বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

ঋণ আদায়ে কঠোর অবস্থানে জনতা ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য কঠোর অবস্থান নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যেসব গ্রাহক বছরের পর বছর পরিশোধ করছেন না তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে। ঋণ আদায়ে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় ব্যাংকের বেশ কিছু ঋণখেলাপি গ্রাহক ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করে যারা ভেবেছিলেন টাকা হয়তো আর ফেরত দিতে হবে না, তাদের ধরতে মাঠে নেমেছেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা। জনতা ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ইউসুফ ট্যানারি জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে ১৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ঋণ নেয়। নিয়মিত কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ২০০৭ সালে ঋণটি খেলাপিতে পরিণত হয়। গ্রাহক প্রতিষ্ঠান ইউসুফ ট্যানারি সুদ মওকুফের আবেদন করলে ২০১৫ সালে মোট ২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা টাকা সুদ মওকুফ করে জনতা ব্যাংক। এ সুযোগ পেয়েও আদায়যোগ্য ১১ কোটি ১৪ লাখ টাকা পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। আবার সুদ মওকুফের আবেদন করলে ২০২১ সালে তা মওকুফের সুযোগ দেওয়া হয়। এবারও ঋণটি পরিশোধ না করে সময় ক্ষেপণ করছিল ইউসুফ ট্যানারি। সর্বশেষ সুদাসলে এ প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া দাঁড়ায় ৪৭ কোটি ২৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। একাধিকবার সুযোগ দেওয়ার পরও তারা ঋণের এক টাকাও ফেরত দেয়নি। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণ আদায়ে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা (নম্বর ৪৩৮/২০২০) করে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২৮ আগস্ট অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে প্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগরে পাঠানোর নির্দেশ দেন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ইউসুফ ট্যানারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. বশির উল্লাহ, পরিচালক মো. অজিউল্লাহ, বন্ধকদাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. বশির উল্লাহর তিন ছেলে মো. ইউসুফ আলী, মো. হারুন অর রশিদ ও মো. আবু সুফিয়ান।

এর আগে ব্যাংকের ৩২৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা পরিশোধ না করে আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ রতন এবং পরিচালক টিপু সুলতান ও ফরহাদ মনোয়ারকে পাঁচ মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন অর্থ ঋণ আদালত। পাশাপাশি রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের (আরএসআরএম) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুর রহমানকে ৩১২ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণ খেলাপের দায়ে পাসপোর্ট জব্দসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন চট্টগ্রাম অর্থ ঋণ আদালত। এ ছাড়া মতিঝিল করপোরেট শাখায় গোল্ডেন রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের সাড়ে ৬ কোটি টাকা অনাদায়ে (মামলা নম্বর ১৮০/১৭) খেলাপি গ্রাহক মো. আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। বৈদেশিক বাণিজ্য করপোরেট শাখার আবদুস সামাদ প্যাকেজিংয়ের আড়াই কোটি টাকা অনাদায়ে প্রতিষ্ঠানটির তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়। গাজীপুর করপোরেট শাখার খেলাপি গ্রাহক মেসার্স হাসান স মিলের ১ কোটি ১ লাখ টাকা অনাদায়ে মিলটির মালিক খন্দকার জাকির হোসেনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়।

জনতা ব্যাংক লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও মো. আবদুছ ছালাম আজাদ বলেন, ‘খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার বিষয়ে আমরা অত্যন্ত আন্তরিক। এজন্য যেসব খেলাপি গ্রাহক দীর্ঘদিন ধরে ঋণ পরিশোধে সময় ক্ষেপণ করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু দৃষ্টান্ত সবাই দেখতে পেয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশে শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম আরও বেগবান করতে হলে অধিকসংখ্যক মানুষকে ব্যাংকিং-সেবার আওতায় আনা জরুরি। এর ফলে দেশে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সরকারের এ নীতির সঙ্গে মিল রেখে কাজ করছে জনতা ব্যাংক।’

 

 

সর্বশেষ খবর