সোমবার, ৮ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

দেড় যুগেও শেষ হয়নি বিচার

সিলেটে গুলশান সেন্টারে গ্রেনেড হামলায় পঙ্গুত্ব নিয়ে কাতরাচ্ছেন অনেকে

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

দেড় যুগেও শেষ হয়নি বিচার

সিলেটের তালতলার গুলশান সেন্টারে গ্রেনেড হামলার ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার দেড় যুগেও শেষ হয়নি। সাক্ষ্যগ্রহণে আটকে আছে মামলার কার্যক্রম।

২০০৪ সালের ৭ আগস্ট, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে গুলশান সেন্টারে মহানগর আওয়ামী লীগের সভা শেষে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় প্রাণ হারান তৎকালীন মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ইব্রাহিম আলী। আহত হন সংগঠনের অন্তত ২০ নেতাকর্মী। আহতদের অনেকেই এখনো পঙ্গুত্ব নিয়ে কাতরাচ্ছেন। শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন গ্রেনেডের স্পিøন্টার। ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এটি ‘আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ফল’ বলে প্রচার করেন তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা। হামলাকারীদের আড়াল করতে গ্রেফতার করা হয় প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা নুনু মিয়া, মহানগর ছাত্রলীগের তৎকালীন আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম আহ্বায়ক ইলিয়াছুর রহমান ইলিয়াছ, রণজিৎ সরকার ও বিধান কুমার সাহাসহ কয়েকজন নেতাকে। তাদের ওপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন।

ঘটনার পরদিন কোতোয়ালি থানার তৎকালীন এসআই এনামুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করেন।

২০০৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সিআইডির পরিদর্শক জুবায়ের আহমদ নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা মুফতি হান্নান, মুহিবুল্লাহ, শরীফ সাহেদুল আলম ওরফে বিপুলসহ             ছয় জঙ্গিকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র জমা দেন। এর মধ্যে বিপুল আদালতে স্বীকারোক্তি দেন। এদিকে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ২ আগস্ট তৎকালীন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ মামলার পুনঃতদন্তের আবেদন জানান। অধিকতর তদন্ত শেষে সিআইডির সিলেট অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার রওনকুল হক চৌধুরী ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে আগের ছয়জনের সঙ্গে মাওলানা তাজউদ্দিন ও আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে ইউসুফ ভাট নামের দুই জঙ্গিকে যুক্ত করা হয়। আদালত সূত্র জানায়, গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে দায়েরকৃত মামলায় আট আসামির বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ৭ মে অভিযোগ গঠন করা হয়। একই বছরের ১৫ জুন মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ৬৪ সাক্ষীর প্রায় অর্ধেক সাক্ষ্য দিয়েছেন। এদিকে, ওই ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলাটি বর্তমানে জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর এ মামলায় পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়। মামলার আসামিদের মধ্যে ইতোমধ্যে তিনজনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে ভিন্ন মামলার রায়ে। বর্তমানে মামলার আসামি মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল, মো. মফিজুল ইসলাম ওরফে মহিবুল্লাহ ও আবদুল মাজেদ ভাট কারাগারে রয়েছেন। অপর দুই আসামি মাওলানা তাজ উদ্দিন ও হুমায়ুন কবির হিমু পলাতক। মামলার বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সিলেট অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি জুবায়ের বখত জুবের বলেন, ‘করোনার আগে সর্বশেষ সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছিল। এরপর লকডাউনে আদালত বন্ধ হয়ে যায়। পরে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলেও ধার্য দিনে দেখা যায়, সাক্ষী এলে আসামি হাজির হয় না। ফলে আর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর