মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

মানা হচ্ছে না নন-ক্যাডার পদ সংরক্ষণের বিধান

ক্ষোভে ফুঁসছেন সচিবালয়ের এও-পিওরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সহকারী সচিব পদে সচিবালয়ের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ পদ সংরক্ষণের বিধান আছে। কিন্তু তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ সচিবালয়ের প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের (এও-পিও)। তাদের মতে, প্রাপ্যতা অনুযায়ী নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা পান সহকারী সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিবের ১৮৪টি এবং উপসচিবের ৬২টি পদ। কিন্তু ৩০ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি সরকারের এ-সংক্রান্ত বিধান। ফলে পদোন্নতিবঞ্চিত হচ্ছেন সচিবালয়ের এও-পিওরা। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে সচিবালয়ের সহকারী সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব (নন-ক্যাডার) কর্মকর্তাদের মধ্যে। এর প্রতিকার চেয়ে একাধিকবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আবেদন জমা দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

তারা বলছেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে প্রায় ২ হাজার ৫০০ জন এও-পিও কর্মরত রয়েছেন। এসব কর্মকর্তার পদোন্নতির জন্য ক্যাডারবহির্ভূত মাত্র ২৬৭টি সহকারী সচিব, ৭২টি সিনিয়র সহকারী সচিব এবং ৯টি উপসচিব পদ রয়েছে, যা প্রয়োজনের চেয়ে কম। ফলে অধিকাংশ দশম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তা দীর্ঘদিন একই পদে কর্মরত থেকে অবসরে যাচ্ছেন। অনেক এও-পিও সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েও ১৫ থেকে ১৬ বছরেও কোনো পদোন্নতি পাচ্ছেন না। ফলে তাদের কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া ৭২ জন সিনিয়র সহকারী সচিবের জন্য উপসচিবের মাত্র ৯টি পদ রয়েছে। ফলে ৩০ থেকে ৩২ জন কর্মকর্তা উপসচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করার পরও পদোন্নতি পাচ্ছেন না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৯২ সালের বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) ও বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (সচিবালয়) ক্যাডার একীভূত আদেশে সচিবালয়ের ভিত্তিপদ সহকারী সচিব বা সিনিয়র সহকারী সচিবের মোট পদের এক-তৃতীয়াংশ নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষণের কথা বলা আছে। বিসিএস (সচিবালয়) ও বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার একীভূত করার সময় গঠিত এস এম আকরাম কমিটির সুপারিশে বলা হয়, ভবিষ্যতে সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পদ সৃষ্টি হলে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য আনুপাতিক হারে পদ বাড়াতে হবে। প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা এসব নন-ক্যাডার পদের ফিডার হিসেবে পদোন্নতিযোগ্য হবেন। ২০১৮ সালে ইকোনমিক ক্যাডার প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত হওয়ায় সহকারী প্রধানের ২৫০টি এবং সিনিয়র সহকারী প্রধানের ১৫৪টি পদ যুক্ত হয়। এতে এক-তৃতীয়াংশ হিসেবে ১৩৫টি পদ নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত থাকার কথা। কিন্তু নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য একটি পদও সংরক্ষণ করা হয়নি। এ ছাড়া ২০১৮ সালের ২২ মে ১১১টি পদ সংরক্ষণ করে তা থেকে ৩৯টি পদ বাদ দেওয়া হয়। আবার ২০১৮ সালের পর সহকারী সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিবের ৩০টি নতুন পদ সৃজন করা হয়েছে। এর এক-তৃতীয়াংশ হিসেবে ১০টি পদ সংরক্ষণযোগ্য। ফলে সহকারী সচিবের (নন-ক্যাডার) বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত আরও ১৮৪টি পদ সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন সচিবালয়ের এও-পিওরা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম পদ সংরক্ষণের বিষয়টি আমলে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রশাসন ও সচিবালয় ক্যাডার একীভূতের সময় ১৯৯২ সালে এস এম আকরাম কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী উপসচিবের ২৬টি পদ সংরক্ষণের কথা থাকলেও করা হয় মাত্র ৯টি। পরবর্তী সময়ে উপসচিবের অনুমোদিত পদ বেড়ে যাওয়ায় আনুপাতিক হারে পদ সংরক্ষণের কোটা বেড়ে হয়েছে ৬২টি। একই সুপারিশ অনুযায়ী সহকারী সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিবের সংরক্ষিত পদ বাড়িয়ে সংরক্ষণ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু তিমিরেই থেকে গেছে উপসচিব পদে। উপসচিব পদ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ সচিবালয় সহকারী সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব (ক্যাডারবহির্ভূত) কল্যাণ ফোরাম একাধিকবার আবেদন করেছে। প্রাপ্যতা অনুযায়ী তারা সহকারী সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিবের ১৮৪টি এবং উপসচিবের ৬২টি পদ বাড়ানোর দাবি করেছেন।

এদিকে পদ সংরক্ষণে কোনো গড়িমসি আর মানতে চান না কর্মরত এও-পিওরা। তাদের অনেকে জানিয়েছেন, প্রাপ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি না হওয়ায় তারা একই পদে ২০ থেকে ২৫ বছর চাকরি করছেন। ফলে পদোন্নতি না পেয়েই অবসরে যাচ্ছেন অনেকে। অথচ তাদের পদোন্নতির সঙ্গে কোনো আর্থিক সংশ্লেষ নেই। কয়েকটি টাইম স্কেল পাওয়ায় সপ্তম ও অষ্টম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন এও-পিওরা। সহকারী সচিবের পদটি নবম গ্রেডের। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া না হলে শিগগিরই তারা আবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিবের সঙ্গে দেখা করবেন। প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন তারা।

সর্বশেষ খবর