সুরে আর বাণীতে সাঁইজির ভক্তিতে ভিন্ন রকম আবহ ছিল শিল্পকলা একাডেমির শারদীয় সন্ধ্যা। দিনের আলো নেভার সঙ্গে সঙ্গে সাঁঝের বেলায় সুরের ঢেউ তুলেছিল দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লালনভক্তরা। সুরের মূর্চ্ছনায় শৈল্পিকতার চাদরে ঢাকা ছিল সমগ্র একাডেমি। কথা আর সুরের দ্যোতনার মিশেলে নান্দনিকতার আবহ ছিল একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে। আঁধারে ঢাকা শরতের সন্ধ্যাটিকে সুরের তালে, লয়ে, ছন্দের আলোর ঝরণা ধারায় ধুইয়ে দিয়েছিল বাউল শিল্পী ও সাধুরা। পূর্ণিমা তিথির এমন আয়োজন শিল্পকলা একাডেমিতে আগত সুরের কাঙাল ও লালনভক্তদের সুরের ক্ষুধা মিটিয়েছিল প্রাণের গহিন থেকে। দীর্ঘ লকডাউনের পর সুরের বৃষ্টিতে ভিজল শ্রোতারা। গতকাল সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় ‘মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ শিরোনামের এ বাউল গানের আসর। এতে অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক সোহরাব হোসেন, চিত্রশিল্পী শহীদ কবির, ঢাকা জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম, লালন গবেষক ড. আবু ইসহাক হোসেন, একাডেমির প্রযোজনা বিভাগের পরিচালক সোহাইলা আফসানা ইকো এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
অনুষ্ঠানে সাঁইজির ভাববাণী পরিবেশন করেন শিল্পী কিরণ চন্দ্র রায়, লতিফ শাহ্, সমির বাউল, আকলিমা বাউল, বিমল চন্দ্র দাস, জহুরা ফকিরানী, বাউল শাহাবুল, দিতি সরকার, নয়ন শীল, রোখসানা রুপসা এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির বাউল দল। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সমির বাউল পরিবেশন করেন- এলাহি আলামিনগো আল্লাহ। এরপরের পরিবেশনায় একে একে বাউলরা পরিবেশন করেন- ধন্য ধন্য বলি তারে, ও যার নাম শুনিলে আগুন জ্বলে, তুমি বা কার কে বা আমার, তিন পাগলের হলো মেলা নদে এসে, আমার ঘরখানায় কে বিরাজ করে, যদি ত্বরিতে বাসনা থাকে ডুবে দেখ দেখি মন, খাঁচার ভিতর অচিন পাখি, না জানি ভাব নদী, যার ভাবে মরিয়াছি ভাব, যেখানে সাঁইয়ের বারামখানা, দেখা দিয়ে ভাবের শহর ইত্যাদি গানের পরিবেশনা সমগ্র আয়োজনকে উপভোগ্য করে তোলে শিল্পীরা। সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে পূর্ণিমা তিথিতে সাধুসংঘের এই আসর।