মঙ্গলবার, ২৪ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

মতামতে আটকে গেছে সরাসরি বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

দেশের উদ্যোক্তাদের সরাসরি বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ রেখে নতুন একটি নীতিমালা করার জন্য বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-কে দায়িত্ব দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। বিডা সেই নীতিমালার খসড়া তৈরির পর এখন বাংলাদেশ ব্যাংক মতামত দিয়ে বলছে, তারা ছাড়া অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ এই নীতিমালা করতে পারবে না। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা মেনে বিডা যে নীতিমালাটি করেছে-তার বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। মতামতেই আটকে গেছে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের সরাসরি বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন থেকে দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ চাইলেও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় সম্ভাবনা সত্ত্বেও সুযোগ পাচ্ছেন না অনেকে। বাংলাদেশিদের বিদেশে বিনিয়োগের সরাসরি সুযোগ না থাকার কারণে অর্থ পাচার বাড়ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় গত বছরের জুলাইয়ে বিডার একজন নির্বাহী সদস্যকে প্রধান করে ‘বিদেশে বাংলাদেশি বিনিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন’ সংক্রান্ত কমিটি করে দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গঠিত কমিটি বেশ কয়েকটি সভা করে, স্টেক হোল্ডারদের মতামত নিয়ে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের বিদেশে বিনিয়োগ সুযোগ দিতে একটি খসড়া নীতিমালা করেছে। ওই নীতিমালার ওপর সরকারের সংস্থাগুলোর কাছে যখন মতামত চাওয়া হচ্ছে-তখনই সামনে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি অবশ্য বলছে, ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অনুযায়ী বিদেশে মূলধন বিনিয়োগের নীতিমালা করার এখতিয়ার তাদের। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান এটি করতে পারবে না। উপরন্তু  অর্থনীতি বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার নির্দেশনা মেনে এরই মধ্যে তারাও এ বিষয়ে একটি নীতিমালার খসড়া করেছে-যা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ শাখার মহাব্যবস্থাপক জগন্নাথ চন্দ্র ঘোষ সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করেন, ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন আইন, ১৯৪৭-এর নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারের সঙ্গে আলোচনাক্রমে মূলধন প্রকৃতির লেনদেন সুনির্দিষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাধিকারভুক্ত। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যতীত অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মূলধন প্রকৃতির লেনদেন সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করতে হলে তাদের বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের আইনটি সংশোধন করতে হবে। বিডার কর্মকর্তারা অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এ অবস্থানটি সমর্থন করছেন না। তারা বলছেন, তারা যে নীতিমালাটি করেছেন তাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রাধিকার ক্ষুণœ হবে না। তারা বলছেন, ১৯৪৭ সালের বৈদেশিক বিনিয়োগ নীতিমালা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘কেস টু কেস’ ভিত্তিতে কিছু কোম্পানিকে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিচ্ছে। এটিকে বিদেশে বিনিয়োগ নীতিমালা হিসেবে চালানো যাবে না। এখানে অনেক শর্ত থাকে। বিডার কর্মকর্তারা বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। এখন এমন অনেক উদ্যোক্তা গোষ্ঠী দেশে তৈরি হয়েছে যারা বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিল্পকারখানা করছে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় মনে করছে, বাংলাদেশিদের বিদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা দরকার। সে লক্ষ্যেই একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয় নীতিমালা প্রণয়নে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) মোহসিনা ইয়াসমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা যে নীতিমালাটি করেছি, এটি কোনোভাবেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। এই খসড়া নীতিমালাটি করা হয়েছে মূলত দেশের উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন কি-না সে বিষয়টি স্পষ্ট করতে। কারণ এ বিষয়ে সুস্পষ্ট  কোনো নীতিমালা নেই।

মোহসিনা ইয়াসমিন বলেন, বিডার নীতিমালায় বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এখন এই সুযোগ কীভাবে দেওয়া হবে, উদ্যোক্তারা কোন প্রক্রিয়ায়, কীভাবে, কী পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগ করতে পারবেন-এ সবই নির্ধারিত হবে প্রচলিত আইন অনুযায়ী। এখন সরকার সিদ্ধান্ত নেবে কোন আইনে এ সুযোগ দেওয়া হবে। কোনো ক্ষেত্রে যদি আইন না থাকে তবে নীতিমালাটি বাস্তবায়নের স্বার্থে নতুন আইন হবে।

সর্বশেষ খবর