রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

সিলেটে মিলতে পারে প্রতিদিন ৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

সিলেটে আরও গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা দেখছে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)। জেলার বিয়ানীবাজার গ্যাস ক্ষেত্রের ১ নম্বর কূপে এই সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে পুনর্খননের। গতকাল দুপুরে কূপ পুনর্খনন কাজ শুরু হয়। এসজিএফএলের মালিকানাধীন কূপটি পুনর্খননের কাজ পেয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। খনন কাজ শেষ হলে কূপটি থেকে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র জানায়, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস-এর আওতায় বর্তমানে পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- হরিপুর গ্যাসক্ষেত্র, রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্র, ছাতক (টেংরাটিলা) গ্যাসক্ষেত্র, কৈলাসটিলা গ্যাসক্ষেত্র ও বিয়ানীবাজার গ্যাসক্ষেত্র। এর মধ্যে দুর্ঘটনাজনিত কারণে টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। বাকি চারটি গ্যাসক্ষেত্রের ১২টি কূপ থেকে বর্তমানে প্রতিদিন ৯১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে। এসজিএফএল সূত্র জানায়, বিয়ানীবাজার গ্যাসক্ষেত্রে দুটি কূপ রয়েছে। ১৯৯৯ সালের ১৩ মে গ্যাসক্ষেত্রের ১ নম্বর কূপ থেকে পরীক্ষামূলক উত্তোলন শুরু হয়। একই বছরের ৩১ জুলাই থেকে শুরু হয় বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলন। এরপর টানা ১৪ বছর উত্তোলনের পর ২০১৪ সালে কূপটি থেকে গ্যাস উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়। দুই বছর বিরতি দিয়ে ২০১৬ সালের শুরু থেকে ফের শুরু হয় উৎপাদন। কিন্তু ওই বছরের শেষে দিকে আবারও বন্ধ হয়ে যায় উত্তোলন। এরপর থেকে কূপটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাপেক্সের মাধ্যমে গ্যাসক্ষেত্রটিতে অনুসন্ধান কাজ চালায় এসজিএফএল। অনুসন্ধানে দেখা যায়, পরিত্যক্ত এই কূপটিতে এখনো প্রচুর পরিমাণ গ্যাস মজুদ রয়েছে। এই সম্ভাবনা থেকে গতকাল শনিবার কূপ পুনর্খননের কাজ শুরু হয়। বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী ও এসজিএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান মিলে পুনর্খনন কাজের উদ্বোধন করেন। বিয়ানীবাজার গ্যাসক্ষেত্রের ১ নম্বর কূপ দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকলেও ২ নম্বর কূপ থেকে বর্তমানে প্রতিদিন ৭ থেকে সাড়ে ৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে। সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিয়ানীবাজার গ্যাসক্ষেত্রের ১ নম্বর কূপে পুনর্খনন কাজ শুরু হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই খনন কাজ শুরু হবে বলে আমরা আশা করছি। এরপরই উৎপাদনে যাওয়া যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই কূপ থেকে প্রতিদিন ৫-৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসপ্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে খনন কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।’ ১৯৫৫ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম গ্যাসের সন্ধান মেলে সিলেটের হরিপুরে। গ্যাসের প্রথম বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয় ছাতক ফিল্ডের গ্যাস দিয়ে। এরপর দেশে আবিষ্কৃত হয় বেশ কয়েকটি গ্যাসক্ষেত্র। বর্তমানে দেশে আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রের সংখ্যা ২৮টি। এসব গ্যাসক্ষেত্রে প্রমাণিত মজুদের পরিমাণ ২১ দশমিক ৪ টিসিএফ। এর বাইরে সম্ভাব্য মজুদ রয়েছে আরও ৬ টিসিএফ। বাংলাদেশে সবশেষ গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান মিলে সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জে। গত বছরের ৯ আগস্ট জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবসে জকিগঞ্জে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের খবরটি নিশ্চিত করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ওই সময় জানানো হয়, গ্যাসক্ষেত্রটিতে ৬ হাজার ৮০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর