বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

অন্য বাসের চাপে পিষ্ট নগর পরিবহন সেবা

হাসান ইমন

অন্য বাসের চাপে পিষ্ট নগর পরিবহন সেবা

রাজধানীতে পরিবহন সেক্টর শৃঙ্খলায় নিয়ে আসতে বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রমের আওতায় ঢাকা নগর পরিবহন চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। সে পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত (২১ নম্বর) একটি পাইলট রুট চালু করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ১৩ অক্টোবর আরও দুটি রুট (২২ ও ২৬) চালু হলেও তা নিয়ে এখন দেখা দিয়েছে নানান অব্যবস্থাপনা। একই রুটে নগর পরিবহন ছাড়াও বেসরকারি অনেক কোম্পানির বাস চলছে। একই সঙ্গে নগর পরিবহনের নির্ধারিত স্টপেজে অন্য বাস দাঁড়িয়ে থাকায়ও কিছু স্টপেজ অকার্যকর রয়েছে। এসব রুটে চলা বেসরকারি পরিবহন মালিকদের কয়েকবার চিঠি দিলেও কোনো সাড়া মিলছে না।

পরিবহনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা নগর পরিবহন চালু হওয়ায় ঘাটারচর থেকে কদমতলী ও স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত সড়কে স্বস্তি ফিরছে। যাত্রীদের ভোগান্তিও কমেছে। তবে সরকারের ফ্র্যাঞ্চাইজি বাস সার্ভিসের কারণে যাত্রী নিয়ে বিপাকে পড়েছে অন্য কোম্পানির বাসগুলো। ফলে এসব বাসের মালিক ও শ্রমিকরা নগর পরিবহন বন্ধের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। এ অবস্থায় কোনো নিয়মনীতি না মেনেই ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর রুটে            বাস চালানো হচ্ছে। সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা নগর পরিবহনের জন্য তৈরি কাউন্টারগুলোর সামনে অন্য কোম্পানির বাস রেখে দেওয়া হচ্ছে। যেসব স্থানে নগর পরিবহন দাঁড়ানোর কথা সেসব স্থানে দাঁড়িয়ে আছে অন্য বাস। কখনো কখনো সেসব স্থানে অন্য বাসগুলো সিরিয়ালি দাঁড়িয়ে থাকছে। এতে যাত্রীরা নগর পরিবহনে উঠতে সমস্যায় পড়ছেন। কাউন্টার ছাড়া যাত্রী তুলছে অন্য গণপরিবহনগুলো। ফলে যথেষ্টসংখ্যক যাত্রী পাচ্ছে না নগর পরিবহন বাসগুলো।

এদিকে ঘাটারচর থেকে স্টাফ কোয়ার্টার ও কদমতলী রুটে ১৫টি কোম্পানির যাত্রীবাহী বাস চলতে দেখা গেছে। ২২ ও ২৬ নম্বর রুটে নগর পরিবহন সেবা চালু হওয়ার পর অন্য বাসগুলো বন্ধের নির্দেশনা দেওয়ার পরও চলছে এসব পরিবহন। এর মধ্যে ২২ নম্বর রুটে গ্লোরি পরিবহন, মৌমিতা পরিবহন, আশিয়ান পরিবহন, গ্রিন বাংলা, স্বাধীন পরিবহন, অভিনন্দন পরিবহন, পরিস্থান পরিবহন, প্রজাপতি পরিবহনসহ অসংখ্য পরিবহন চলাচল করছে। আর ২৬ নম্বর রুটে কদমতলী সীমানায় আনন্দ পরিবহন, বোরাক পরিবহন, আলদি পরিবহন, রাইদা পরিবহন এবং ঘাটারচর এলাকায় মালঞ্চ পরিবহন, পরিস্থান পরিবহন, মিডলাইন পরিবহন চলাচল করছে। এ ছাড়া মাইক্রোবাস কেটে অবৈধভাবে বানানো লেগুনা এবং রুট পারমিটবিহীন লেগুনা কাজলা থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত চলাচল করছে। নগর পরিবহনসংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন, রাইদা পরিবহনটি জুরাইনে কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। আর ঘাটারচর স্টেশনে প্রজাপতি ও পরিস্থান পরিবহন দাঁড়িয়ে থাকে। এ দুই স্টেশনে বেসরকারি পরিবহনগুলো নগর পরিবহন ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকে। এখানে যাত্রী এলে তারা ডেকে ও টেনে নিয়ে যায়। নগর পরিবহনে উঠতে দেন না অন্য পরিবহনের চালক ও তাদের সহযোগীরা।

এ বিষয়ে ২২ নম্বর রুটে চলাচল করা নগর পরিবহনের স্বত্বাধিকারী অভি মোটরসের মালিক প্রতিনিধি মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ঘাটারচর স্টেশনে নগর পরিবহনের তিনটি রুটে তিনটি বাস দাঁড়িয়ে থাকে। যাত্রী উঠিয়ে ১০ মিনিট অন্তর গাড়িগুলো ছেড়ে যায়। কিন্তু এ স্টপেজে এখন একটু সমস্যা হচ্ছে। এখানে প্রজাপতি ও পরিস্থান পরিবহনের কোনো স্টপেজ নেই। কিন্তু এ দুই কোম্পানির অনেক বাস এখানে দাঁড়িয়ে থাকে। আর নগর পরিববহনগুলোর সামনে ও পাশে এমনভাবে তাদের গাড়িগুলো রাখে, নগর পরিবহনের বাসগুলো দেখাই যায় না। যাত্রী এলে ওইসব পরিবহনের চালক ও সহযোগীরা ডেকে নিয়ে যান। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে পুলিশের হয়রানি তো আছেই। তিনি বলেন, ‘বেসরকারি পরিবহনের সিন্ডিকেটের কারণে আমরা অসহায়। প্রতিদিনই লোকসানে চলছে নগর পরিবহন। বেসরকারি পরিবহনগুলোর দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। দেখি তারা কী ব্যবস্থা নেন?’

এ বিষয়ে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভীন বলেন, ‘রাজধানীর গণপরিবহন শৃঙ্খলায় নিয়ে আসতে বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতায় নগর পরিবহন সেবা চালু হয়েছে। এরই মধ্যে আমরা তিনটি রুটে এ সেবাটি চালু করতে সক্ষম হয়েছি। চলতি মাসের শেষের দিকে আরেকটি রুট চালু করতে পারব বলে আশা করি।’ তিনি বলেন, ‘নগর পরিবহন চালু হওয়া রুটগুলোয় রুট পারমিটবিহীন বাসগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করছি। রুট পারমিটবিহীন বাসগুলো ডাম্পিং করা হচ্ছে।’ প্রসঙ্গত, ২২ নম্বর রুটে অভি মোটরসের ৫০টি নতুন বাস ও ২৬ নম্বর রুটে ২০১৯ সালের পর রেজিস্ট্রেশন করা বিআরটিসির দ্বিতল ৫০টি বাস সেবা চলছে। এর আগে থেকে ২১ নম্বর রুটে নগর পরিবহনের ৫০টি বাস চলছে। এ বাস রুট রেশনালাইজেশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ৯টি ক্লাস্টার (৯টি ভিন্ন ভিন্ন রঙের), ২২টি কোম্পানি ও ৪২টি রুটের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবুজ ক্লাস্টারে বর্তমানে চলমান মোট ৫৪টি রুটকে সমন্বয় করে ৮টি রুটে পরিণত করা হয়েছে, যাদের রুট নম্বর ২১ থেকে ২৮।

সর্বশেষ খবর