শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
ধানমন্ডি আইডিয়াল ও মিরপুর কলেজ

রাজধানীর দুই কলেজের সংকট শেষ হবে কবে?

আকতারুজ্জামান

রাজধানীর দুই কলেজে দীর্ঘ সময় ধরে সংকট চলছে। নানা সংকটের কারণে বিঘ্ন হচ্ছে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ। কলেজ দুটি হচ্ছে- ধানমন্ডির সেন্ট্রাল রোডে আইডিয়াল কলেজ, অন্যটি মিরপুর কলেজ। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে চলমান সংকটাবস্থা নিরসনের দাবি শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের।

আইডিয়াল কলেজ : কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শামছুল আলমের সময়কালে বেশকিছু শিক্ষক, কর্মকতা, কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়, যার বেশির ভাগের বিরুদ্ধেই স্বজনপ্রীতি ও ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগের অভিযোগ রয়েছে। তার আমলে ৫৫ জন আত্মীয়স্বজনকে  নিয়োগ দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সেখান থেকেই কলেজটির সংকটের শুরু। নিজের হাতে নিয়োগ দেওয়া বৃহৎ এই জনবলকে পুঁজি করে কলেজ ক্যাম্পাসে অন্যদের জিম্মি করার অভিযোগ শামছুল আলমের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি নানা অভিযোগ এনে কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মো. জসিম উদ্দিনসহ তিন শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। কলেজের শিক্ষকরা এখন দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া শিক্ষকদের মধ্যে অন্যতম প্রভাষক নূর আল মারুফ নেওয়াজ। তিনি সাবেক অধ্যক্ষ শামছুল আলমের শ্যালকের ছেলে। শামছুল আলমের ভাইয়ের ছেলে সহকারী অধ্যাপক নাজমুল  হুদা। এ ছাড়াও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন প্রভাষক শামীমা সুলতানা, নাছিমা হাসিন, সহকারী লাইব্রেরিয়ান জেসমিন বেগম, ইয়াসমিন বেগম, সহকারী অধ্যাপক জিল্লুর রহমান, মীর নাসরিন শবনাম, কাজী তাহমিনা মুনমুন, আসাদুল হকসহ আরও অনেকে। এদের প্রত্যেকের নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া এসব শিক্ষক, কর্মকর্তার ব্যাপারে সাবেক অধ্যক্ষ শামছুল আলম বলেন, দীর্ঘ সময় কলেজে অধ্যক্ষ ছিলাম। আত্মীয়স্বজনদের যোগ্যতা থাকায় তাদের নিয়োগ দিয়েছিলাম। কলেজে বর্তমান সংকটাবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, কলেজের পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার তেমন জানা নেই।

সম্প্রতি কলেজের অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিনসহ তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও পিএইচডি জালিয়াতির অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন সাবেক অধ্যক্ষ শামছুল আলমের সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক কর্মকর্তা, কর্মচারীরা। আন্দোলনের এক পর্যায়ে অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিনসহ কয়েক শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। যদিও জসিম উদ্দিন প্রতিবেদককে বলেন, পিএইচডি ডিগ্রি দেখিয়ে কোনো পদোন্নতি নিইনি, তাই এ অভিযোগ অবান্তর। আর কলেজে আর্থিক স্বচ্ছতা আনতে নানা উদ্যোগের কারণেই তার বিরুদ্ধে একটি চক্র সক্রিয়।

মিরপুর কলেজ : অনিয়ম, দুর্নীতি, তহবিল তছরুপ, অর্থ আত্মসাৎসহ অনেক অভিযোগ মিরপুর কলেজের অধ্যক্ষ মো. গোলাম ওয়াদুদের বিরুদ্ধে। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে গত বছরের জুনে তদন্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর (ডিআইএ)। তদন্তে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, বিনা রশিদে শিক্ষার্থীদের কাছে অর্থ আদায়, শিক্ষক নিবন্ধন ব্যতীত শিক্ষক নিয়োগ, বিধিবহির্ভূত বিভিন্ন ব্যয় ছাড়াও বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির প্রমাণ পায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অধ্যক্ষকে সরকারের কোষাগারে ৫৬ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ারও সুপারিশ করা হয় তদন্তে। বাতিল করা হয় অধ্যক্ষ গোলাম ওয়াদুদের এমপিও। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বছরের আগস্টে কলেজের গভর্নিং বডি অধ্যক্ষকে সাময়িক বহিষ্কার করে। কিন্তু জানা গেছে, গত ২৫ জুন বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ গোলাম ওয়াদুদ কিছু বহিরাগত নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে এসে অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করেন। কয়েক শিক্ষককে লাঞ্ছিতও করেন তিনি। উ™ভূত পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় শিক্ষকরা পরদিন মিরপুর মডেল থানায় জিডি করেন। এরপর ২৭ জুন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক বরখাস্ত অধ্যক্ষকে চিঠি পাঠিয়ে বলেন, স্বপদে পুনর্বহালের কোনো নির্দেশনা আপনাকে দেওয়া হয়নি।  

কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য প্র্রকৌশলী মো. শামীম খান অভিযোগ করে প্রতিবেদককে বলেন, সম্প্রতি এলাকার কিছু সন্ত্রাসীকে নিয়ে বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ গোলাম ওয়াদুদ কলেজে এসে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে সরিয়ে দিয়ে চেয়ার দখল করেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের নেমপ্লেট পরিবর্তন করে নিজের নেমপ্লেট লাগান। কাগজে কলমে বরখাস্ত হলেও এখনো তিনি মাঝে-মধ্যে কলেজে আসেন। তার কারণে কলেজে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তিনি গভর্নিং বডির সঙ্গে যোগাযোগ না করে সন্ত্রাসীদের নিয়ে কলেজে আসছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বরখাস্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান শামীম খান। বরখাস্ত অধ্যক্ষ গোলাম ওয়াদুদ প্রতিবেদককে বলেন, আমার উচিত ছিল গভর্নিং বডির সভাপতিকে জানিয়ে কলেজে যাওয়া। অধ্যক্ষের চেয়ার দখলের ব্যাপারে তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চিঠি দেওয়ার পর আমি কলেজে আর যাইনি। তবে তার বিরুদ্ধে একটি পক্ষ সক্রিয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

 

সর্বশেষ খবর