রবিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

পিআরবির নাম হচ্ছে পুলিশ রেগুলেশন

৭৮ বছর পর বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বেঙ্গল’ যুক্ত হচ্ছে বিভিন্ন সময়ে জারি হওয়া ২১ এসআরও

আলাউদ্দিন আরিফ

দীর্ঘ ৭৮ বছর পর পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল (পিআরবি), ১৯৪৩। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর কাঠামো, কার্যাবলিসহ যাবতীয় ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণের মূল এ আইনটির নতুন নাম দেওয়া হয়েছে  ‘পুলিশ রেগুলেশন, (পিআর-১৯৪৩)। একই সঙ্গে এযাবৎ পিআরবিতে যে ৩৫টি সংশোধনী, সংযোজন ও বিয়োজন করে এসআরও জারি হয়েছে, সেগুলোকে ভলিউমের নির্ধারিত স্থানে অন্তর্ভুক্ত করে একসঙ্গে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। এজন্য পুলিশ সদর দফতর থেকে ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে সংশোধিত সব বিষয় উল্লেখসহ পিআরবির নাম পুলিশ রেগুলেশন রেখে পুনর্মুদ্রণের কথা বলা হয়েছে। পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেলের পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, ‘পিআরবির যেসব প্রবিধান ইতিমধ্যে সংশোধনপূর্বক বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত (২১টি এসআরও) সংশ্লিষ্ট প্রবিধান সংযোজন করে মুদ্রণের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পুলিশের মাঠপর্যায়সহ সংশ্লিষ্ট সব স্তরে বহুলভাবে ব্যবহৃত পিআরবি (ভলিউম-১)-এর সংশোধিত কপিসমূহ বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে থাকার কারণে পেশাগত কাজে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। এ অবস্থায় পেশাগত কাজের সুবিধার্থে সংযুক্ত এসআরও মোতাবেক পিআরবি (ভলিউম-১) পুনর্মুদ্রণের জন্য প্রস্তুত কপি পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হলো।’ পুলিশ সদর দফতর পিআরবি হালনাগাদ করে মুদ্রণের জন্য অতিরিক্ত আইজিপি ও সিআইডি প্রধান ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমানকে প্রধান করে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি করেছে। কমিটির প্রধানের সভাপতিত্বে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠক করে পিআরবি ভলিউমে বিভিন্ন সময় জারি হওয়া এসআরওগুলো যথাস্থানে সংযুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, স্বাধীন বাংলাদেশে পিআরবির প্রথম সংশোধনী হয় ১৯৭২ সালে। ওই বছরই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলের পিআরবির নাম পরিবর্তন করে পুলিশ রেগুলেশন করা হয়। কিন্তু ওই সময় পুলিশ সদর দফতর থেকে পিআরবির প্রকাশিত ভলিউমগুলোয় বেঙ্গল নামটি থেকে যায়, যা এখন কার্যকর হচ্ছে। তাই পিআরবির নাম সংশোধনের জন্য নতুন করে কোনো আইন বা আদেশের প্রয়োজন নেই। পুলিশ সদর দফতরে পাওয়া নথি থেকে জানা গেছে, ১৯৭২ সালে পিআরবির প্রথম সংশোধনীতে আইনের সেকশন ৬ অনুযায়ী বেঙ্গল শব্দটি বাদ দিয়ে ‘পুলিশ রেগুলেশন-১৯৪৩’ করা হয়। ১৯৭৫ সালের ২৫ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক স্মারকে পিআরবিতে আরও কিছু পরিবর্তন আনা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর সরকারের এসআরও নম্বর ৪০৫ অনুযায়ী পিআরবিতে তৃতীয় সংশোধনী আসে। এরপর ধারাবাহিকভাবে ১৯৮৩ সালের জুলাইয়ে চারটি, ১৯৯২ ও ১৯৯৪ সালে একটি এসআরও জারি করে পরিবর্তন আনা হয়। ১৯৯৬ সালে পাঁচটি, ১৯৯৭, ১৯৯৯ ও ২০০৪ সালে একটি করে এসআরওর মাধ্যমে সংশোধনী আনা হয়। ২০০৬ সালে তিনটি ও ২০১২ সালে সাতটি এসআরও জারি হয়। ২০১৩ সালে একটি এবং ২০১৬ ও ২০১৯ সালে দুটি করে এসআরও জারি হয়। ২০২১ সালে তিনটি এসআরও জারি হয়। সর্বশেষ এসআরও জারি হয়েছে পুলিশ কনস্টেবল ও এসআই সমমর্যাদার কর্মকর্তাদের ন্যূনতম উচ্চতা বৃদ্ধিসহ নিয়োগবিধিতে পরিবর্তন-সংক্রান্ত।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘পিআরবি পুলিশের মূল চালিকাশক্তি। এ আইনে পুলিশকে অবারিত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ঔপনিবেশিক শাসনামলের পিআরবিতে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন সময় নানা সংযোজন-বিয়োজন ও যুগোপযোগী করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তাই রাষ্ট্রের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় পিআরবিতে নানা ধরনের সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন করা হয়েছে। পিআরবির সংযোজন, বিয়োজন বা পরিবর্তনগুলো একসঙ্গে না থাকায় মাঠপর্যায়ে দৈনন্দিন কাজে বিঘ্ন ঘটছে এবং নানাবিধ জটিলতা তৈরি হচ্ছে। তাই সব এসআরও বা গেজেট একসঙ্গে করে পিআরবির পূর্ণাঙ্গ ভলিউম প্রকাশ করা হলে দৈনন্দিক কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।’ ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বাজারে বিভিন্নজনের লেখা ও অনুবাদ করা পিআরবির কিছু বই পাওয়া যায়। সেগুলো ত্রুটিমুক্ত নয়। এ ছাড়া সেগুলোর অফিশিয়াল স্বীকৃতিও নেই। পুলিশ রেগুলেশন, ১৯৪৩-এর পুনর্মুদ্রণের প্রস্তাবটি পাস হলে এবং সেটি পুনর্মুদ্রিত হলে এটা হবে দাফতরিকভাবে স্বীকৃত।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি মো. হায়দার আলী খান গত রবিবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাষ্ট্রের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় আইনের পরিবর্তন, সংশোধন বা সংযোজন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। পিআরবির পুনর্মুদ্রণের বিষয়টি বিস্তারিত জেনে বলতে হবে।’

সর্বশেষ খবর