শুক্রবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
শেষ হলো সংসদ অধিবেশন

জিয়ার লাশ নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে কবরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের লাশ থাকা না থাকা নিয়ে জাতীয় সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে উত্তপ্ত বিতর্ক হয়েছে। সরকারি দলের সদস্যরা বলেন, ‘জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর তার লাশ পরিবারের কেউ দেখেননি। খালেদা জিয়া দেখেননি। তারেক জিয়া লাশ দেখার জন্য কান্নাকাটিও করেছিলেন। শাহ আজিজ একটি চালাকি করেছিলেন- “লাশ পাওয়া যাক না যাক একটা বাক্স পাঠিয়ে দাও”। সেই বাক্স পাঠানো হয়েছিল।’ বিএনপি নেতারা বলেন, ‘সেখানে যে লাশ  নাই, তা আপনারা (আওয়ামী লীগ) কীভাবে জানলেন? এত বছর ধরে ক্ষমতায় থেকে এটা নিয়ে আগে কথা বলেন নাই কেন? এখন কেন বলছেন?’ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল জাতীয় সংসদের ১৪তম অধিবেশনে ‘বাংলাদেশ জাতীয় আর্কাইভস বিল, ২০২১’ পাসের প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা এ বিষয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। বিএনপির রুমিন ফারহানার বক্তব্যের শেষের দিকে সংসদে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সরকারদলীয় সদস্যরা হইচই করেন। এ সময় সংসদ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিলের ওপর আলোচনাকালে ইস্যুটি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন বিএনপির সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির এমপিরা বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্য দেন। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ জিয়ার লাশ থাকার বিষয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানের প্রস্তাব দেন। পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম দীর্ঘ বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, ‘আজ ৪০ বছর পর লাশ নিয়ে লাফালাফি করা হচ্ছে। ১৯৮১ সালের ২০ জুন আমি সংসদের নতুন সদস্য। জিয়াউর রহমান তখন মারা গেছেন। বিএনপি তখন ক্ষমতায়। সংসদে আমি সরকারের কাছে এটা জানতে চেয়েছিলাম। এটা প্রসিডিংসে আছে। আমি সেদিন বলেছিলাম- আপনারা প্রমাণ করেন ওই বাক্সে কোনো লাশ আছে কি না। আমি দুই দিনের মধ্যে লাশের ছবি ছাপিয়ে জনমনের সন্দেহ দূর করতে বলেছিলাম। আজ ৪০ বছরেও একখানা ছবি দেখাতে পারেননি।’ তিনি বলেন, সংসদ ভবন এলাকায় জিয়াউর রহমানের লাশ রয়েছে বিএনপির এমপিরা তা সংসদে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ইতিহাস বিকৃতি তো বিএনপিও করে। তারা বলে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান। এ বিষয়ে আমাদের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। আর তিনি (জিয়াউর রহমান) বেঁচে থাকতে কখনই বলতে শুনিনি, দেখিনি যে তিনি নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক বলেছেন। তাদের প্রথমে ইতিহাস বিকৃতি বন্ধ করতে হবে। তারপর আওয়ামী লীগ যদি ইতিহাস বিকৃতি করে থাকে সেটা বন্ধের আহ্‌বান বিএনপি জানাতে পারে। বিএনপির সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের লাশ সেখানে (চন্দ্রিমা উদ্যান) আছে কি নাই, সেটা বড় বিষয় নয়। সেখানে যে লাশ নাই, তা আপনারা (আওয়ামী লীগ) কীভাবে জানলেন? এত বছর ধরে ক্ষমতায় থেকে এটা নিয়ে আগে কথা বলেন নাই কেন? এখন কেন বলছেন?’ বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আর্কাইভস যদি করতে হয় তাহলে স্বীকার করতে হবে জিয়াউর রহমান ছিলেন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বীরউত্তম ছিলেন এটা স্বীকার করতে হবে। তিনি ছিলেন আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। ওনারা ওনাদের কথা বলবেন আর আমরা আমাদের কথা। এইটুকু ধৈর্য যদি তাদের না থাকে তাহলে তারা কী ইতিহাস লিখবেন? চর্চা করবেন? আর্কাইভসে কী জমা করবেন তা ভালো করেই বুঝতে পারছি।’ তিনি বলেন, ৪০ বছর পর কেন জিয়াউর রহমানের কবর নিয়ে এই বিতর্ক? সরকারের ব্যর্থতা, ভোট চুরি, গণতন্ত্রহীনতা, লুটপাট থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য এই বিতর্ক করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর