বুধবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিনিয়োগে আগ্রহী শক্তিধর দেশগুলো

জিন্নাতুন নূর

বিনিয়োগে আগ্রহী শক্তিধর দেশগুলো

বিশ্বের শক্তিধর বিভিন্ন দেশ ক্রমেই বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এরই মধ্যে জাপান, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মতো দেশগুলো এ খাতের বড় প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করেছে। আর শক্তিধর এসব দেশ ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের ব্যাপারে বিভিন্ন সময় আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর বাইরেও পোল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, কাতার, সৌদি আরব, সুইডেন, আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি দেশ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ, জ্বালানি অনুসন্ধানসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহী। এরই মধ্যে এসব দেশ তাদের আগ্রহের বিষয়টি দেশের সংশ্লিষ্ট খাতের দায়িত্বপ্রাপ্তদের জানিয়েছেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশের জ্বালানি বাজার বিশ্বের বড় বাজারগুলোর একটিতে পরিণত হতে যাচ্ছে। আর এ খাতের উন্নয়ন ও বিনিয়োগের জন্য সরকার প্রচারণাও চালাচ্ছে।  দেশে নির্মিতব্য প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় তৈরি হচ্ছে। এ প্রকল্পের নির্মাণ খরচ ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এটি এখন পর্যন্ত আর্থিক বিবেচনায় দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এর বেশির ভাগ খরচ (৯০ হাজার কোটি টাকার বেশি) রাশিয়া সরকারের ঋণ সহায়তা থেকে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে রাশিয়ার সমর্থন ও সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ গত ১১ অক্টোবর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে গেলে প্রধানমন্ত্রী লিখাচেভকে এমনটি জানান। এতে অ্যালেক্সি লিখাচেভও ভবিষ্যতে দেশের বিদ্যুৎ খাতে রাশিয়ার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান। এর আগে গত আগস্ট মাসে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাতে বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ান ফেডারেশনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভিকেনটিয়েভিজ মানটিটস্কি দেশের জ্বালানি খাতে সহযোগিতার ক্ষেত্র বৃদ্ধিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধান কার্যক্রমেও রাশিয়া অবদান রাখতে আগ্রহী। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জেবিআইসি)। প্রতিষ্ঠানটি এলএনজি টার্মিনাল, এলপিজি টার্মিনাল, গ্যাস পাইপলাইন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, গ্যাস মিটার, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জলবিদ্যুৎ, জ্বালানি দক্ষতা, পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান খাতে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। বিদ্যুৎ   প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে গত আগস্টে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় এ আগ্রহের কথা জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিরা। মন্ত্রণালয়ে এ জন্য একটি সমঝোতা সইয়ের প্রস্তাবও পাঠিয়েছে তারা। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ তাদের জন্য প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগে একমতও প্রকাশ করেছে। এরই মধ্যে জাপান মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছে। এ ছাড়াও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। এক্সিলারেট এনার্জি, জিই-এর মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কাজ করছে। এর বাইরেও বাংলাদেশে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে দুই দেশের একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ আছে বলে দুই দেশের দায়িত্বশীলরা একমত হয়েছেন। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিভিন্ন প্রকল্পে এরই মধ্যে বিনিয়োগ করেছে চীন। এর বাইরে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করবে চীন। এ জন্য নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি এবং চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের মধ্যে সমান মালিকানায় যৌথ অংশীদারিত্ব কোম্পানি গঠনে চুক্তি সই হয়েছে।

এ ছাড়াও কোরিয়ার জায়ান্ট কোম্পানিগুলো দেশের জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। জিওনজি সিইএস নামে কোরীয় জায়েন্ট কোম্পানি দেশের জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সিউলে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবহিত করেছেন কমার্শিয়াল কাউন্সিলর ড. মো. মিজানুর রহমান। জানা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান জিওনজি সিইএস বাংলাদেশে একটি এলপিজি প্লান্ট স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) ফরমও পূরণ করেছে। উল্লেখ্য, কোরিয়া বাংলাদেশের ষষ্ঠ বৃহৎ বিনিয়োগকারী দেশ। ঢাকায় অবস্থিত কোরিয়ান দূতাবাসের তথ্যে, অন্তত ২০০ কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে এলএনজিসহ জ্বালানির বিভিন্ন উপ-খাতে আরও কাজ করতে চায় কাতার। কাতারের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত আহমেদ মোহাম্মদ নাসের আল দেহিমি গত জুনের শেষ দিকে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের বাসভবনে দেখা করে তার এই আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়।

এ ছাড়াও বাংলাদেশের খনি উন্নয়ন ও এলএনজি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী ইউরোপের দেশ পোল্যান্ড। বাংলাদেশ সফরে আসা পোল্যান্ডের অর্থ প্রতিমন্ত্রী জিসওয়াভা গাওলিক সাংবাদিকদের এমনটি জানান। জিসওয়াভা গাওলিক জানান, বাংলাদেশের কয়লা উত্তোলন, খনি উন্নয়ন, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন ও শেল গ্যাস খাতে বিনিয়োগ করতে চায় পোল্যান্ড। দেশের সৌরবিদ্যুতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী সৌদি আরব। এ জন্য বাংলাদেশ জায়গা দিতে পারলে এই খাতে বড় বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা আছে। এ ছাড়াও এলএনজি খাতে বিনিয়োগে দেশটির আগ্রহ আছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বেসরকারি বাণিজ্য সংগঠনের নেতাসহ উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল সৌদি সফরে যান। সে সফরে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। সুইডেনও দেশের জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী। দেশটির আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতাবিষয়ক মন্ত্রী পের ওলসন ফ্রিদ গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এ আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী সংযুক্ত আরব আমিরাতও। মূলত দেশটির ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে এলএনজি ও জেট ফুয়েল সরবরাহ, রিফাইনারি স্থাপন, এফএসআরইউ ও স্থলভিত্তিক টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহী।

সর্বশেষ খবর