বুধবার, ৩ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ইউপিতে সংঘর্ষ ভাঙচুর অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইউপিতে সংঘর্ষ ভাঙচুর অব্যাহত

বগুড়ার শেরপুরে শাহবন্দেগী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এক প্রার্থীর কার্যালয় ভাঙচুর করা হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আসন্ন দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন নিয়ে আতঙ্ক ক্রমেই বাড়ছে। থামছেই না আচরণবিধি লঙ্ঘন, হামলা, ভাঙচুর ও হতাহতের ঘটনা। গতকালও মাগুরায় রুহুল আমিন (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থীর বাড়ি ও নির্বাচনী অফিসে হামলা-ভাঙচুর, কর্মীদের ওপর হামলা, মোটরসাইকেল ও দোকান ভাঙচুর, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। প্রথম ধাপে ২১ জুন ২০৪টি ইউপি ও ২০ সেপ্টেম্বর ১৬০টি ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৬টি ইউনিয়নে ও ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপের ১ হাজার ৭টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সপ্তম ও অষ্টম ধাপের পৌর নির্বাচনও হবে ১১ ও ২৮ নভেম্বর। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বাড়ছে সহিংসতা। এখন পর্যন্ত শুধু ইউপি নির্বাচন নিয়েই ২৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আর জানুয়ারি থেকে ইউপি, পৌরসভা, মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলার ভোটে আওয়ামী লীগের ৩৯ নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষ, হানাহানি নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ভোটারদের মধ্যে। নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন সবশেষ তথ্য।

ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, ১১ নভেম্বর ধামরাইয়ের ১৫টি ইউনিয়নের নির্বাচন ঘিরে প্রতিদিনই হামলা, সংঘর্ষ, নির্বাচন ক্যাম্প ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রার্থীসহ শতাধিক কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। যাদবপুর ইউনিয়নের নৌকার প্রার্র্থী সিদান নিহত হয়েছেন। গতকাল তার লাশ দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমান মিজুর ছেলে জাহিদ হাসানসহ ২০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। সুয়াপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান বিদ্রোহী প্রার্থী হাফিজুর রহমান সোহরাব হামলার শিকার হয়ে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিভিন্ন এলাকায় মামলা হয়েছে। সব মিলিয়ে চরম আতঙ্ক আর উত্তেজনায় দিন কাটছে প্রার্থী, কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের। আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়েছে অনেক এলাকা।

মাগুরা প্রতিনিধি জানান, সদর উপজেলার গোপালগ্রাম ইউপি নির্বাচন নিয়ে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরোধের জেরে গতকাল সকালে রুহুল আমিন (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজমুল হাসান রাজীবের সমর্থক। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রুহুল আমিন জানান, সকাল ৭টার দিকে তিনি পথেরহাট বাজার এলাকায় হাঁটাহাঁটি করছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেলে এসে একদল দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার মাথায় কুপিয়ে জখম করে চলে যায়। বাজারের লোকজন তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করে। আসন্ন ইউপি নির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থী নাসিরুল ইসলাম মিলনের সমর্থক স্থানীয় সংকোচখালী গ্রামের ইসলাম, হাসান ও সাহেব আলীর নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে সরকারদলীয় প্রার্থী নাসিরুল ইসলাম বলেন, আমি শান্তিপ্রিয় মানুষ। রুহুল আমিনের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে আমি বা আমার লোকজনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বগুড়া থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, বগুড়ার শেরপুরে শাহবন্দেগী ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর বসতবাড়ি ও নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর ও প্রার্থীকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়, ১১ নভেম্বর শাহবন্দেগী ইউপি নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু তালেব আকন্দ (প্রতীক নৌকা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী আবুল কালাম আজাদের (প্রতীক আনারস) কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দিন ধরেই উত্তেজনা বিরাজ করছে। গতকাল হামলার ঘটনা ঘটে। স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আবু তালেব আকন্দের ছেলের নেতৃত্বে তাদের কর্মী-সমর্থকরা আমার কর্মী-সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলছে। গতকাল শেরুয়া বটতলা বাজারে আমার নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেছে। পরবর্তীতে শতাধিক কর্মী-সমর্থক নিয়ে আমার বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে দুটি মোটরসাইকেল এবং বাসার দরজা-জানালা ভাঙচুর করে। আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আবু তালেব আকন্দ বলেন, এটি সাজানো নাটক। তারাই উল্টো আমার ছেলে ও তার সঙ্গে থাকা দুজনকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, ক্ষেতলাল উপজেলার মাহমুদপুর ইউপি নির্বাচনে গতকাল নির্বাচনী প্রচারণাকালে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মীদের দুটি মোটরসাইকেলসহ দোকান ভাঙচুর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এ সময় একজন আহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী মশিউর রহমান শামীমের অভিযোগ, গতকাল সকালে বেলতা বানদিঘী গ্রামে নৌকা মার্কার প্রচার-প্রচারণা করছিলেন মুকিম উদ্দিন এবং আবদুল হান্নান। এ সময় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রাথী আবদুর রশিদ মন্ডল বকুলের কর্মী-সমর্থকরা লোহার রড ও হাতুড়ি দিয়ে তাদের ওপর হামলা করে দুটি মোটরসাইকেল ও দোকান ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। এ ঘটনায় হান্নান আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রশিদ মন্ডল বকুল বলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মীরাই এ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়ে আমার ওপর দোষ চাপাচ্ছে, যাতে আমি ১১ নভেম্বর নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতে পারি। আমার নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা করার উদ্দেশ্যে এই নাটক। রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর ও পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় একজনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত সোমবার মধ্য রাতে উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাইস্কা এলাকায় ঘটে এ হামলার ঘটনা। হামলার ঘটনায় গতকাল দুপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলমগীর হোসেন টিটু সম্মেলন করে বলেন, ভোলাব ইউনিয়নে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হব। কিন্তু আমার প্রতিপক্ষ নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বহিরাগতদের নিয়ে প্রতিদিনই হোন্ডা শোডাউন ও নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা করে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। এতে ১১ নভেম্বর নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না এ নিয়ে শঙ্কা জাগছে। এ ছাড়া এ ইউনিয়নে সব কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট তায়েবুর রহমান বলেন, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তারা নিজেরাই একটি পক্ষ দিয়ে এমন কাজ করাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর