রবিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

যেমন হবে ভবিষ্যতের সড়ক-মহাসড়ক

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

যেমন হবে ভবিষ্যতের সড়ক-মহাসড়ক

ধীরগতির যানবাহন চলাচলের সুবিধাসংবলিত সার্ভিস রোড ছাড়া ভবিষ্যতে দেশে কোনো মহাসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা যাবে না। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতায় সড়ক নির্মাণে নতুন প্রকল্প গ্রহণের জন্য সরকার যে পরিপত্রের খসড়া তৈরি করেছে সেখানে এ ধরনের শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এসব শর্তের প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে- জাতীয় মহাসড়কের উভয় পাশে ধীরগতির যানবাহনের (রিকশা, ভ্যান ইত্যাদি) জন্য সার্ভিস সড়ক নির্মাণসহ পথচারী চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

সূত্র জানান, ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের উভয় পাশে ধীরগতির যান চলাচলের জন্য রাখা হয়েছে সার্ভিস রোড। পথচারী পারাপারে ডিভাইডারও রয়েছে। ফলে দুর্ঘটনা রোধে একে একটি কার্যকর সড়ক হিসেবে বিবেচনা করছে সরকার। এখন এ সড়কটিকে আদর্শ ধরে দেশের অন্য মহাসড়কগুলোতেও সার্ভিস               রোড বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সূত্রগুলো আরও জানান, যানজট প্রতিরোধে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হলেও এর যানজট ও দুর্ঘটনা কোনোটিই কমেনি। ফলে বিপুল অর্থ খরচ করে মহাসড়কটি নির্মাণ করা হলেও এ থেকে খুব বেশি সুফল মেলেনি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান সম্প্রতি তাঁর এক লেখায় উল্লেখ করেছেন, ‘সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে হলে দুটি বিষয়ের ওপর আমি সবচেয়ে বেশি জোর দেব তা হলো রোড ডিভাইডার ও সার্ভিস রোড নির্মাণ করতে হবে। আমাদের বেশির ভাগ মহাসড়ক দুই লেনের এবং মাঝখানে কোনো রোড ডিভাইডার নেই। এটা একটা বড় সমস্যা। অন্য একটি প্রধান সমস্যা হলো ব্যস্ততম এলাকার পাশের মহাসড়কের স্থানীয়দের চলাচলের জন্য সার্ভিস রোড নেই। রোড ডিভাইডার না থাকায় যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হচ্ছে। আর সার্ভিস রোড না থাকায় স্থানীয়রা চলাচলের জন্য মহাসড়ক ব্যবহার করছেন। তাই গতির পার্থক্যের কারণেও মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটছে। এ দুই বিষয়ে সরকারকে অবশ্যই জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যমান মহাসড়কগুলোর বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অভিমত ও সরকারের মন্ত্রণালয় এবং সংস্থার মতামত নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতিসংক্রান্ত একটি পরিপত্রের খসড়া তৈরি করেছে, সেখানে নতুন মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে সার্ভিস রোডসহ জুড়ে দেওয়া হয়েছে নানা শর্ত। পরিপত্রটির খসড়া এরই মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

খসড়ায় যেসব শর্ত উল্লেখ রয়েছে : বিগত ১০০ বছরের বন্যার সর্বোচ্চ উচ্চতা বিবেচনায় উঁচু করে মহাসড়ক নির্মাণ করতে হবে; মহাসড়কের পাশে কোনো খাদ, গর্ত কিংবা নিচু জমি রাখা যাবে না। মহাসড়কে বিদ্যমান/নির্মিতব্য সেতু ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং টানেল টেকসই করার জন্য যানবাহনের এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণের জন্য ওজন পরিমাপক যন্ত্র স্থাপন করতে হবে; এ ছাড়া গ্রামীণ সড়ক/সেতু দিয়ে যাতে ভারী যানবাহন চলাচল করতে না পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখতে হবে। হাওরাঞ্চলসহ নিচু অঞ্চলে পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ডুবন্ত/এলিভেটেড রাস্তা নির্মাণের বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে; পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিতকরণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সেচ ব্যবস্থাপনা ও বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে রেগুলেটর এবং স্লুইসগেট নির্মাণের প্রবণতা পরিহার করতে হবে। ১০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণ এবং নদীতীর সংরক্ষণ ও নদীতে বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে হাইড্রোলজিক্যাল, মরফোলজিক্যাল, নেভিগেশনাল ও বেথিমেট্রিক সমীক্ষার সুপারিশ প্রকল্প প্রস্তাবের সঙ্গে সংযুক্ত রাখতে হবে; সমীক্ষায় নদীর বৈশিষ্ট্য, পানির প্রবাহ, নৌযান চলাচল, চরের গতিবিধি, ডুবোচরের অ্যারিয়াল ভিউ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে।

সর্বশেষ খবর