রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে ব্যবহার হয়েছিল রডের বদলে তার

ইনক্রিমেন্ট হারালেন ইউএনও

উবায়দুল্লাহ বাদল

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের লিনটেলে ১০ এমএম রড দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো ধরনের রড ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছিল ঘর। আবার কোনো কোনো ঘরে গ্রেটবিমে ১২ এমএম বদলে ১০ এমএম রড দেওয়া হয়েছিল। পিলারগুলোতেও ১০ এমএমের পরিবর্তে দেওয়া হয়েছিল ৮ এমএম রড। লিনটেল ও পিলারগুলোয় চারটি রডের বদলে দুটি এবং রডের রিংয়ের পরিবর্তে দেওয়া হয়েছিল তারের রিং। নির্ধারিত দূরত্বে রিং না দিয়ে অধিক দূরত্বে তারের রিং দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনেক ঘর। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো নির্মাণে এমনই ব্যাপক অনিয়ম ঘটেছিল বলে সরকারি তদন্তে উঠে এসেছে। উল্লিখিত ঘটনায় প্রকল্প বাস্তবায়নের দেখভালের দায়িত্বে থাকা তৎকালীন আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা আক্তারকে (পরিচিতি নম্বর ১৭৪২৩) সরকারি কাজে অবহেলার পাশাপাশি ‘অসদাচরণ’-এর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ার শাস্তি হিসেবে এক বছরের ‘বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি’ (ইনক্রিমেন্ট) স্থগিত করার লঘুদণ্ড দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গতকাল জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রাঙামাটির বাঘাইছড়ির ইউএনও রুমানা আক্তার গত বছর ৭ জুন থেকে চলতি বছর ২১ মে পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় একই পদে কর্মরত ছিলেন। সেখানে থাকাবস্থায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমি ও গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন দ্বিতীয় পর্যায়ের গৃহগুলো নির্মাণ ও তদারকিজনিত বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ঘটেছে। এর মধ্যে ঘরের গ্রেটবিমে ১২ এমএম চারটি রড নির্দিষ্ট দূরত্বে রিং বাঁধাইপূর্বক স্থাপন করার কথা ছিল। কিন্তু এসব ঘরে গ্রেটবিমে নিম্নমানের রড, অধিক দূরত্বে রিং স্থাপন, রডের রিংয়ের বদলে তারের রিং ব্যবহার করা হয়েছে। পিলারগুলোয় ১০ এমএম রড দেওয়া হলেও রিং বাঁধাইয়ের ক্ষেত্রে অধিক দূরত্বে ৮ এমএম রড ব্যবহার করা হয়েছে। লিনটেলগুলোয় ১০ এমএম চারটি রড নির্দিষ্ট দূরত্বে রডের রিং দিয়ে বাঁধাইয়ের কথা থাকলেও বেশ কিছু ঘরের লিনটেলে মাত্র দুটি করে রড ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি কোনো কোনো ঘরের লিনটেল রডের ব্যবহার ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছে। কিছু ঘরের লিনটেলে তিনটি রড দেওয়া হলেও নির্ধারিত দূরত্বের অধিক দূরত্বে তারের রিং দিয়ে বাঁধাইসহ ব্যাপক মাত্রায় অনিয়ম দেখা গেছে। এ কারণে রুমানা আক্তারের বিরুদ্ধে ১৮ জুলাই সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’-এর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা রজু করে কৈফিয়ত তলব করা হয়। একপর্যায়ে তাঁর ব্যক্তিগত শুনানিও নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেখানে রুমানা আক্তার জানান, তিনি দায়িত্বে থাকাকালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ নিয়মিত পরিদর্শন করেছেন। কাজের গুণগত মান বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। নির্মাণশ্রমিকদের ভুলে কোনো কোনো ঘরে নির্মাণকাজ ত্রুটিপূর্ণ হয়েছিল সত্য। ইতোমধ্যে ওই সব ত্রুটি সংশোধন করা হয়েছে। এজন্য মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চান তিনি। জবাবে রুমানা আক্তারের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে অবহেলার পাশাপাশি অসদাচরণের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় শাস্তি হিসেবে এক বছরের জন্য ‘বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি’ স্থগিত করার লঘুদণ্ড দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তিনি এক বছরের বর্ধিত বেতন কখনই প্রাপ্য হবেন না উল্লেখ করা হয় প্রজ্ঞাপনে।

প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশে নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর হস্তান্তরের কয়েক দিন পর এবং কিছু ঘর হস্তান্তরের আগেই ভেঙে পড়ে। এসব ঘর নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে তৈরি হওয়ায় ভেঙে পড়ছে বলে বলা হয় বিভিন্ন মহল থেকে। এমন পরিস্থিতিতে গত বছর ৫ জুলাই কঠোর লকডাউনের মধ্যেই সারা দেশের আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শনে মাঠে নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাঁচটি টিম। এতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনিয়মের নানা চিত্র উঠে আসতে থাকে। অনিয়মে জড়িত ১৮০ জনের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিও ছিলেন। তখন এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের স্লোগান হলো- ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’। প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প। এ প্রকল্পে ক্রটিবিচ্যুতি, অনিয়ম, দুর্নীতি ও শৈথিল্যের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।

 

সর্বশেষ খবর