শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
অবহেলায় হয় সর্বনাশ

সেপ্টেম্বরজুড়েই ডেঙ্গুর দাপট

জয়শ্রী ভাদুড়ী

সেপ্টেম্বরজুড়েই ডেঙ্গুর দাপট

দেশের হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি। বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১ হাজার ৫১৪ জন। এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেছেন ৫০ জন। রাজধানীবাসীর দিন কাটছে ডেঙ্গু আতঙ্কে। শিশুদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন অভিভাবকরা।

ইমেরিটাস অধ্যাপক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জ্বর এলে ডেঙ্গু এবং কভিড-১৯ টেস্ট করতে হবে। শিশুরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে বিপদ বেড়ে যায়। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে ইন্টারনাল রক্তক্ষরণ অনেক বেশি হয়। শিশুরা অল্পতেই শকে চলে যায়। কিডনি, লিভার ফেইলিউর শিশুদের খুব দ্রুত হয়। সে কারণে ডেঙ্গুতে শিশুদের মধ্যে মৃত্যুহার বেশি। তিনি আরও বলেন, দিনের বেলা শিশুরা ঘুমালে মশারি টানাতে হবে, ফুল প্যান্ট পরিয়ে রাখতে হবে। জ্বর এলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কোথাও স্বচ্ছ পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। সচেতন থেকে ডেঙ্গুকে রুখতে হবে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান স্বপ্নিল বাহাদুর (৭) রাজধানীর বিএফ শাহীন স্কুলের ক্লাস ওয়ানে পড়ত। জ্বর, বমি ও পেটব্যথা নিয়ে গত ৮ জুলাই রাজধানীর আদ্-দ্বীন হাসপাতালে ভর্তি হয় স্বপ্নিল। ডেঙ্গু টেস্ট নেগেটিভ এলেও তার ব্লাডে প্লাটিলেটের মাত্রা ছিল ৭০ হাজার। প্লাটিলেট দেওয়ার পর তাকে সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ডেঙ্গু টেস্টে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ জুলাই মারা যায় স্বপ্নিল। মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দুজন মারা গেছেন। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২৫ জন। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ৯২ জন এবং ঢাকার বাইরে ৩৩ জন ভর্তি হয়েছেন। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার মানুষ। এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেছেন ৫০ জন। আমাদের নাটোর প্রতিনিধি জানান, বড়াইগ্রামের জোনাইল চৌমুহান গ্রামের হাফিজুর রহমান (২৫) নামে এক যুবক ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। শুক্রবার ভোরে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিনি ঢাকায় একটি প্রাইভেট চাকরি করতেন ও তেজকুনিপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। ১৬ সেপ্টেম্বর জ্বরে আক্রান্ত হন হাফিজুর। পরদিন টেস্ট করালে তার ডেঙ্গু পজিটিভ আসে। বিভিন্ন জটিলতায় হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় নজর রাখতে হাসপাতালগুলোকে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অধিদফতরের পরিচালক (সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে হাসপাতালের পরিচালকদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিট, চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করে রোগী ম্যানেজমেন্টের বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, শিশুদের ফ্লুয়িড ম্যানেজমেন্ট ঠিকমতো না হলে ঝুঁকি বেড়ে যায়। দেরি হয়ে গেলে রোগীর পরিস্থিতি খারাপের দিকে চলে যায়। শিশুদের মৃত্যুর পেছনে এটা একটা বড় কারণ। জ্বর এলে অভিভাবকরা অবহেলা করে দেরি করে হাসপাতালে আসছেন। শুরু থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না হওয়ায় রোগীর পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। তাই জ্বর হলে শিশুদের দ্রুত হাসপাতালে আনতে অনুরোধ করা হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর