লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাডুবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যুর ঘটনায় লঞ্চের সুকানিসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতাররা হলেন- মর্নিংসান-৫ লঞ্চের মাস্টার হাফেজ মো. সাইদুর রহমান, মাস্টার আলামিন, ইঞ্জিন ড্রাইভার মো. মাসুদ রানা ও ইমন হোসেন, সুকানি মো. সালমান ও সুপারভাইজার ইব্রাহীম খলিল। গতকাল ঢাকার মিন্টো রোডে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান। তিনি বলেন, গত ৭ নভেম্বর দুরন্ত বিপ্লব ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানার কোনাখোলা এলাকা থেকে জিনজিরা-সোয়ারিঘাট হয়ে ঢাকায় আসার পথে নিখোঁজ হন। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তে নৌকাডুবিতে তার মৃত্যু হয় বলে আমরা নিশ্চিত হই। ওই ঘটনার পাঁচ দিন পর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসমান অবস্থায় একজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেদিন রাতে মরদেহটি নিখোঁজ দুরন্ত বিপ্লবের বলে নিশ্চিত করেন তার আত্মীয়-স্বজন। নিখোঁজসংক্রান্ত প্রথমে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় জিডি এবং লাশ উদ্ধারের পর পরিবারের পক্ষ থেকে একই থানায় হত্যা মামলা করা হয়। পরে নৌ পুলিশ ও পিবিআই-এর পাশাপাশি ডিবির লালবাগ বিভাগ মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তে তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ঢাকার কেরানীগঞ্জে ধারাবাহিক অভিযানে মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত মর্নিং সান-৫ লঞ্চের ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, দুরন্ত বিপ্লব তার কর্মচারী হেলালকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনার দিন বিকাল ৪টা ৪৪ মিনিটের দিকে কুরিয়ার সার্ভিস বয় গোলাম রাব্বানীর কাছে কিছু সবজির প্যাকেট হস্তান্তর করে। পরে বিকাল ৫টা ৫৫ মিনিটের দিকে নুর ফিলিংয়ের কাছাকাছি রাস্তায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওঠেন। ৩/৪ জন নিয়ে শেয়ারে চলা অটোচালক বিল্লালের ভাষ্যমতে, সন্ধ্যা ৫টা ১৫ থেকে ২০ মিনিটের দিকে তাকে জিনজিরা ঘাটে নামিয়ে দেওয়া হয়। সিসিটিভি ফুটেজ ও ডিজিটাল মুভমেন্ট বিশ্লেষণ করে ডিবি নিশ্চিত হয়, জিনজিরা ঘাট ও কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগের নদীর পাড় এলাকায় বিপ্লবের সর্বশেষ অবস্থান ছিল। সেখানে অবস্থান করেও তিনি কুরিয়ার সার্ভিস বয় গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে সবজির বিষয়ে একাধিকবার কথা বলেছেন। জিনজিরা ঘাট থেকে সোয়ারিঘাটে চলাচলকারী খেয়া নৌকার মাঝি শামসু মিয়ার তথ্য মতে, মাগরিবের আগে বা পরে পাঁচ যাত্রী নিয়ে তার নৌকা মাঝনদীতে এলে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া মর্নিংসান-৫ লঞ্চ তার নৌকাকে ধাক্কা দেয়। এতে নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তলিয়ে যায়। যাত্রীরা পানিতে তলিয়ে গেলে কিছুক্ষণের মধ্যে অন্য নৌকা এসে কয়েকজনকে উদ্ধার করতে পারলেও একজন ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া এ যাত্রীই নিহত দুরন্ত বিপ্লব বলে জানা যায়। ডিবি কর্মকর্তা মশিউর আরও বলেন, বিপ্লব কোনাখোলা নূর পেট্রোল পাম্পের দক্ষিণ দিকে সোনামাটি এগ্রো ফার্মে কিছু ঘাস এবং পোলট্রি ফিডিংয়ের পোকা চাষ করতেন। উচ্চশিক্ষিত সাবেক এ ছাত্রনেতা জীবনযাপনে ছিলেন সাদামাটা, নিরহংকার, বন্ধুবৎসল ও শত্রুহীন। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না যাওয়ায় এ বছরের ১৪ মে থেকে কেরানীগঞ্জের খোলামোড়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। তিনি কাজের ফাঁকে সময় পেলেই কেরানীগঞ্জ থেকে বুড়িগঙ্গা নদী পার হয়ে চলে আসতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। আড্ডা দিতেন টিএসসি, চারুকলা এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।