বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

উপাচার্যের অনিয়মে চাকরি নিয়ে সংকটে ৭৩ শিক্ষক

আকতারুজ্জামান

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুকৃবি) শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রম নিয়ে একের পর এক অভিযোগ ওঠার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্ত করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। জানুয়ারিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। ইউজিসির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিয়োগ কার্যক্রম নিয়ে একটি নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নির্দেশনায় উপাচার্য ড. মো. শহীদুর রহমানের ছেলে-মেয়েসহ নয় আত্মীয়ের নিয়োগ বাতিল করতে বলা হয়। সরাসরি অধ্যাপক পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্যের স্ত্রী আবেদন করেছেন সেটিও বাতিল করতে বলেছে মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া বিষয় বিশেষজ্ঞ ছাড়া একই ব্যক্তিদের দিয়ে সিলেকশন বোর্ড গঠন করে নিয়োগ দেওয়া ৭৩ জন শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল করতে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

অভিযোগ উঠেছে, উপাচার্যের নানা অনিয়মের কারণে চাকরি নিয়ে সংকটে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ৭৩ জন শিক্ষক। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উপাচার্যের নির্বিচার অনিয়মের কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের নিয়োগও বাতিল করতে নির্দেশনা দিয়েছে।

৭৩ শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেয়ে সোমবার জরুরি বৈঠকে বসে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। বৈঠক শেষে এক বিজ্ঞপ্তিতে সমিতির নেতারা বলেন, ‘খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১৫’ অনুযায়ী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক নিয়োগের বাছাই বোর্ডে বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ সদস্য রাখার বিধান রয়েছে। কিন্তু সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এমন কোনো বিধান নেই। এতে আরও বলা হয়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত ৭৩ জন সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকের ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ ছাড়া একই ব্যক্তিদের দিয়ে সিলেকশন বোর্ড গঠন করা হয়েছে, ইউজিসির প্রতিবেদনে আসা এমন তথ্য সম্পূর্ণ মনগড়া। অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে ৭৩ শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশনা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি। শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. তসলিম হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অবলোকন না করেই সম্ভবত শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৭৩ শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা চাই শিক্ষা মন্ত্রণালয় গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করবে।’ তিনি বলেন, ইউজিসির তদন্তে উপাচার্যের নানা অনিয়মের বিষয় উঠে এসেছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় এটিরও প্রভাব থাকতে পারে বলে শিক্ষকরা মনে করছেন।

নাম প্রকাশ না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রভাষক বলেন, উপাচার্য বিভিন্ন সময়ে তার নয়জন আত্মীয়কে চাকরি দিয়েছেন। ছেলে, মেয়ে, শ্যালক, ভাতিজা- কাউকেই চাকরি দেওয়া বাদ রাখেননি তিনি। এ ছাড়া অনেক অনিয়ম করেছেন তিনি, যা ইউজিসির তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। উপাচার্যের অনিয়মের কারণে কোনো শিক্ষক যেন ভুক্তভোগী না হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম স্ট্রাকচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘চাকরি পাওয়ার দেড় বছরের মাথায় এসে যদি চাকরি থাকবে কি না সে চিন্তা করতে হয় তবে সেটি দুঃখজনক বিষয়। আমরা চাই দ্রুত শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়টি সমাধান করবে। কারণ মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশনা পেয়ে আত্মসম্মান সংকটে ভুগছেন শিক্ষকরা।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়) মো. মাহমুদুল আলম কোনো জবাব দেননি। খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. শহীদুর রহমানের কাছে নানা প্রসঙ্গে জানতে দফায় দফায় কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সর্বশেষ খবর