শুক্রবার, ৪ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
আজ জাতীয় সংবিধান দিবস

প্রথমবার পালন হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়

আরাফাত মুন্না

আজ ৪ নভেম্বর। সংবিধান প্রণয়ন দিবস। ১৯৭২ সালের এই দিনে গণপরিষদে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ‘সংবিধান বিল’ হিসেবে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত ও অনুমোদিত হয়। একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয় স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান। দেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দিনটির এতদিন কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ছিল না। এবারই প্রথম রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দিবসটি পালন হচ্ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর ৩১ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে ৪ নভেম্বর পেয়েছে জাতীয় সংবিধান দিবসের  স্বীকৃতি। জাতীয় দিবস ঘোষণার পর আয়োজনের পর্যাপ্ত সময় না পাওয়ায় এবার সরকারি ভাবে তেমন কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি সংবিধান দিবসটি উদযাপনে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় শুধু বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেই দিবসটি উদযাপন করছে। তবে বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, অনেকদিন থেকেই ৪ নভেম্বরকে সংবিধান দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি আসছে। দিবসটির গুরুত্ব বিবেচনা করে ৪ নভেম্বরকে জাতীয় সংবিধান দিবস ঘোষণার স্বীকৃতি দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এবার সময় স্বল্পতার কারণে বড় অনুষ্ঠান আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। পরের বছর থেকে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ জাতির পিতার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জন করার মাত্র ১০ মাসের মধ্যে সংবিধান প্রণয়ন করতে পেরেছিল। বাংলাদেশের সংবিধান কেবল দেশের সর্বোচ্চ আইনই নয়, সংবিধানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মূল চরিত্র বর্ণিত রয়েছে। গণপরিষদে সংবিধানের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘এ সংবিধান শহীদের রক্তে লিখিত, এ সংবিধান সমগ্র জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার মূর্ত প্রতীক হয়ে বেঁচে থাকবে।’ সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশে ১৯৭২ সালের ১১ এপ্রিল তৎকালীন আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। একই বছর ১২ অক্টোবর গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে ড. কামাল হোসেন খসড়া সংবিধান বিল আকারে উত্থাপন করেন। মূল সংবিধান ইংরেজি ভাষায় রচিত হয় এবং একে বাংলায় অনুবাদ করা হয়। এরপর ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ‘সংবিধান বিল’ হিসেবে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত ও অনুমোদিত হয়। ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের পর ৫০ বছরে ১৭ বার সংবিধান সংশোধন হয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চম, সপ্তম, ত্রয়োদশ ও ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। জাতীয়ভাবে ৪ নভেম্বর সংবিধান দিবস পালন না হলেও বিগত বছরগুলোতে বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়েছে।

 

কর্মসূচি : এ বছর সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো সংবিধান দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। আজ শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় সুপ্রিম কোর্টের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সুপ্রিম কোর্টের জাজেস স্পোর্টস কমপ্লেক্স অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং আলোচক হিসেবে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের থাকার কথা রয়েছে। এ ছাড়া একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে আজ বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ আলোচনা সভা। জাতীয় সংবিধান দিবস পালনের লক্ষ্যে ৫ নভেম্বর সকাল ১০টায় সেমিনার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স (বিলিয়া)। ধানমন্ডির বিলিয়া অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন থাকবেন বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। সভাপতিত্ব করবেন বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল-ইসলাম।

সর্বশেষ খবর