রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

অল্প সময়ের মধ্যে শক্তিশালী বিরোধী দল : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল নেই বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী একটি শক্তিশালী বিরোধী দল দেখতে পাবেন। তিনি বলেন, মূল বিষয়গুলো এড়িয়ে তার (প্রধানমন্ত্রী) এসব কথা বলা জনগণকে বিভ্রান্ত করা ছাড়া আর কিছুই নয়। দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল আছে বলেই তো এখন পর্যন্ত কথাগুলো আমরা বলছি।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। গত শুক্রবার বিকালে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ভার্চুয়ালি এই সভায় লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সভাপতিত্ব করেন।

বিএনপি মহাসচিব সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পার্লামেন্টে বিরোধী দল নেই এই সরকারের কারণে। তারা দেশে গণতন্ত্রের কোনো স্পেস রাখেনি। গণতান্ত্রিক স্পেস না থাকলে একটা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের মধ্যে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) কোন ধরনের শক্তিশালী বিরোধী দল দেখতে চাচ্ছেন- আমরা ঠিক সেটা বুঝি না। তবে তিনি যেটা চাচ্ছেন দেখতে, অতি অল্প সময়ের মধ্যেই সেটা উনি দেখতে পাবেন।

সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ‘গুম-খুন-নির্যাতনের’ বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী এই সরকারের মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘন, সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গুম, খুন ও নির্যাতনের যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। র‌্যাব ও সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সেই সত্যকে আরও প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিশেষ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া ও কারাগারে পাঠানোকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত বলে উল্লেখ করা, প্রকৃত সত্যকে উদঘাটিত করেছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে, এ অনির্বাচিত ও অনৈতিক সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় অন্যায়ভাবে টিকে থাকতে চায়। গণতন্ত্রের আশপাশেও তারা নেই। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সেটাকেই তারা ধ্বংস করে ফেলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের প্রভাব আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পড়বে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন হবে- কি হবে না, সেটা তো নির্ভর করবে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে, কি হবে না- তার ওপর। নির্বাচনের পরিবেশ যদি তৈরি হয়- তাহলে সেখানে নিশ্চিত ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং সেই আন্দোলনেও এটার পজিটিভ প্রভাব পড়বে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১২ এপ্রিল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর প্রকাশিত ‘২০২১ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শীর্ষক রিপোর্ট সম্পর্কে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের ফলে হত্যাকাণ্ড, প্রতিবাদকারী ব্যক্তিদের পিতা-মাতা, ভাই-বোনদের গ্রেফতার, বিচার প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার, বিশেষ করে খালেদা জিয়াকে ‘মিথ্যা মামলায়’ সাজা দেওয়া ও কারাগারে পাঠানো রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত। রিপোর্টে এগুলো উল্লেখ করায় প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হয়েছে বলে স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে।

মির্জা ফখরুল জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী চিকিৎসক জোবাইদা রহমানের করা লিভ টু আপিল আবেদন খারিজের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে স্থায়ী কমিটি। সভা মনে করে জোবাইদা রহমান একজন অরাজনৈতিক চিকিৎসক। তাঁকে দুদকের এ মামলায় জড়ানো সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতিহিংসামূলক। কোনো ভিত্তি না থাকলেও শুধু জিয়া পরিবারকে হয়রানি ও হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। সভায় এ ধরনের হীন অপচেষ্টার প্রতিবাদ জানিয়ে বিচার বিভাগকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সংবিধানের মূল চরিত্রকে অক্ষুণ্ন রেখে বিচারিক কর্ম সম্পাদনের আহ্বান জানানো হয়। তিনি বলেন, মার্কিন আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলা খারিজ হওয়ায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। সভা মনে করে, চুরির বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই একেবারে দায়সারা মামলা দায়ের করা হয় এবং সরকারের দায়িত্বহীনতার কারণেই মার্কিন আদালতের এখতিয়ারবহির্ভূত এ মামলা দায়ের করা হয়। স্থায়ী কমিটি মনে করে, রিজার্ভ চুরির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে যেসব কর্মকর্তার নাম এসেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করা থেকেই প্রমাণিত হয়- সরকারের কোনো মহল এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত। সভা অবিলম্বে সঠিক তথ্য জনগণের সামনে উন্মোচন করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়। সভায় সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণায় কভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বেশি দামে টিকা কেনা এবং অর্থ ব্যয়ে চরম অস্বচ্ছতার কারণে ২৩ হাজার কোটি টাকার অনিয়মের তথ্যে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর