কোনো ঋণ দেবে না বলে জানান। পরে মধুপুর বাজারে গিয়ে এক বন্ধুর সঙ্গে গণিকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মতো ওই?দিন রাত ১০টার দিকে আবদুল গণির মাস্টারপাড়া এলাকার বাসায় যান। তখন গণির স্ত্রী ও সন্তানরা ঘুমে ছিল। গণির সফঙ্গ কথা বলার একপর্যায়ে রুমালে চেতনানাশক নিয়ে তার নাকে-মুখে চেপে ধরে অজ্ঞান করেন। অন্য কক্ষে থাকা গণির স্ত্রী ও সন্তানদেরও চেতনানাশক দিয়ে অজ্ঞান করেন। পরে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া ছুরি দিয়ে এবং ওই বাড়িতে থাকা কুড়াল দিয়ে তাদের হত্যা করেন। তারা ওই বাড়ি থেকে কিছু মালামাল লুট করে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় ঘরের দরজায় ও গেটে তালা দিয়ে যান। পরে সাগর ব্রাহ্মণবাড়িয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে তার বোনের ঘরে লুট করা মালামাল গর্ত করে লুকিয়ে রাখেন।
শিরোনাম
- শান্তি প্রস্তাব মেনে নিতে ইউক্রেনকে সময় বেঁধে দিলেন ট্রাম্প
- মামদানিকে ট্রাম্পের অভিনন্দন, বৈঠককে বললেন ‘দারুণ ও ফলপ্রসূ’
- ফাইনালে পাকিস্তানকে পেল বাংলাদেশ
- ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩০
- বিএনপির রাজনীতিতে সব ধর্মের প্রতি সম্মান আছে : এ্যানী
- আমরা কোন রাজনীতির কথা ভাবছি
- রাজধানীতে বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে আগুন, পুড়ল দোকান
- ঢাকায় ভূমিকম্পে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের সমবেদনা
- ভূমিকম্পে ঢাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের তালিকা প্রকাশ
- নারায়ণগঞ্জ জেলায় ভূমিকম্পে শিশুর মৃত্যু, আহত ২৪
- যাত্রাবাড়ীতে নবীউল্লাহ নবীর গণসংযোগ
- রাজধানীতে পরিবার পরিকল্পনা কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচি
- ‘তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে হাসিনার বিচার হয়েছে, তবে আপিলের সুযোগ আছে’
- পোস্টাল ভোটিং: দুই দিনে সাড়ে ৬ হাজার নিবন্ধন
- একসঙ্গে সহকারী অধ্যাপক হলেন ১৮৭০ শিক্ষক
- হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন সতর্কবার্তা
- ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদী জেলায় যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে
- রাজশাহীতে বদ্ধ ঘর থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার
- ‘ঢাকার পুরনো ভবনগুলোর ৯০ শতাংশ বিল্ডিং কোড না মেনে নির্মিত’
- ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০
চার খুনের খুনি ছিল দুজন
মির্জা মেহেদী তমাল
প্রিন্ট ভার্সন
এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর