শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
ঢাকা চট্টগ্রামে করুণ হাল খালের

হস্তান্তরের দেড় বছরেও শুরু হয়নি সংস্কার

হাসান ইমন

হস্তান্তরের দেড় বছরেও শুরু হয়নি সংস্কার

রাজধানীর কুতুবখালী খালের বেহাল পরিণতি। চট্টগ্রামেও দখল দূষণে বিপন্নপ্রায় খাল (ডানে) -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের কাছে ২৬টি খাল হস্তান্তরের দেড় বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত সংস্কারের কাজই শুরু করতে পারেনি সংস্থা দুটি। কিছু উদ্যোগ নিলেও তা লাল ফিতায় আটকে আছে। অবশ্য বিভিন্ন সময় জোড়াতালি দিয়ে নর্দমা ও খাল পরিষ্কারের কাজ করা হয়েছে। তবে এগুলো আবারও আবর্জনায় পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। অথচ এসবের পেছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সংশ্লিষ্টরা অবশ্য দাবি করছে, খাল সংস্কারে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কাজ হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদ ও আইপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বাংলাদশে প্রতিদিনকে বলেন, সিটি করপোরেশনের কাছে খাল হস্তান্তরের দেড় বছর পার হলেও খনন কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। যদিও দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিচ্ছিন্নভাবে খাল থেকে কিছু বর্জ্য অপসারণ করেছে সংস্থা দুটি। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টি হলে পানি নিষ্কাশনে তা উপযুক্ত হবে না। আলাদা প্রকল্প নিয়ে খনন কার্যক্রম শুরু করা উচিত। তিনি আরও বলেন, কিছু কিছু খাল আছে যেগুলো মাটি ও বর্জ্যতে পানির প্রবাহ পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এসব স্থানগুলো চিহ্নিত করে খনন কাজ শুরু করা উচতি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেড় বছর আগে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে খাল ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার পুরো দায়িত্ব গ্রহণ করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তারপর দুই সিটি থেকে কয়েকটি খাল বাছাই করে সরকারের কাছে প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়। খাল সংস্কার, পুনর্খনন ও আধুনিকায়নের এসব প্রকল্প এখন পর্যন্ত অনুমোদন পায়নি। কবে প্রকল্প অনুমোদন পাবে, আর কবে খালগুলো প্রবহমান হবে- তাও জানে না কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় দুই সিটি কর্তৃপক্ষ খাল পরিষ্কারের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করছে। দেখা যাচ্ছে একদিকে খাল পরিষ্কার করা হচ্ছে, অন্যদিকে আবার ময়লায় সেসব খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে আবর্জনা ব্যবস্থাপনা দুই সিটির দায়িত্ব হলেও সেটা পালনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে নগর প্রশাসন। এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, খাল সংস্কার নিয়ে আমরা মাস্টারপ্ল্যান করছি। এটার জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ঠিক করা হয়েছে। তারা খালকে দৃষ্টিনন্দন কীভাবে করা যায়- সে আলোকে লে-আউট ডিজাইন তৈরি করছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনী দ্বারা খালের সীমানা নির্ধারণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি খালের সীমানা সিএস, আরএস জরিপের মাধ্যমে করা হয়েছে। বাকিগুলোর কাজও শিগগিরই শেষ হবে। এ বিষয়ে ডিএসসিসির খাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শ্িরফউল্ল্যাহ সিদ্দিক ভূইয়া বলেন, খাল পরিষ্কারের জন্য আমাদের সূচি নির্ধারণ করা আছে। বর্ষা মৌসুমের আগে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত খাল পরিষ্কারের কার্যক্রম চালু ছিল। এখন নিজস্ব পরিচ্ছন্নতা কর্মী দিয়ে নিয়মিত কার্যক্রম চালু রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে ৮৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ২৬টি খাল, ৩৮৫ কিলোমিটার স্টর্ম ওয়াটার ড্রেন এবং ১০টি বক্স কালভার্ট গ্রহণ করে দুই সিটি। এর বাইরে ডিএসসিসির ৯৫০ কিলোমিটার ড্রেন এবং ডিএনসিসির ১ হাজার ২৫০ কিলোমিটার পাইপ নর্দমা রয়েছে। এসব সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনার জন্য স্বতন্ত্র বিভাগ এবং দক্ষ জনবল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা খুবই জরুরি। সে বিষয়ে দুই সিটির অনাগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। খালের দায়িত্ব পাওয়ার পর ডিএনসিসি ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দিয়ে খালের সীমানা নির্ধারণ কাজ শুরু করেছে। তবে খালের সীমানা নির্ধারণ কাজের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে ডিএসসিসি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ডিএসসিসির আয়তন ১০৯ দশমিক ২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা। এ এলাকার মধ্যে রয়েছে, হাজারীবাগ খাল (কালুনগর খাল), ধানমন্ডি লেক, রামপুরা খাল, জিরানী খাল (খিলগাঁও-বাসাবো খাল), মাণ্ডা খাল (বেগুনবাড়ী খাল), ওয়ারী খাল, ওয়াপদা খাল, কাজলা খাল, ডিএন্ডডি রোড সাইড খাল, কুতুবখালী খাল, ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড সাইট খাল এবং শ্যামপুর খাল। এ ছাড়া খাল বন্ধ করে তৈরি করা বক্স কালভার্ট-পান্থপথ, পরিবাগ, খিলগাঁও, বাসাবো, সেগুনবাগিচা, ধোলাইখাল রয়েছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য ডিএসসিসি বর্তমানে এসব খাল ও বক্স কালভার্টের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছে। এসব খালের মধ্যে মাণ্ডা, জিরানী, হাজারীবাগ ও শ্যামপুর খাল খনন করে আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যে ৮৯৮ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব করে ডিএসসিসি। বর্তমানে এটি পরিকল্পনা কমিশনে পড়ে আছে।  ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬ দশমিক ২২ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে ডিএনসিসি গঠিত। এ এলাকায় প্রধান ও শাখা মিলে প্রায় ৩০টি খাল রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- কাটাসুর খাল, রামচন্দ্রপুর খাল, কল্যাণপুর প্রধান খাল, কল্যাণপুর খাল, রূপনগর প্রধান খাল, রূপনগর শাখা খাল (আরামবাগ), রূপনগর শাখা খাল (দুয়ারীপাড়া), বাইশটেকি খাল, সাংবাদিক কলোনি খাল, কসাইবাড়ী খাল, মহাখালী খাল, উত্তরা দিয়াবাড়ী খাল, বেগুনবাড়ী খাল ও শাহাজাদপুর খাল।

 

 

সর্বশেষ খবর