মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

চোখ রাঙাচ্ছে দূষিত বায়ু

অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ, যানজট এবং ইটের ভাটা বায়ুদূষণের মূল তিনটি কারণ

জিন্নাতুন নূর

চোখ রাঙাচ্ছে দূষিত বায়ু

রাজধানীর অনেক রাস্তায় চলতে হয় নাক চেপে -জয়ীতা রায়

শীত আসি আসি করছে। বরাবরের মতো এবারও শীতের আগেই রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা আশঙ্কাজনক অবস্থায় পৌঁছে গেছে। গত কয়েক দিনের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স লক্ষ্য করে দেখা যাচ্ছে যে, ঢাকার বায়ুর মান শীত আসার আগেই অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে। গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাইবিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’-এর বায়ুমান সূচক (একিউআই) অনুযায়ী  বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বিতীয় (১৭১ পয়েন্ট)। আর প্রথম অবস্থানে ছিল চীনের বেইজিং। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন- শীত আসার আগে যথাযথ উদ্যোগ না নিলে এবার শুষ্ক মৌসুমে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরির আশঙ্কা রয়েছে।

সরেজমিন ঢাকার বিভিন্ন প্রধান সড়ক ও পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়- নগরজুড়ে চলমান মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং ফ্লাইওভার নির্মাণসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত কাজের জন্য রাস্তার ওপর পড়ে থাকা নির্মাণসামগ্রী ও বালু থেকে বায়ুদূষণ হচ্ছে। এর ফলে দিনের বেলাতেও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র ধুলোবালিতে কুয়াশার মতো ঘোলাটে অবস্থা তৈরি হচ্ছে। এসব এলাকা দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীরা এই পরিস্থিতিতে ভোগান্তিতে পড়ছেন। তারা বলছেন, নগরজুড়ে চলমান উন্নয়ন কাজের ফলে সৃষ্ট ধুলোবালিতে তাদের চলাফেরায় সমস্যা হচ্ছে। দিনে এসব জায়গা পানি ছিটালে সৃষ্ট ভোগান্তি কিছুটা হয়তো কমত। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বায়ুদূষণের সবচেয়ে বড় উৎস তিনটি। এগুলো হচ্ছে- অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ, যানজট এবং ইটের ভাটা। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও এগুলো নিয়ন্ত্রণে সফলতা আসেনি। নগরীজুড়ে বর্তমানে যে বিশাল কর্মযজ্ঞ  চলছে, আর সেই কর্মযজ্ঞের ফলে যেসব কাজ নগর অবকাঠামোর বাইরে যেমন-প্লটে প্লটে যে নির্মাণকাজ হচ্ছে সেগুলো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে। এর ফলে সৃষ্ট ধুলোদূষণ রোধে পরিবেশ অধিদফতর ও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কোনো ভূমিকা নেই।

পরিবেশ অধিদফতরের ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট প্রজেক্টের বায়ুমান সূচকে গত ২০ অক্টোবর ঢাকার বায়ুমান সহনীয় পর্যায়ের ছিল। এর পরদিনই বায়ুমান নিয়ে সতর্ক করা হয়। আর ২২ ও ২৩ অক্টোবর এটি অস্বাস্থ্যকর এবং ২৪ অক্টোবর ঢাকার বায়ুকে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। এরই মধ্যে শিকাগো ইউনিভার্সিটির অ্যানার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট প্রকাশিত সর্বশেষ এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স অনুযায়ী বায়ুদূষণের কারণে ঢাকায় মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭ বছর সাত মাস কমেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা সংক্রমণে সরকার ঘোষিত লকডাউন উঠে যাওয়ায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোদমে চালু হওয়ায় নগরীতে মানুষের চলাফেরা বেড়েছে। আর সড়কে সব ধরনের যানবাহনের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের চেয়ে বায়ুদূষণের মাত্রাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় শীতকালে এমনিতেই বাতাসে ধুলোবালির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।     

পরিবেশ অধিদফতরের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, ঢাকার চারপাশে থাকা ইটভাটাগুলো বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। আর ইটভাটাগুলো প্রতি বছর শীত মৌসুমে অর্থাৎ নভেম্বর থেকে পুরোদমে চালু হয়ে যায়। আর এগুলো চলে মে-এপ্রিল মাস পর্যন্ত।

নগর বিশেষজ্ঞ স্থপতি ইকবাল হাবিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হঠাৎ করেই আমরা যুগপৎভাবে অনেকগুলো মহাযজ্ঞ চালাচ্ছি। একই রকমভাবে আমাদের ইটের ভাটার যে কার্যক্রম তা থেকে সরে আসার যত অঙ্গীকার এবং কৌশল সব কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়েছি। আবার ইটের বিকল্প হিসেবে কংক্রিট ব্লক ঢুকানোর চেষ্টা করার মধ্য দিয়ে ভেবেছিলাম সরকারি প্রকল্পগুলোতে এই কংক্রিট ব্লকের ব্যবহার হবে। এতে ইটের চাহিদা কমে যাবে। এর মাধ্যমে ইটভাটার সঙ্গে জড়িত শক্তিশালী চক্রের উদ্যোগেও ভাটা পড়বে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে শুধু একটি নেক্সাস তৈরি করার মধ্য দিয়ে ইটের বিকল্প ব্যবহারকে বাস্তবায়ন করা যায়নি। একই সঙ্গে ইটের ভাটাগুলো অপসারণে অনেক কিছু করার পরও আমরা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারিনি। নগরজুড়ে গণপরিবহন ব্যবস্থার শিফটিং এর মধ্য দিয়ে যে বিরাট বায়ুদূষণ রোধ করতে পারতাম তাও সম্ভব হচ্ছে না। বরং ব্যাপকহারে প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল চলার অনুমতি দিয়ে পুরো নগরীকে যানজটের নগরীতে পরিণত করা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর