বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
বসুন্ধরার খাদ্যসামগ্রী বিতরণ

কয়দিন খাইয়া বাঁচতে পারমু, আল্লায় হ্যাগো ভালো হরুক

নিজস্ব প্রতিবেদক

কয়দিন খাইয়া বাঁচতে পারমু, আল্লায় হ্যাগো ভালো হরুক

বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে গতকালও বিভিন্ন স্থানে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্যাডে তো আর লকডাউন হোনতে চায় না। করোনাও হোনতে চায় না। কাজকাম নাই। খাইয়া-না খাইয়া থাহি। আইজ বসুন্ধরা ত্রাণ দেছে, কয়দিন খাইয়া বাঁচতে পারমুআনে। টাহা তো কত মাইষ্যের আছে। দেয় কয় জন? আল্লায় হ্যাগো কলিজা দেছে। দোয়া হরি, আল্লায় হ্যাগো ভালো হরুক। কথাগুলো বরিশালের বৃদ্ধ শ্রমিক ফারুক খানের। গতকাল বসুন্ধরা গ্রুপের উপহার  হিসেবে ত্রাণসামগ্রী পেয়ে এভাবেই আঞ্চলিক ভাষায় মনের কথাগুলো বলেন তিনি।

শুধু ফারুক খান নয়, গতকাল বরিশালে ৪১০ জন কর্মহীন শ্রমিকের মুখে হাসি ফুটে ওঠে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ পেয়ে। ত্রাণ পেয়েছেন খুলনা, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কক্সবাজার, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। আজও বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিতরণ চলবে। গত বছর দেশে করোনার তান্ডব শুরুর পর থেকেই দেশব্যাপী অসহায় ও কর্মহীন মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করে আসছে বসুন্ধরা গ্রুপ। দেড় বছর পরও একইভাবে অব্যাহত রয়েছে শিল্প গ্রুপটির ত্রাণ কার্যক্রম।

বরিশাল থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকাল বরিশালে করোনাকালে কর্মহীন অসহায়-দুস্থ ৪১০ জন শ্রমিককে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বরিশাল নগরী ছাড়াও জেলার বানারীপাড়া ও টরকী এবং ভোলায় খাদ্য সহায়তা দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। প্রতিজনকে চাল, আটা, তেল, লবণ, মসলাসহ মোট ১৬ কেজির একটি করে প্যাকেট উপহার দেওয়া হয়। বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড এবং বসুন্ধরা মাল্টিফুড প্রোডাক্ট লিমিটেডের ব্যানারে এই খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হয়। কর্মহীন মানুষের মাঝে বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্য সহায়তা বিতরণের প্রশংসা করেছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার। তিনি করোনা প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় বরিশালের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে কিছু অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং আরও ত্রাণ সহায়তা কামনা করেন। আগামীতেও বসুন্ধরা গ্রুপের এই মানবিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজের এরিয়া সেলস ম্যানেজার মো. শহীদুল ইসলাম।

খাদ্য সহায়তা পেয়ে বৃদ্ধ শ্রমিক মো. হারুন বলেন, করোনার কারণে কাজকর্ম নেই। পরিবারের ছয়জন সদস্য নিয়ে কষ্টে দিন কাটছিল তাদের। এ অবস্থায় বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্য সহায়তা পেয়ে তার অনেক উপকার হয়েছে। আগামী দিনে যাতে বসুন্ধরা গ্রুপ আরও বেশি মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে সে জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেন তিনি।

খুলনা থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকাল খুলনার বড় বাজার কালীবাড়ি এলাকায় ২৭৫ জন অসহায় পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের সৌজন্যে বাল্ক টিমের মাধ্যমে দিনমজুর শ্রমিকদের মধ্যে উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। আজ খুলনার চুকনগর ও সাতক্ষীরার কলারোয়ায় শ্রমিকদের মাঝে উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের নির্দেশনায় এই খাদ্যসামগ্রী বিতরণে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (সেলস) মো. ফাইজুল ইসলাম, সুপারভাইজার আশরাফুল জামান সোহাগ, ব্যবসায়ী শ্যাম সুন্দর হালদার। খাদ্য সহায়তা পেয়ে খুলনা বড় বাজার এলাকার দোকান শ্রমিক সিরাজুল শেখ বলেন, লকডাউনের কারণে আয় রোজগার বন্ধ। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। তার মতো অসংখ্য শ্রমিক করোনাকালে বিপর্যয়ে পড়েছেন। বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্য সহায়তা এই পরিস্থিতিতে তাদের অনেক উপকার করল।

পাবনা প্রতিনিধি জানান, পাবনায় ১ হাজার ১০০ অসহায় ও দুস্থ পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় কালের কণ্ঠের পাঠক সংগঠন শুভসংঘ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। গতকাল পাবনা জেলা স্কুল মাঠে প্রধান অতিথি হিসেবে পাবনার প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন খাদ্যসামগ্রী বিতরণের উদ্বোধন করেন। পাবনা জেলা স্কুল মাঠে ৫০০, আটঘরিয়ায় ৩০০ ও ইশ্বরদীতে ৩০০ অসহায় ও দুস্থ পরিবারের মাঝে এই খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। আটঘরিয়ার দেবোত্তর কবি বন্দে আলী মিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাকসুদা আক্তার মাসু। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম, পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম রতন, পাবনা জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. হুজ্জাতুল্লাহ, কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান প্রমুখ।

কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, গতকাল কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নে ১ হাজার ৫০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। করোনা বিপর্যয়ের মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্য সহায়তার উপহার সামগ্রী পেয়ে হাসি ফুটেছে কক্সবাজারের হতদরিদ্র মানুষের মুখে। উপকারভোগীরা বলছেন, মহামারীর কঠিন এই সময়ের অর্থনৈতিক দৈন্যদশায় আমাদের বিপদের বন্ধু হয়ে পেটের খবর নিয়েছে বসুন্ধরা। ত্রাণ বিতরণের সময় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা আহমদ। উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান মেয়র, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হামিদা তাহেরা প্রমুখ।

যশোর থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, যশোরের ঝিকরগাছাসহ বিভিন্ন এলাকায় ১৮০টি অসহায় দরিদ্র পরিবারে খাদ্য সহায়তার মাধ্যমে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এর মধ্যে ঝিকরগাছায় ৯০টি পরিবারকে মঙ্গলবার দুপুরে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। ঝিকরগাছা শহরের বজলু ডালমিল প্রাঙ্গণে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের যশোরের এরিয়া সেলস ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম। এ সময় সেখানে বজলু ডালমিলের স্বত্বাধিকারী জিয়াউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বসুন্ধরা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজের উদ্যোগে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া ও সলঙ্গা থানার ৩০০ শ্রমিকের মাঝে খাদ্য উপহার দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া পৌরসভার অশোক অ্যান্ড ব্রাদার্স এবং সলঙ্গা বাজারের দুলাল কুন্ডের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শ্রমিকদের মধ্যে এসব খাদ্য উপহার বিতরণ করা হয়। করোনা সংকটের মধ্যে কর্মহীন শ্রমিকরা খাদ্য উপহার পেয়ে বসুন্ধরার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর