বুধবার, ১৫ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা হতে পারে এলডিসির জন্য হতাশা

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সম্মেলনে চার দফা দাবি নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ

মানিক মুনতাসির (জেনেভা, সুইজারল্যান্ড থেকে)

করোনা মহামারি পরবর্তী স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ক্ষতি পোষাতে এবং অর্থনীতি পুনর্গঠনে উন্নত বিশ্বের সহায়তা অব্যাহত রাখার দাবি আরও জোরালো হচ্ছে জেনেভায় চলমান বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের দ্বাদশ সম্মেলনে। তবে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাণিজ্য সুবিধাগুলো পরবর্তী আরও অন্তত ছয় বছর চালু রাখার দাবির পক্ষে এখনো মত দেয়নি শক্তিশালী আমেরিকা।

খাদ্য নিরাপত্তা, খাদ্যের অবাধ চলাচল, গভীর সমুদ্রে অবাধে মাছ শিকারে ভর্তুকি বন্ধের দাবির পক্ষেও এখনো পুরোপুরি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি নীতিনির্ধারকরা। যদিও এবারের ডব্লিউটিও সম্মেলনের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা এগুলোই। অবশ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর এসব  প্রস্তাবের পক্ষেই মত দিয়েছে। তবে সম্মেলনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল প্রত্যাশা করছে শেষ মুহূর্তে তারা তাদের দাবিগুলো আদায়ে সমর্থ হবেন যদিও তা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে শক্তিশালী একটি দেশের সমর্থন না পাওয়ায়। ওই দেশটি শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবে সম্মতি না দিলে এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশসহ এলডিসিভুক্ত এবং এলডিসি থেকে উত্তরণের অপেক্ষায় থাকা দেশগুলোর অর্জন নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দেবে। এমনকি বলা যায় আমেরিকার সিদ্ধান্তের ওপরই অনেকটা নির্ভর করছে এবারের সম্মেলনের সাফল্য-ব্যর্থতা। জেনেভা সময় বিকাল চারটা পর্যন্ত এসব বিষয়ে বড় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। 

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, এবার প্রায় পাঁচ বছর পর এ সম্মেলন হচ্ছে। এখানে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। আমাদের দাবিগুলো খুবই যৌক্তিক। আমাদের আলোচনাও অনেক দূর এগিয়েছে। তাই, আমরা অবশ্যই আশাবাদী। কিন্তু একটি দেশ যেভাবে যৌক্তিক দাবির বিরোধিতা করছে তাতে আমরা কিছুটা শঙ্কিত।

সম্মেলনের শেষ দিন আজ ১৫ জুন। গতকালও এসব বিষয় নিয়ে উন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে দরকষাকষি হয়েছে।

অনেক বিষয়েই এখনো ঐকমত্য হয়নি। এদিকে সম্মেলনের বাইরে ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার ও স্বাধীনতার অধিকার নিয়ে চলমান আন্দোলনের পরিবেশ আরও জোরদার পরিলক্ষিত হয়েছে। এ ছাড়া স্বল্পোন্নত দেশগুলো বলে আসছে, হুটহাট জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, কৃষিতে ভর্তুকি প্রদান, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, আমদানি-রপ্তানির শুল্ক, অশুল্ক বাধা নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণকারী দেশগুলোর একচেটিয়া প্রভাবের কারণে স্বল্পোন্নত দেশগুলো ক্ষতির মুখে পড়েছে। অথচ এই ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার বেলায় উন্নত বিশ্ব বরাবরই কার্পণ্য করে আসছে। এমনকি  অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী এসব দেশ ডব্লিউটিওকে সব সময় বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে আসছে। যা বৈশ্বিক রাজনীতি ও বাণিজ্যিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে বলে মতামত তুলে ধরা হয় গতকালের বিভিন্ন সেশনেও। নেগোসিয়েশনভিত্তিক সেশনে এসব বিষয় নানা তর্ক-বিতর্ক হলেও তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। এদিকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সদর দফতরে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর চলমান ১২তম মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সের শেষদিনে কী ঘটতে পারে তা মোটামুটি আন্দাজ করতে পারছেন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে এক প্রকার হতাশা প্রকাশ করেছেন ডব্লিউটিওর ডিজি। সংস্থার মহাপরিচালক এনগোজি ওকনজো-আইওয়ালা বলেন, আলোচনায় যাই হোক না কেন সিদ্ধান্তে আসতে হলে সবার আগে রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। এখানে ধনী ও প্রভাবশালী দেশগুলো সব সময় প্রভাব খাটিয়ে এ ধরনের সম্মেলনগুলোর উদ্দেশ্য হাসিলে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। করোনা মহামারির পর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বকে যে বিপদের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে তাতে বড় কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারলে এ সংকট আরও বাড়বে। যা পৃথিবীকে ধ্বংসের মুখেও নিয়ে যেতে পারে বলে তিনি সবাইকে হুঁশিয়ার দিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর