মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

চিকিৎসা না দিয়ে পুলিশ ডাকেন চিকিৎসক!

♦ বাধা দেওয়ায় পেশাদার ছিনতাইকারীদের হাতে খুন ডা. বুলবুল ♦ মাত্র সাত দিন আগে জামিনে বের হন আসামি রাসেল ♦ চার্জশিট প্রস্তুত

সাখাওয়াত কাওসার

চিকিৎসা না দিয়ে পুলিশ ডাকেন চিকিৎসক!

ডা. বুলবুল

পেশাদার ভয়ংকর ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হন দন্তচিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুল। নৃশংস ওই ঘটনার মাত্র সাত দিন আগে কারাগার থেকে জামিনে বের হন কিলিংয়ে অংশ নেওয়া মো. রাসেল হোসেন হাওলাদার। তবে ওই রাতের মিশনের নেতৃত্বে ছিলেন মো. রায়হান ওরফে আপন (২৭)। তার নেতৃত্বে রাসেল, মো. হাফিজুর রহমান ওরফে হৃদয় রাঢ়ী, সোলাইমান মীর ও মো. রিপন মিশনে অংশ নেন। এদের প্রত্যেকেই আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে নিজেদের অপরাধ স্বীকার করেছেন। বলেছেন, তাদের কাজে বাধা দেওয়ায়, বিশেষ করে মোবাইল ফোন দিতে না চাওয়ার কারণেই ডা. বুলবুলকে ছুরিকাঘাত করা হয়। ছুরিকাঘাত করেন মো. রিপন। সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনার তদন্তকাজ শেষ করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) প্রস্তুত করেছে তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তদন্তে উঠে এসেছে, মৃত্যুর আগে ডা. বুলবুলকে চিকিৎসা না দিয়ে প্রথমে পুলিশ ডাকেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।

গতকাল এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ডিবির মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. সাইফুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘আমরা তদন্তের প্রায় সবকিছুই গুছিয়ে এনেছি। ডা. বুলবুলের খুনিরা সবাই পেশাদার ছিনতাইকারী। এই গ্রুপের কয়েকজন সদস্য ওই ঘটনার আগে থেকেই কারাগারে আছেন। রাসেল মাত্র সাত দিন আগে জামিনে বের হয়ে এসে ওই অপারেশনে অংশ নেন। আল হেলাল হাসপাতালের চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টিও আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি।’

অভিযোগপত্রে যা থাকছে : অপারেশনে অংশ নেওয়া পাঁচজন নিজেদের ডাকাত দলের সদস্য বলে স্বীকার করেছেন। ২৬ মার্চ রাত আনুমানিক ১১টায় কাঁঠালতলা ভাঙ্গাবাড়ীতে একত্র হয় ছিনতাইকারীরা। রাত ২টায় তারা নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করে ছিনতাইয়ের উদ্দেশে বের হয়। বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করে বেগম রোকেয়া সরণির নাভানা ফার্নিচারে শোরুমের সামনে আসে তারা। ভোর আনুমানিক সাড়ে ৫টার দিকে ডা. বুলবুল নোয়াখালী যাওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে রিকশায় নাভানা ফার্নিচার শোরুম ও গ্রামসিকো ফার্নিচার শোরুমের সামনে (মেট্রোরেল ২৭৮ নম্বর পিলার) এলে রিপন ও রাসেল রিকশার গতিরোধ করেন। তারা বুলবুলকে সঙ্গে থাকা সব দিয়ে দিতে বলেন। না দিলে ছুরি দিয়ে আঘাত করার ভয় দেখান। বুলবুল তার মোবাইল ফোন দিতে না চাওয়ায় রিপন তার ঊরুতে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যান। ওই সময় দলনেতা রায়হান ঘটনাস্থলের পাশেই আরেকটি রিকশায় অবস্থান করে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছিলেন। পুলিশ আসে কি না সে বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিজের কাছে রেখেছিলেন রায়হান। অপারেশন শেষ করে সবাই কাঁঠালতলার মোড়ে পুনরায় একত্র হন। রিপন ফোন করে রায়হানকে ডেকে আনেন। রায়হান ১৫০০ টাকা দেন রিপনকে। ওই টাকা সবার মধ্যে ভাগাভাগি করা হয়। অপারেশনে ব্যবহৃত ছুরিটি রিপন ও আরিয়ান ভাঙ্গাবাড়ীতে ইটের খোয়ার নিচে রাখেন।

অভিযোগপত্রের একটি অংশে উল্লেখ করা হচ্ছে, ডা. বুলবুলকে গুরুতর অবস্থায় রাস্তার ওপর রেখে পালিয়ে যান সেই রিকশাচালক। পরে বিহঙ্গ পরিবহনের বাসচালক আশিক ও হেলপার মো. সাগর তাকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী আল হেলাল হাসপাতালে নিয়ে যান। ডা. বুলবুলকে চিকিৎসা না দিয়েই সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক ঘটনাটি কাফরুল থানাকে অবহিত করেন। কাফরুল থানা পুলিশ হাসপাতালে আসার পর বুলবুলের স্ত্রী শাম্মী আক্তারকে অবহিত করে। এরপর ডা. বুলবুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রসঙ্গত, ২৬ মার্চ ভোরে রাজধানীর মিরপুরের কাজীপাড়ায় নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের ২৭৮ নম্বর পিলারের কাছে খুন হন দন্তচিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুল। একটি মুঠোফোন খোয়া গেলেও নিহত বুলবুলের সঙ্গে থাকা ১২ হাজার টাকা, অন্য একটি মুঠোফোন ও আঙুলে থাকা সোনার আংটি জব্দ করে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এ খুনের ঘটনায় ২৭ মার্চ মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন নিহতের স্ত্রী শাম্মী আক্তার। ৩০ মার্চ মামলাটির তদন্তভার ডিবির মিরপুর বিভাগে স্থানান্তরিত হয়। তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয় পরিদর্শক মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনকে।

সর্বশেষ খবর