রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন পোয়া মক্কা

মুহাম্মদ সেলিম, ভারত থেকে ফিরে

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন পোয়া মক্কা

ভারতের আসামের গৌহাটির হাজো পোয়া মক্কা দরগাহ ও মসজিদ। হাজার বছর আগে পবিত্র মক্কা নগরীর ‘এক পোয়া’ মাটি দিয়ে ঐতিহাসিক মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর করা হয়েছে বলে এটি ‘পোয়া মক্কা’ নামে পরিচিত। ধর্মীয় গুরুত্বের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ ও দরগাহটি আসামের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুসলিম ছাড়াও হিন্দু, বৌদ্ধসহ অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা

 ভিড় করেন পোয়া মক্কায়। তাই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পোয়া মক্কাকে সম্প্রীতির সেতুবন্ধ হিসেবে দেখা হয়। পোয়া মক্কা দরগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি তৌফিক হুছেইন বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন পোয়া মক্কা দরগাহ। বার্ষিক ওরস এবং অন্যান্য সময় মুসলিম ছাড়াও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে আসেন। এখানে এসে তারা নিজেদের মতো প্রার্থনা করেন।’ তিনি বলেন, ‘হাজো গরুড়াচল পাহাড়ে পোয়া মক্কা দরগাহ ছাড়াও হিন্দু ও বৌদ্ধদের তীর্থস্থান রয়েছে। প্রতিটি ধর্মের অনুসারীরা নিজেদের মতো করে প্রার্থনা করেন। এখানে সবার আচরণ সহনশীল থাকে।’ আসাম রাজ্য সরকারের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা ইফতেখার জামান বলেন, ‘পোয়া মক্কা দরগাহ এ অঞ্চলের মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। পবিত্র মক্কার এক পোয়া মাটি দিয়েই মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর করা হয়েছে এটি সর্বজনস্বীকৃত। তাই ঐতিহাসিকভাবেও মসজিদটি গুরুত্বপূর্ণ। মক্কার স্বাদ পেতে আসাম ও আশপাশ রাজ্যের লোকজন ছুটে আসেন পোয়া মক্কা দরগায়।’ আসামের কামরূপ হাজো জেলার গরুড়াচল পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত পোয়া মক্কা মসজিদ ও দরগাহ। হাজো পোয়া মক্কা দরগাহকে উত্তর-পূর্ব ভারতে ইসলামের অন্যতম বিখ্যাত তীর্থস্থান মনে করা হয়। হজরত শাহ সুলতান গিয়াসউদ্দিন আউলিয়া (রহ.) সিংহাসন ত্যাগ করে ইসলাম প্রচারের জন্য বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ করেন। সর্বশেষ কামরূপ হাজো জেলার গরুড়াচল পাহাড়ের শিখরে বসতি স্থাপন করেন তিনি। গিয়াসউদ্দিন আউলিয়া (রহ.) পাহাড়ের উঁচু চূড়ায় একটি মসজিদ নির্মাণ করে সেখানে ইবাদত করেন। সেখানে ৭০ জনের একটি আউলিয়া দলের নেতা ছিলেন তিনি। এ আউলিয়াদের মৃত্যুর পর পাহাড়ের চারপাশে কবর দেওয়া হয়। হজরত গিয়াসউদ্দিনের মৃত্যুর পর পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় তাঁর লাশ সমাহিত করা হয়। আসাম রাজবংশের সময় তৎকালীন রাজা-মহারাজারা দরগার নামে জমি দিয়েছিলেন। দরগার উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছিলেন তাঁরা। প্রায় হাজার বছরের পুরনো মসজিদটি ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। গৌহাটি থেকে মাত্র ২৪ কিলোমিটার দূরে এ মসজিদের অবস্থান।

মুসলিম ছাড়াও হিন্দু, বৌদ্ধসহ অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা প্রার্থনা করতে আসেন এ দরগায়। প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠের পূর্ণিমায় এ দরগার বার্ষিক ওরস অনুষ্ঠিত হয়। দরগার আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মেলা বসে। এতে সব সম্প্রদায়ের লাখো ভক্ত হাজির হন। এ ছাড়া বছরের অন্যান্য সময়ও সব ধর্মের অনুসারীর পদচারণে মুখর থাকে দরগাহ প্রাঙ্গণ। পোয়া মক্কা পরিদর্শনে যাওয়া বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম বলেন, ‘মুসলিম ছাড়াও অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা নিয়মিত আসেন পোয়া মক্কায়, যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন।’

সর্বশেষ খবর