সাধারণত এডিস মশাবাহিত ভাইরাস ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ দেখা যায় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এবার নভেম্বরেও ঊর্ধ্বমুখী ডেঙ্গুর তান্ডব। এ মাসের ছয় দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৮৩ জন, মারা গেছেন ২৯ জন। মৌসুম শেষেও এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত বাড়ায় তৈরি হচ্ছে শঙ্কা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তন হয়েছে। এডিস মশার ঘনত্ব বেড়েছে। কিন্তু রোগী না থাকলে মশা বাড়লেও ক্ষতি হয় না। এবার রোগীও ছিল আবার মশার ঘনত্বও বেশি থাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত জ্যামিতিক হারে বেড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা হটস্পট ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ হয়েছি। যে কারণে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। যেখান থেকে ডেঙ্গু রোগী বেশি আসে, সেখানে ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে মশক নিধন কর্মসূচি পরিচালনা করতে হয়। তাহলে এক রোগী থেকে অন্য রোগী আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁঁকি থাকে না। আশা করছি নভেম্বরের মাঝামাঝি ডেঙ্গু আক্রান্তের হার কমে আসবে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, দেশে গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত ৯০৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৪৭৬ এবং ঢাকার বাইরের ৪৩২ জন। এ নিয়ে সারা দেশের হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩ হাজার ৩৬৮ জনে। এ সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তিনজন মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সর্বমোট ৪৩ হাজার ১০৭ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৫৬৯ জন। জানুয়ারি মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২০, মার্চে ২০, এপ্রিলে ২৩, মে মাসে ১৬৩ এবং জুন মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৩৭ জন। এ সময়ে মারা গেছেন একজন। এ বছর ২১ জুন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজন রোগী মারা যান। জুলাই মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৭১ জন, মারা গেছেন নয়জন। আগস্ট মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৫২১ জন, মারা গেছেন ১১ জন। সেপ্টেম্বরে আক্রান্ত হন ৯ হাজার ৯১১ জন, মারা যান ৩৪ জন। অক্টোবরে বছরের সব রেকর্ড ভেঙে আক্রান্ত হয়েছেন ২১ হাজার ৯৩২ জন, মারা গেছেন ৮৬ জন। নভেম্বরের ছয় দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৮৩ জন, মারা গেছেন ২৯ জন। এ নিয়ে ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৭০। বিনামূল্যে নয়, ফি লাগবে সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষায় : সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার নতুন মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। গতকাল জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সভাকক্ষে ‘কমিউনিটি পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক পরামর্শমূলক সভায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নতুন নির্দেশনার কথা বলেন। জাহিদ মালেক বলেন, ‘ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য সরকারি হাসপাতালে ১০০ টাকা এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৩০০ টাকা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। এটি এখন থেকে চলমান থাকবে।’ যদিও ৪ নভেম্বর এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম এক অনুষ্ঠানে জানান, ডেঙ্গুর সুচিকিৎসা নিশ্চিতে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রও সরবরাহ করা হচ্ছে। ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা সব জেলাতেই আছে। এখনো পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা বা চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।