প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্তস্কুল, আন্তকলেজ, আন্তবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমাদের ছেলেমেয়েরা আরও বিকশিত হচ্ছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এভাবেই তারা এক দিন চূড়ান্ত উৎকর্ষতা অর্জন করে বিশ্বকাপে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হবে। গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসরের সমাপনী ও পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি সশরীরে যোগ দেন। খবর বাসস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে প্রাইমারি থেকে যে খেলাধুলা শুরু হয়েছে সেখান থেকে আন্তবিশ্ববিদ্যালয়, আমি মনে করি, এই প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়েই এক দিন আমরা বিশ্বে খেলাধুলায় উন্নত হতে পারব। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন স্বাগত বক্তৃতা করেন। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ১২টি ইভেন্টের অধীনে দেশের ১২৫টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৮৫০ জন মহিলাসহ প্রায় ৬ হাজার ৯৫০ জন অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার তৃতীয় সংস্করণের আয়োজন করে। ফুটবল, ক্রিকেট, অ্যাথলেটিক্স, ভলিবল, বাস্কেটবল, টেবিল টেনিস এবং ব্যাডমিন্টন, কাবাডি এবং দাবাসহ ১২টি ইভেন্টের অধীনে সেরা পারফরমারদের মধ্যে প্রায় ৭২০টি পদক বিতরণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, যদিও বিশ্বকাপ হচ্ছে (বিশ্বকাপ ফুটবল), আমাদের কোনো অবস্থানই নেই। এটা তাঁর জন্য অনেক কষ্টদায়ক উল্লেখ করে জানান, তিনি বিশ্বকাপের খেলা টেলিভিশনে দেখেন আর ভাবেন কবে, ছেলেমেয়েরা বিশ্ব আসরে খেলবে। তিনি বলেন, আমাদের মেয়েরা সাফ গেমস, এশিয়ান গেমসসহ বিভিন্ন বয়সভিত্তিক ফুটবল টুর্নামেন্টে, ক্রিকেটে পারদর্শিতা দেখাচ্ছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ছেলেরাও এক দিন পারবে। সে জন্য সরকার বিকেএসপির শাখা ৮টি বিভাগে করছে, যাতে সব ইভেন্টে খেলেয়াড়রা উৎকর্ষতা অর্জন করতে পারে। তিনি বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে প্রশিক্ষণের গুরুত্ব অনুধাবন করেই প্রশিক্ষণের জন্য সে সময় জার্মানি, ভারতসহ অন্যান্য দেশে খেলোয়াড় পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনেন। কাজেই তাঁর সরকারও ছেলেমেয়েদের স্পোর্টসের বিভিন্ন শাখায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে এবং খেলাধুলার জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সীমিত সুযোগের মধ্যেও সরকারের এক্ষেত্রে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং সীমিত সুযোগের মধ্যেও আমাদের ছেলেমেয়েরা যথেষ্ট ভালো করছে এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো করবে। তিনি বলেন, ২০১৯ সাল থেকে সরকার এ প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। প্রথমে আন্তপ্রাথমিক বিদ্যালয়, আন্তস্কুল, আন্তকলেজ এবং এখন আন্তবিশ্ববিদ্যালয়, আর এই প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে আমাদের খেলোয়াড়রা বিকশিত হচ্ছে। তারা যতই এর সঙ্গে যুক্ত হবে, ততই আমাদের ভালো হবে। তিনি বলেন, খেলাধুলা ও প্রতিযোগিতা আমাদের যুব সমাজকে পথ দেখায়। শিশু বা কিশোর বয়স থেকে যত বেশি খেলাধুলা করবে তত বেশি মন বড় হবে, শরীর ভালো থাকবে। তা ছাড়া আমি মনে করি, এই যে চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য একের সঙ্গে অপরের যে প্রতিযোগিতা, এই প্রতিযোগিতাই আমাদের যুব সমাজ ও ছেলেমেয়েদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে, নিজেদেরও আত্মশুদ্ধি হবে এবং তারা সুন্দরভাবে বাঁচবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মাদক, জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাস চাই না। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি।
উন্নতিতে এবং প্রগতিতে বিশ্বাস করি। আমি জানি, শিক্ষা-দীক্ষা, খেলাধুলা এবং সংস্কৃতি চর্চার মতো বিষয়গুলোয় সব সময় সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা লাগে, পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এগুলো কখনো বিকশিত হয় না। তিনি জানান, তিনি এমন একটা পরিবারে জন্মেছেন যেটি ক্রীড়া অন্তপ্রাণ পরিবার। তাঁর দাদা ফুটবলার ছিলেন, দাদার ছোট ভাই তিনিও ফুটবলার ছিলেন, বাবা বঙ্গবন্ধুও ফুটবলার ছিলেন। তাঁর দাদা যখন অফিসার্স টিমের ক্যাপ্টেন তখন তাঁর বাবা ছিলেন ছাত্রদের ক্যাপ্টেন। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর কাছেই আমরা শুনেছি একদিকে বাবার টিম অন্যদিকে ছেলের টিমের খেলা হতো। বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে খুব চমৎকারভাবে সে কথা লিখে গেছেন। তাঁর দুই ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামাল স্পোর্টসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁদের সহধর্মিণী সুলতানা কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লু ছিলেন এবং পারভীন জামাল রোজীও স্পোর্টসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। খেলাধুলার পৃষ্ঠপোষকতায় পদক্ষেপ হিসেবে তাঁর সরকার সমগ্র বাংলাদেশের প্রত্যেকটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, জেলায় জেলায়ও স্টেডিয়াম করেছি। খেলাধুলার প্রতিযোগিতায় সব সময় সবাই যেন অংশ নিতে পারে সে লক্ষ্যেই এগুলো করা। দেশের প্রতিবন্ধীরা পর্যন্ত বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে এবং ভালো ফল বয়ে আনছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সব সময় চাই আমাদের ছেলেমেয়েরা একদিকে যেমন লেখাপড়া শিখবে, কারণ, আমি মনে করি, বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা অত্যন্ত মেধাবী, অত্যন্ত গুণী, একটু সুযোগ পেলেই তারা যে অসাধ্য সাধন করতে পারে সেটা আমি বিশ্বাস করি। জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের উদ্ধৃতি ‘কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না’ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি, পারবে না।