সোমবার, ৮ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

মাদক মাফিয়াদের চোখ রোহিঙ্গা শিশুদের দিকে

আইনগত সুবিধা নিতেই এই কৌশল

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

মাদক মাফিয়াদের চোখ রোহিঙ্গা শিশুদের দিকে

মাদক মাফিয়ারা কক্সবাজার থেকে মাদক পাচারে এবার ব্যবহার করছে রোহিঙ্গা শিশুদের। তারা শিশুদের মাদক চালানের ক্যারিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে কক্সবাজার থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করছে মরণ নেশা ইয়াবা। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দাবি- শিশুদের ব্যবহার করে ইয়াবা পাচারের ফলে আইনগতসহ বেশ কিছু সুবিধা পাচ্ছে মাদক মাফিয়ারা। তাই এ কাজে রোহিঙ্গা শিশুদের ব্যাপক হারে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা শিশুদের মাদকসহ গ্রেফতারের পর উল্টো ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সংস্থাগুলোকে। তাই কোনো কোনো সংস্থার সদস্যরা শিশু ক্যারিয়ারদের আটকের বিষয়ে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ইয়াবা পাচারে শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু রোহিঙ্গা শিশুকে ইয়াবাসহ  গ্রেফতার করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প থেকে যাতে ইয়াবা চালান নিয়ে বের হতে না পারে  সেদিকে নজর দিতে হবে। ক্যাম্প এবং আশপাশ এলাকায় চেকপোস্ট জোরদার করতে হবে। রোহিঙ্গা শিশুদের মাধ্যমে ইয়াবা পাচার রোধ করা না গেলে আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে ইয়াবা।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, ইয়াবার ট্রানজিট পয়েন্ট কক্সবাজার থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইয়াবা পাচারের জন্য ক্যারিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা শিশুদের বয়স ১০ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ইয়াবার চালান শিশুদের শরীরে ‘বডি ফিটিং’ করে পাচার করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের মতে- রোহিঙ্গা শিশুদের ক্যারিয়ার হিসেবে ব্যবহার করলে বেশ কিছু সুবিধা পায়

 মাদক ব্যবসায়ীরা। যার মধ্যে রয়েছে- শিশুদের ওপর নজরদারি রাখেন না আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। গ্রেফতার হলেও সহজে জামিন হয়ে যায়। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় না এবং তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট না দিয়ে ‘দোষীপত্র’ দিতে হয় এবং মাদক নিয়ে গ্রেফতার হলেও তাদের বিচার হয় শিশু আইন মেনে।

 এক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পায় ইয়াবা নিয়ে গ্রেফতার হওয়া শিশু। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের মতে, রোহিঙ্গা শিশুদের ইয়াবাসহ গ্রেফতারের পর উল্টো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকেই পড়তে হয় ভোগান্তিতে। বয়স পরীক্ষা, ডিএনএ টেস্ট করতে গিয়ে পদে পদে পড়তে হয় হয়রানিতে। বিবাদীদের বার্থ সার্টিফিকেট জালিয়াতি, মামলার বাদীকেই শিশুর জিম্মাদার হিসেবে গ্রহণ এবং পরিবারের সদস্যদের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া- এসব সমস্যা তো রয়েছেই। বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার দেওয়া তথ্য মতে, গত এক বছরে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ শতাধিক রোহিঙ্গা শিশুকে গ্রেফতার করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন। যার মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতেই গ্রেফতার করা হয় ৩২ জনকে। তাদের মধ্যে কোতোয়ালিতে পাঁচজন, ডবলমুরিংয়ে ছয়জন, চান্দগাঁওয়ে ছয়জন, বন্দরে চারজন, পাহাড়তলীতে তিনজন, পাঁচলাইশে সাতজন, পতেঙ্গা এলাকা থেকে এক রোহিঙ্গা শিশুকে গ্রেফতার করা হয়।

সর্বশেষ খবর