শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

ব্যাংকের এটিএম জালিয়াতির হোতাদের খোঁজ পায়নি ডিবি

জব্দ ডিভাইস থেকেও মেলেনি তথ্য

মাহবুব মমতাজী

প্রায় আড়াই বছর আগে রাজধানীতে অটোমেটেড টেলার মেশিনের (এটিএম) বুথে জালিয়াতি করে টাকা উত্তোলনের ঘটনায় পালিয়ে যাওয়া হোতাদের খোঁজ পায়নি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া জালিয়াতির হোতা ইউক্রেনের নাগরিক ভিতালি ক্লিমচুক কোথায় পালিয়েছেন সে সম্পর্কে কোনো তথ্যই বের করতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তা। এটিএম থেকে চুরি হওয়া ১৪ লাখ ৮০ হাজারের মধ্যে ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার হলেও বাকি টাকাগুলোর কোনো হাদিস মেলেনি। এমনকি ২০১৯ সালের জুনে গ্রেফতার ছয় ইউক্রেন নাগরিকের থেকে জব্দ ডিভাইসেও মেলেনি কোনো তথ্য। এ ছাড়া মোট কতটি এটিএমে ওই জালিয়াত চক্র কতবার হানা দিয়ে মোট কত টাকা পাচার করেছে, এমন প্রশ্নেরও কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই তদন্তসংশ্লিষ্টদের কাছে।

এদিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এক সূত্র বলছেন, ভিতালি ক্লিমচুক একাই পালাননি, তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক এ জালিয়াত চক্রের অন্তত দুটি গ্রুপ দুটি দেশে পালিয়ে গেছে।

২০১৯ সালের ১ জুন রাতে রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথের সিস্টেম হ্যাক করে অর্থ আত্মসাতের খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালায় সিআইডি ও ডিবি। সেখানে ইউক্রেনের নাগরিক ডেনিস ভিতোমাস্কিকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্যে পান্থপথের হোটেল ওলিও ড্রিম হ্যাভেনে অভিযান চালিয়ে আলেগ শেভচুক, ভ্যালেনতিন সোকলভস্কি, ভালোদিমির ত্রিশেনসকি, নাজারি ভজনোক এবং সেরগেই উকরাইনেতসকে ধরা হয়। এ ঘটনায় ২ জুন খিলগাঁও থানায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা মশিউর রহমান একটি মামলা করেন। গত বছরের ২৬ জানুয়ারি আদালতে এ মামলার চার্জশিট দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক আরিফুর রহমান।

মামলাটির বিষয়ে জানতে বাদী মশিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অথরাইজড পারসন নই।’ তবে মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবি মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহিদুর রহমান বলেন, ‘অনেক আগেই মামলাটির তদন্ত শেষ হয়েছে। এখন জালিয়াতির হোতাদের খোঁজ না পাওয়ার বিষয়ে কাগজপত্র না দেখে বলা যাবে না।’

সূত্র জানান, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের খিলগাঁওয়ের এটিএম থেকে টাকা উত্তোলনের আগের দিন বাড্ডার দুটি এটিএম বুথ থেকে বিভিন্ন কার্ড ব্যবহার করে একাধিকবার টাকা উত্তোলন করা হয়। বুথ থেকে একজন বের হয়ে আবারও টাকা তোলেন। এ সময় বুথে নিরাপত্তাকর্মীও উপস্থিত ছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, টাকা উত্তোলনের সময় মাস্ক দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করা হচ্ছে, উত্তোলনকারীর চোখে ছিল সানগ্লাস, মাথায় টুপি। পরদিন সকালে বাড্ডার এটিএম বুথের টাকার হিসাব মেলানোর সময় ৩ লাখ কম হয়। ওই এটিএমের দায়িত্বে ছিলেন ওরনেট সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেডের নিরাপত্তাকর্মী। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দুই বিদেশির টাকা উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এরপর সব এটিএম বুথে নিরাপত্তা বাড়ায় ব্যাংক। রাতেই খিলগাঁওয়ের তালতলায় ডাচ্-বাংলার এটিএমে টাকা চুরি করতে গেলে দুই বিদেশির একজন ধরা পড়েন।

ডিবির তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গ্রেফতার ইউক্রেন নাগরিকরা পরস্পর পূর্বপরিচিত। তারা সবাই জালিয়াতির উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশে এসেছিলেন। তাদের থেকে জব্দ করা হয় দুটি হার্ডডিস্ক ড্রাইভ, ২৭টি এটিএম কার্ড, ৬টি মোবাইল ফোন ও ১টি আইপ্যাড। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের পরীক্ষায় এসবে কোনো ম্যালওয়ার পাওয়া যায়নি। ৩টি মোবাইল ফোন পরীক্ষাও সম্ভব হয়নি। ব্ল্যাকবেরি মোবাইল ফোন ও আইপ্যাড ফিকটোরি রিসেট থাকায় তা থেকে কোনো তথ্য মেলেনি। আর ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যাংক স্টেটমেন্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের ২ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত কাকরাইল, রামপুরার ডিআইটি রোড, খিলগাঁওয়ের তালতলা রোডের দুটি বুথ, মধ্য বাড্ডার দুটি, হোটেল র‌্যাডিসন এবং নিকুঞ্জ-২-এর দুটি এটিএম বুথ থেকে সিস্টেম হ্যাক করে ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা চুরি করা হয়। তবে ভিতালি ক্লিমচুককে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। পাসপোর্ট অনুযায়ী তার নাম-ঠিকানা সঠিক পাওয়া গেছে। তদন্তকালে প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে অজ্ঞাত কয়েকজন আসামিকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমান।

ডিবি জানায়, গ্রেফতার ছয় ইউক্রেনীয় তুর্কি এয়ারওয়েজের একটি বিমানে করে ইউক্রেন থেকে ইস্তাম্বুল হয়ে বাংলাদেশে আসেন। ২০১৯ সালের ৬ জুন তাদের ভারতে যাওয়ার কথা ছিল। ওই বছরের ১২ জুন তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করে সিআইডি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর