সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
অর্থনৈতিক অঞ্চল

গ্যাস বিদ্যুৎ পানি সংকট সমাধানের আশ্বাস বেজার

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ টানতে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিলেও সেখানে বিনিয়োগকারীরা কবে থেকে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সুবিধা পাবেন সে বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে নিশ্চিত করতে পারেননি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। এসব সুবিধা পাওয়া যাবে, সরকারের প্রতিশ্রুতি রয়েছে- এমন আশ্বাসেই সীমবদ্ধ রাখলেন অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সংকট সৃষ্টি হলেও বিনিয়োগকারীদের জন্য গ্যাস-বিদ্যুতের কোনো সমস্যা হবে না এমন আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে সার্বক্ষণিক গ্যাস-বিদ্যুৎ পাওয়ার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। অচিরেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। গতকাল রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতির কথা জানান বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৫০টি শিল্প ও অবকাঠামোর উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে ইআরএফ এ সভার আয়োজন করে। সভায় জানানো হয়, আগামী ২৬ অক্টোবর এ শিল্প ও অবকাঠামোগুলোর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরীতে পানি সরবরাহের আশ্বাস দিলেও এখনো কর্তৃপক্ষ পানি দিতে পারেনি। বেসরকারি উদ্যোক্তারা নিজ উদ্যোগে গভীর নলকূপ স্থাপন করে পানি উত্তোলন করার পর ওয়াসার রেট অনুযায়ী পানির বিল নিচ্ছে বেজা। উপরন্তু এর ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট এবং ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দিতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, এ ধরনের ভ্যাট আদায়ের বিষয়টি তার জানা নেই। তবে পানি সরবরাহে ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ নেওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষের পরিচালন ব্যয় নির্বাহের লক্ষ্যে এসব চার্জ নেওয়া হয়।  দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে জমি ইজারা নেওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। ব্যবসায়ীদের দাবি, শুরুতে তাদের বলা হয়েছিল যে, জমি ইজারা নিলে এর বিপরীতে কোনো ভ্যাট দিতে হবে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, এ বিষয়ে তাদের কোনো দায় নেই। ভ্যাট নিচ্ছে এনবিআর। তবে বিষয়টি সমাধানে তারা এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা করছেন বলেও জানান তিনি। 

কবে নাগাদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে পানি পাওয়া যাবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান জানান, তারা পানি সরবরাহ নিয়ে যে ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছিলেন, তার সঙ্গে বাস্তবতার ফারাক রয়েছে। এ কারণে ভূগর্ভস্থ পানি সরবরাহ প্রক্রিয়া থেকে তারা সরে যাচ্ছেন।  সমস্যা সমাধানে দুটি বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মতামুহুরী সেচ প্রকল্প থেকে ১১০ মেগালিটার পানি সরবরাহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া মেঘনা নদী থেকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায় আরেকটি বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে, যেটি বাস্তবায়ন হলে দৈনিক প্রায় ১ হাজার মেগালিটার পানি সরবরাহ করা হবে।

অনেক বিনিয়োগকারী গ্যাস-বিদ্যুৎ সুবিধা না পেয়ে এখন বিনিয়োগে যাবেন কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। কোনো কোনো উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করে ব্যাংক ঋণের কিস্তি গুনলেও কবে উৎপাদনে যেতে পারবেন সে বিষয়ে নিশ্চিত নন। অর্থনৈতিক অঞ্চলের এসব সমস্যা সমাধানে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বেজার নিয়মিত মতবিনিময় হয় কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান জানান, আমি যোগদানের পর তাদের সঙ্গে বসেছি। আর আমাদের যারা বিনিয়োগকারী তাদের সঙ্গে বেজার একবার নয়, একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দেশি বিনিয়োগকারীদের চাহিদা মেটাতে পারছি না, আসলে এটি ঠিক নয়। আমাদের কাছে প্রতিদিন প্রচুর বিনিয়োগকারী আগ্রহ নিয়ে আসছেন। বিসিকের মতো আমাদেন প্লট খালি রাখার সুযোগ নেই। যারা প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন তাদের নির্দিষ্ট সময়ে শিল্প-কারখানা স্থাপন করতে হবে। সেটি না করায় এরই মধ্যে দুটি বড় প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বেজা বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করেছিল, উৎপাদনে যাওয়ার আগে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু সময়মতো তা না পেয়ে একটি গ্রুপ নিজের খরচে ডিআরএস লাইন নির্মাণ করেছে।

এখন পর্যন্ত বেজার পক্ষ থেকে কোনো পাইপলাইন সেট করা হয়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসায়িরা অনেকেই বাধ্য হয়ে নিজের খরচে তা করছেন। এ ব্যাপারে বেজার কোনো বিশেষ উদ্যোগ রয়েছে কি না জানতে চাইলে ইউসুফ হারুন বলেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ নিয়ে কিছু সমস্যা আছে। কুয়েত থেকে আমরা যে এলএনজি পেতাম, আপাতত তা পাচ্ছি না। ইউক্রেন যুদ্ধ যখন শেষ হবে, সে সময় আমরা পাব। তিনি বলেন, এলএনজির দাম অনেক বেশি। এ দাম সমন্বয় করে আরও কোনো দেশ থেকে গ্যাস আমদানি করা যায় কি না, সরকার সে চেষ্টা করছে। যেসব বিনিয়োগকারী অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করেছেন, আমরা চেষ্টা করছি তাদের গ্যাস সরবরাহ করার জন্য। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ডিআরএসের জন্য ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এ ছাড়া ২৩০ কেভি বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য তিনটি সাবস্টেশন স্থাপন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভীর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায়  অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিনিয়োগ চিত্র তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ফারুক। ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিতি ছিলেন বেজার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও অর্থ) ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ হাসান আরিফ।

সর্বশেষ খবর