শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
ঢাকায় সম্মেলন

আলোচনায় সীমান্ত হত্যা

♦ নিহতরা সবাই ক্রিমিনাল : ডিজি বিএসএফ ♦ পুরো পরিবার ভোগে : ডিজি বিজিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর গুলিতে নিহত বাংলাদেশির সবাই ক্রিমিনাল দাবি করে বাহিনীটির মহাপরিচালক (ডিজি) পঙ্কজ কুমার সিং বলেছেন, সীমান্তে মন্দ লোকেরাই নিহত হয়েছেন। যারা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত, এর মধ্যে চোরাকারবারি, মাদক কারবারি ও পাচারকারী রয়েছেন। আর প্রতিটি গুলির ঘটনাই রাতে ঘটেছে। ঢাকার পিলখানায় গতকাল বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ে ৫২তম সীমান্ত সম্মেলন শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএসএফ মহাপরিচালক পঙ্কজ কুমার সিং আরও বলেন, ‘ডিএমপি, কলকাতা পুলিশ ও সীমান্তে গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কথা বলে আমরা অপরাধীদের তথ্যবিনিময় করে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহতদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করি। সীমান্তে যাবতীয় অপরাধ দুই দেশের মাফিয়ারা নিয়ন্ত্রণ করে।’ তিনি বলেন, ‘সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে আমরা মারণাস্ত্র নয়, এমন অস্ত্র ব্যবহার শুরু করেছি।’

প্রতিবার সীমান্ত সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা বন্ধে আলোচনা হয়। কিন্তু সীমান্ত হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। গত জুনে সীমান্তে হত্যার শিকার হয়েছেন পাঁচজন। এমন প্রশ্নের জবাবে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, ‘এ প্রশ্ন প্রতি বছরই শুনতে হয়। বিজিবি ও বিএসএফ খুবই পেশাদার বাহিনী। তবে আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খুবই ভিন্ন। পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়েও আলাদা। আমরা প্রতিনিয়তই বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করি, কীভাবে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা যায়।’

‘সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় আনতে কাজ করছি’ বলে জানিয়েছেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ। এ লক্ষ্যে অধিক সতর্কতামূলক ও কার্যকর উদ্যোগ হিসেবে সীমান্তে যৌথ টহল জোরদার, বিশেষ করে রাতের টহল পরিচালনার ব্যাপারে উভয় দেশ সম্মত হয়েছে। বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্ত হত্যার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এটি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বিএসএফ মহাপরিচালকের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সম্মেলনে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি কীভাবে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে পারি। সীমান্তে একটি হত্যা মানে শুধু একটি মানুষের মৃত্যু নয়, এতে নিহতের পুরো পরিবার ভোগে। এলাকার মানুষের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে যে পেশাদার সম্পর্ক তা-ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এসব আমরা বিএসএফকে বুঝিয়েছি। তারাও বুঝেছেন, আমরা সব সমস্যা একীভূত করে কীভাবে কমানো নয়, একেবারে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে পারি। আমাদের যে স্পিরিট তা কাজে লাগিয়ে আমরা আশাবাদী এটা সম্ভব।’ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত দিয়ে দালালের মাধ্যমে রোহিঙ্গা নাগরিকরা প্রবেশ করছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি মহাপরিচালক। তিনি বলেন, এভাবে ৫১টি পরিবারের ২১২ রোহিঙ্গা সদস্য বাংলাদেশে ঢুকেছেন বলে বিজিবি নিশ্চিত হয়েছে। বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, দালাল চক্রের কার্যক্রম কীভাবে প্রতিহত করা যায় তা নিয়ে সীমান্ত সম্মেলনে বিস্তারিত কথা হয়েছে। এ ব্যাপারে সীমান্তে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিএসএফকে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি। সীমান্ত ছাড়াও হয়তো দুর্গম পথে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলেও জানান তিনি। ১৭ জুলাই বিজিবি সদর দফতরে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন শুরু হয়। গতকাল যৌথ আলোচনার দলিল স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী ৫২তম সীমান্ত সম্মেলন শেষ হয়। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যৌথ নদী কমিশন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, সার্ভেয়ার জেনারেল অব বাংলাদেশ এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিসহ ২০ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল সম্মেলনে অংশ নেয়। অন্যদিকে বিএসএফ মহাপরিচালক পঙ্কজ কুমার সিংয়ের নেতৃত্বে ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ নয় সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধি দল সম্মেলনে অংশ নেয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর