বুধবার, ১০ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

স্ত্রী-সন্তান হত্যা স্বীকার করে জবানবন্দি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

দাম্পত্য কলহের জের ধরে স্ত্রী পপি আক্তারকে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া এবং সাড়ে তিন বছরের ঘুমন্ত শিশু সন্তানকে নদীতে ফেলে দেওয়ার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন গ্রেফতারকৃত স্বামী বেঁদে সম্প্রদায়ের আবুল বাশার। গত সোমবার বাশারকে বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে বিচারক মো. মওদুদ আহমদের কাছে স্ত্রী ও নাবালক সন্তান হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তিনি। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে বাশারকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।

জবানবন্দিতে বাশার জানান, তার তিন স্ত্রী। পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকত। এ কারণে স্ত্রী পপিকে বেঁদে বহরের নৌকা ছেড়ে চলে যেতে বলেন তিনি। কিন্তু পপি নৌকা ছেড়ে না যাওয়ায় ৪ নভেম্বর তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার লাশ জয়ন্তী নদীর রামচর এলাকায় ফেলে দেন তিনি। এ সময় পপির সাড়ে তিন বছরের জীবন্ত শিশু সন্তান তুহিনকেও ঘুমন্ত অবস্থায় দীতে ফেলে দেন। শিশুটিকে নদীতে ফেলে দেওয়ার পর সে হাবুডুবু করে তলিয়ে যায়। এ সময় বাশার আর ওদিকে ফিরেও তাকাননি।

 নাবালক শিশুটিকে মুক্তি দিতেই নদীতে ফেলে হত্যা করার কথা আদালতে স্বীকার করেন বাশার। এ ঘটনার দায় এড়াতে স্ত্রী পপি শিশু সন্তানসহ নিখোঁজ হয়েছে মর্মে গত ৪ নভেম্বর মুলাদী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন আবুল বাশার। মুলাদী থানার ওসি এস এম মাকসুদুর রহমান জানান, স্বামী আবুল বাশারের জিডি তদন্তে গেলে সন্দেহ হয় তদন্ত কর্মকর্তার। বাশারের অসংলগ্ন কথাবার্তায় সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়। পরে পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে বাশার তার স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া এবং ঘুমন্ত শিশু তুহিনকেও নদীতে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। সে অনুযায়ী গত রবিবার রাতে জয়ন্তী নদীর নাতিরচর এলাকা থেকে পপি আক্তারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পপি আক্তারের ভাই চুনুœ সরদারের দায়ের করা মামলায় বাশারকে গত সোমবার আদালতে হাজির করা হলে স্বেচ্ছায় স্ত্রী ও সন্তান হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বাশার। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুলাদীর নাজিরপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ইমন কান্তি চৌধুরী জানান, বাশার আদালতে বলেছেন, তিনি স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দিয়েছেন। শিশু তুহিনকেও ঘুমন্ত অবস্থায় নদীতে ফেলে দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত রবিবার রাতে জয়ন্তী নদী থেকে পপি আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে শিশুটির সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। জয়ন্তী এবং আশপাশের নদীতে শিশুটির লাশের সন্ধান করা হচ্ছে। বিভিন্ন থানায়ও বার্তা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানায়, নিহত পপি আক্তার বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রামারচর ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামের ফজলু সরদারের মেয়ে। অপরদিকে বাশার ভোলার মো. আনসারের ছেলে। পপিসহ আবুল বাশারের ছিল তিন স্ত্রী। পপি ও বাশার দম্পতি বেঁদে বহরের সদস্য ছিলেন।

সর্বশেষ খবর