বুধবার, ১১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

আলু নিয়ে সক্রিয় সিন্ডিকেট

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

আলু নিয়ে সক্রিয় সিন্ডিকেট

স্মরণকালের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত বছর আলুর কেজি ৫০ টাকায় ওঠার পর এবারও একটি সিন্ডিকেট আলুর দাম বাড়াতে নানা প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তারা কোল্ডস্টোরেজে মজুদ আলু রেশনিং কার্যক্রমসহ রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিতরণের জন্য সরকারের নীতি নির্ধারকদের উদ্বুদ্ধ করছেন। তাদের দাবি সরকার যেন উদ্বৃত্ত আলু কিনে নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সরবরাহ করে।

জানা গেছে, গত কয়েক দিনে সরকারের সংস্থাগুলোর কাছে আলু গছিয়ে  দিতে এফবিসিসিআই নেতৃবৃন্দসহ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা অন্তত দুজন মন্ত্রীর দফতরে ধরনা দিয়েছেন। দুই দিন আগে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে বৈঠকের পর গতকাল কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারা। তবে গতবারের দাম বাড়ার অভিজ্ঞতার পর এবার কোনো মন্ত্রীই সরকারের রেশনিং কর্মসূচিতে আলু সরবরাহের বিষয়ে সম্মতি দেননি বলে জানা গেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ব্যবসায়ীরা গত বছরের মতো এবারও টিসিবির মাধ্যমে আলু বিক্রির আবদার করেছিল। বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর টিসিবি’র সঙ্গেও বৈঠক করেছেন কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। তবে সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানটি আলু বিক্রিতে সম্মত হয়নি।

সূত্র জানায়, আমরা একটি বিকল্প প্রস্তাব করেছি, টিসিবির ডিলাররা তিন দিন পরপর বাইরোটেশন পদ্ধতিতে পণ্য নিয়ে বিক্রি করেন। অর্থাৎ একদিন পণ্য নেওয়ার পর তিন দিন তারা পণ্য পায় না। মাঝের ওই সময়ে কোন ডিলার চাইলে কোল্ডস্টোরেজ থেকে আলু নিয়ে বিক্রি করতে পারে। এর বাইরে টিসিবির আর কিছু করার সুযোগ নেই।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাড়া না পেয়ে গতকাল কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এফবিসিসিআই ও কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের ব্যবসায়ী নেতারা। এ সময় তারা গত বছরের মতো এবারও যাতে সরকারিভাবে ক্রয় করে ত্রাণ, কাবিখা, ভিজিএফ, ওএমএস, রোহিঙ্গাদের মধ্যে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে রেশনে আলু বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয় সে দাবি জানান।

জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, গত বছর করোনার শুরুর দিকে আমরা বিভিন্ন ত্রাণ কাজে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে ও রেশনে আলু বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। এর ফলে আলুর ব্যবহার অনেক বেশি হয়েছিল এবং শেষদিকে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। এবছর উদ্বৃত্ত আলু বাজারজাতের জন্য উচ্চপর্যায়ে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, বর্তমানে আলুর বাজারদর কম এই যুক্তি দেখিয়ে কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধ দল মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন, চলতি ২০২১ মৌসুমে ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। বিপরীতে দেশে আলুর চাহিদা ৮৫-৯০ লাখ মেট্রিক টন। এর ফলে প্রায় ২০ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত রয়েছে। এ বছর প্রায় ৪০০ হিমাগারে ৫৫ লাখ টন খাবার আলু, বীজ আলু ও রপ্তানিযোগ্য আলু সংরক্ষিত আছে। এটির সুষ্ঠু ব্যবহার না হলে আলুর দাম আরও কমে যাবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের দাবি অনুযায়ী এবারও সরকারের রেশনিং কর্মসূচিতে আলু ব্যবহার করা হলে নভেম্বর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে পণ্যটির দাম বেড়ে যেতে পারে। এ কারণে সরকারি কর্মসূচিতে আলু ব্যবহারের বিষয়ে তারা সতর্ক রয়েছেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, বর্তমানে আলুর দাম কম এটি বলার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় বেশি। হিসাব করে দেখা গেছে, বর্তমানে যে আলু বিক্রি হচ্ছে উৎপাদন খরচ, কোল্ডস্টোরেজ খরচ, মজুদ ঘাটতি বাদ দিলেও মিলগেটে প্রতিকেজি আলুর মূল্য পড়ে সর্বোচ্চ ১২ টাকা। এই আলু খুচরা পর্যায়ে এসে দ্বিগুণ বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে অনলাইন ও ইকমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তারা যেন মিলগেট থেকে ১২ টাকা দরে আলু কিনে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করে। 

গত বছর এ সময়ে প্রতিকেজি আলুর দাম ছিল ১৫ থেকে ১৮ টাকা কেজি। পরে দাম বাড়তে বাড়তে একসময় ৫৫ টাকায় ওঠে পণ্যটির দাম। শেষে সরকার বাধ্য হয়ে পণ্যটির দাম প্রথমে ৩০ টাকা ও পরে ৩৫ টাকা কেজি দর বেঁধে দেয়। তবে দাম নির্ধারণের পরও ৫০ টাকার নিচে নামেনি আলুর দাম। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মূল্যে এই সবজিটি বিক্রির কারণ খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসে সরকারের রেশনিং কর্মসূচিতে আলুর ব্যবহার বাড়ার কারণেই অযৌক্তিকভাবে দাম বেড়েছে। কৃষি বিপণন অধিদফতরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বন্যা, অতিবৃষ্টি, করোনাভাইরাসের কারণে সরকারি ত্রাণ হিসেবে আলু বিতরণ এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) কর্তৃক আলু কিনে রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিতরণের কারণেই আলুর দামে রেকর্ড হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল গত মৌসুমে বাজারে যে আলুটি বিক্রি হচ্ছে কৃষক পর্যায়ে তার উৎপাদন খরচ ছিল কেজিপ্রতি ৮ টাকা ৩২ পয়সা।

সর্বশেষ খবর