শুক্রবার, ৬ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

এক দিনে ২৬৪ মৃত্যুর রেকর্ড

করোনায় ২৪ ঘণ্টায় ১২ হাজার ৭৪৪ জন শনাক্ত, জুলাইয়ের ৯৮ শতাংশ রোগী ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের

নিজস্ব প্রতিবেদক

এক দিনে ২৬৪ মৃত্যুর রেকর্ড

করোনাভাইরাস তান্ডবে লাগাম ছাড়াচ্ছে মৃত্যু। ভাইরাসটির কারণে মৃত্যুর মিছিলে গত এক দিনেই যুক্ত হয়েছে ২৬৪ জনের নাম। মহামারীর ১৭ মাসে এক দিনে এত মৃত্যু আগে কখনো দেখতে হয়নি দেশকে। ৭ জুলাই প্রথমবারের মতো দৈনিক মৃত্যু দুই শর কোটা পার হয়। ওই মাসেই একাধিকবার ভাঙে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। গত ২৪ ঘণ্টায় আবারও এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর নতুন রেকর্ড তৈরি হলো দেশে। এদিকে ২৫ জুলাই থেকে টানা ১২ দিন দুই শতাধিক মৃত্যুর খবর দিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। এই ১২ দিনেই মোট মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৮৫৬ জনের। গত জুন পর্যন্ত কোনো মাসেই এত মৃত্যু হয়নি। এর আগে এক দিনে সর্বোচ্চ ২৫৮ জনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়েছিল ২৭ জুলাই। তার আগের দিন ২৪৭ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর, যা ছিল ওই দিন পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। মৃত্যু বাড়লেও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে সংক্রমণ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার গত ৩০ জুলাইয়ের পর টানা ছয় দিন কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬ হাজার ৯৯৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১২ হাজার ৭৪৪ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৭.১২ শতাংশ। আগের দিন শনাক্তের হার ছিল ২৭.৯১ শতাংশ। গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৩ লাখ ২২ হাজার ৬৫৪ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ২১ হাজার ৯০২ জন। সুস্থ হয়েছেন ১১ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ২৬৪ জনের মধ্যে ১৪০ জন ছিলেন পুরুষ ও ১২৪ জন নারী। ২৪৫ জন হাসপাতালে ও ১৯ জন বাড়িতে মারা গেছেন। সর্বোচ্চ ৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এ ছাড়া ৫৬ জন চট্টগ্রাম, ৩৫ জন খুলনা, ২৩ জন সিলেট, ১৯ জন রাজশাহী, ১৮ জন রংপুর, ১৬ জন বরিশাল ও ১০ জন ময়মনসিংহ বিভাগে মারা গেছেন। বয়স বিবেচনায় মৃতদের মধ্যে ১৪২ জন ছিলেন ষাটোর্ধ্ব, ৫৯ জন পঞ্চাশোর্ধ্ব, ৩১ জন চল্লিশোর্ধ্ব, ২৫ জন ত্রিশোর্ধ্ব, ৫ জন বিশোর্ধ্ব, একজনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছর ও একজনের বয়স ছিল ১১ বছরের কম।

এদিকে অধিকাংশ বিভাগে সংক্রমণ কমতে শুরু করলেও বাড়ছে সিলেটে। মৃত্যুও বাড়ছে এই বিভাগে। গতকাল পর্যন্ত সিলেটে মোট ৮২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা মোট মৃত্যুর ৩.৭৭ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় এই বিভাগে মারা গেছেন ২৩ জন, যা এই সময়ের মধ্যে মোট মৃত্যুর ৮.৭১ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ৩৯ শতাংশ শনাক্তের হার ছিল সিলেট বিভাগে। এ ছাড়া বরিশাল বিভাগে ৩৬.৩১ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৩.৭৬ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ৩০.৪৪ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ২৫ শতাংশ, ঢাকা বিভাগে ২৪.৫৭ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ২০.৭৫ শতাংশ ও রাজশাহী বিভাগে ১৭.৩১ শতাংশ ছিল শনাক্তের হার।

জুলাইয়ের ৯৮ শতাংশ কভিড রোগী ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত : দেশে জুলাই মাসে কভিডে আক্রান্ত ৩০০ জনের নমুনা থেকে পাওয়া করোনাভাইরাসের জিন বিশেষণ করে ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পরিচালিত গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং এ গবেষণার পৃষ্ঠপোষক অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ৩০০ নমুনার জিন বিন্যাস বিশেষণ করে তারা দেখেছেন, মোট সংক্রমণের প্রায় ৯৮ শতাংশ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট, যা ভারতে প্রথম  শনাক্ত হয়েছিল। এ ছাড়া ১ শতাংশ সংক্রমণ হয়েছে সাউথ আফ্রিকায় প্রথম পাওয়া বেটা ভ্যারিয়েন্টের কারণে। চলতি বছরের ২৯ জুন থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত দেশব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ওপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষকরা জানান, তথ্য বিশেষণের জন্য দেশের সব বিভাগের রিপ্রেজেন্টেটিভ স্যাম্পলিং করেন তারা। মোট ৩০০ কভিড পজিটিভ রোগীর ন্যাযোফ্যারিনজিয়াল সোয়াব স্যাম্পল থেকে নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়।

 উপাচার্য বলেন, গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত আক্রান্তদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ পুরুষ, যাদের বয়স ৯ মাস থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ছিল। এর মধ্যে ৩০ থেকে ৩৯ বছর বয়সী রোগীর সংখ্যা ছিল বেশি। উপাচার্য বলেন, ‘যেহেতু কোনো বয়সসীমাই কভিড-১৯ এর জন্য ইমিউন করছে না, সে হিসেবে শিশুদের মধ্যেও কভিড সংক্রমণের ‘ঝুঁকি নেই’- এমনটা বলা যাচ্ছে না।’ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের শ্বাসতন্ত্রের রোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সারের মতো ‘কো-মরবিডিটি’ রয়েছে, তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার বেশি বলে গবেষণায় দেখা গেছে। পাশাপাশি ষাটোর্ধ্ব বয়সী রোগীদের দ্বিতীয়বার সংক্রমণ হলে সে ক্ষেত্রে মৃত্যু ঝুঁকি বেশি থাকছে। গবেষণার তথ্য থেকে তুলে ধরে শারফুদ্দিন আহমেদ জানান, বাংলাদেশে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে আলফা ভ্যারিয়েন্টের (যুক্তরাজ্যে উদ্ভূত) সংক্রমণ হার বেশি ছিল। পরে ২০২১ সালের মার্চের তথ্যে সাউথ আফ্রিকায় প্রথম পাওয়া বেটা ভ্যারিয়েন্টের দাপট দেখা যায়। এ গবেষণার নেতৃত্ব দেন বিএসএমএমইউর জেনেটিক্স অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু।

সর্বশেষ খবর