শুক্রবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিনিয়োগ ধরতে মরিয়া বাংলাদেশ

জাপানের সঙ্গে সংলাপের পরিকল্পনা

মানিক মুনতাসির

বিনিয়োগ ধরতে মরিয়া বাংলাদেশ

করোনাভাইরাস মহামারীর ভয়াবহতা কমার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও বদলে যাচ্ছে। যাপিত জীবনে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন জীবনাচার। বিশ্বব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সামনেও নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ এসেছে। ফলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে বিশ্বের বহু দেশ তাদের নীতিতে পরিবর্তন আনছে। বাংলাদেশও বিদেশি বিনিয়োগ ধরতে মরিয়া হয়ে উঠছে। বিশেষ করে জাপানি বিনিয়োগ ধরতে দেশটির সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। যদিও চীন ও আমেরিকার বাণিজ্যযুদ্ধের জের ধরে চীন থেকে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে জাপান সরকার। সেগুলো অন্যত্র বিনিয়োগের ঘোষণাও দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে নতুন কোনো জাপানি বিনিয়োগ আসেনি গত দুই-তিন বছরে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরীতে জাপানি বিনিয়োগ আসার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এদিকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য নতুন গন্তব্য হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। জাপানের বিভিন্ন কোম্পানি এখানে বিনিয়োগ করবে। ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক ওয়েবিনারে যোগ দিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। জানা গেছে, গত বছর আগস্টে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আয়োজনে জুম প্ল্যাটফরমে বাংলাদেশ-জাপান যৌথ অর্থনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কিছু প্রতিবন্ধকতা উঠে আসে। ওই সংলাপে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি জাপানি বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। সে প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতার বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়। ওই সংলাপের ফলোআপ হিসেবে এখন পর্যন্ত ৬টি সভা করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। বৈঠকের কার্যপত্রের তথ্য অনুযায়ী জাপানি বিনিয়োগ ধরতে যে কোনো ধরনের আইন বা নীতিতে পরিবর্তন আনতে আগ্রহী বাংলাদেশ সরকার। একই সঙ্গে জাপান সরকারের নীতিগত সহায়তাও বাড়াতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে আগস্টে অনুষ্ঠিত ওই সংলাপের পর একটি অ্যাকশন এজেন্ডা তৈরি করা হয়। সেখানে ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইমপ্রুভমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেটের সমন্বয়কের সভাপতিত্বে আরও কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সংলাপ থেকে কার্যকর কিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আগের তুলনায় আরও অনেক ভালো অবস্থানে পৌঁছেছে বলে জানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। এ জন্য চলতি বছরের শেষে কিংবা আসছে বছরের শুরুতে ওই রকম আরেকটি সংলাপের আয়োজন করতে যাচ্ছে সরকার, যেখানে নীতিগত সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে। একই সঙ্গে কভিড-পরবর্তী নতুন বিশ্বের জন্য বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের বিদেশি বিনিয়োগ ধরতে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে এবং ওই সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কেও উন্নয়ন সহযোগী দেশ হিসেবে জাপানের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে বলে মনে করে সরকার। জানা গেছে, গত বছরের ওই সংলাপে জাপান ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়। জাপানের বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগ উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে কী কী করণীয়, তা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়। এটি মূলত একটি বাংলাদেশ-জাপান সরকারি-বেসরকারি যৌথ অর্থনৈতিক সংলাপ হিসেবে পরিচিত। আগস্ট-২০২০ ওই সংলাপের সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৭ অক্টোবর অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবের দফতরে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। অবশ্য ওই চিঠির অনুলিপি আরও অন্তত ২০টি বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের প্রধানদের বরাবরও পাঠানো হয়েছে। ওই সংলাপের সময় উঠে আসা সমস্যাগুলোর মধ্যে মোটা দাগে চিহ্নিত সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করতে পরামর্শ দেন সে সময়ের জাপানি রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেছিলেন, এসব সমস্যা সমাধান না হলে জাপানি উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন না। বাধাগুলোর মধ্যে ট্যাক্স, শুল্ক ছাড় এবং মুনাফার প্রত্যাবাসন অন্যতম। বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব জাপানি বিনিয়োগকারী আছেন, তারা এখনো এসব সমস্যা মোকাবিলা করছেন। পরবর্তী সময়ে এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য সুনির্দিষ্ট সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগ, মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেগুলোর ফলোআপ সম্পর্কে জাপান সরকার ও জাপানের ব্যবসায়ীদের অবহিত করতেই সংলাপটি আবারো আয়োজন করতে চায় বাংলাদেশ সরকার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর