বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ভ্রমণের টাকার জন্য প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে খুনের পরিকল্পনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুরান ঢাকার চকবাজারে ছুরিকাঘাতে হাজী মুনসুর আলী (৭৬) নামে একজনকে খুনের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ১৭ নভেম্বর চকবাজার খাজে দেওয়ান লেনে এ ঘটনা ঘটে। ভ্রমণের টাকা জোগাড় করতেই ওই ব্যক্তির নাতনি তার প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে এই খুনের   ঘটনা ঘটান বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, ঘুরতে যাওয়ার জন্য টাকার প্রয়োজন। নানার কাছে ছিল নগদ টাকা। সেই টাকা নেওয়ার জন্য ডাকাতির পরিকল্পনা করে তারই দুই নাতি-নাতনি। পরিকল্পনায় যুক্ত হয় নাতনির প্রেমিকসহ কয়েকজন। চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করে টাকা-পয়সা নেওয়ার পরিকল্পনা করেন তারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী- নকল চাবি দিয়ে দরজা খুলে চকবাজার খাজে দেওয়ান রোডের ফার্স্ট লেনের ছয় তলা ভবনের দোতলায় ডাকাতির জন্য প্রবেশ করেন তারা। হাজী মুনসুর আহম্মেদ তখন বাসায় একাই ছিলেন। বাকি সদস্যরা ছিলেন একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে। গতকাল বেলা ১১টায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম-কমিশনার (ক্রাইম) বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, ঘটনাস্থলে একটি সিরিঞ্জ পাওয়া যায়। এই সিরিঞ্জকে কেন্দ্র করে তদন্ত মোড় নেয়। শুরুতে আমরা দস্যুতাসহ খুনের মামলা নিলেও পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যদের পরিকল্পনায় খুনের প্রমাণ পাই। পরিকল্পনায় নিহতের নাতি-নাতনি জড়িত। নাতনি আনিকা ন্যাশনাল ডেন্টালে পড়েন। তিনি মূল পরিকল্পনাকারী, তার ভাই, তার ছেলেবন্ধু ও অন্যরা পরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাতি করতে গিয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এক মাস আগে পরিকল্পনা হয়। বাসা ফাঁকা থাকার সুযোগ খুঁজছিলেন তারা। এ সুযোগটি আসে ১৭ নভেম্বর রাতে। পরিবারের সদস্যরা চান কমিউনিটি সেন্টারে একটি বিয়ের দাওয়াতে অংশ নিতে যান। আনিকাও সেখানে যান। কমিউনিটি সেন্টার থেকে তদারকি করেন আনিকা। আর বাড়ির আশপাশে থেকে আনিকার প্রেমিক রাজু দেখভালের কাজ করেন। ডাকাতি করতে বাসায় প্রবেশ করেন আনিকার ভাই আলভী, রাজুর ভাই রায়হান এবং সাঈদ। এরপর তারা নানা মুনসুর আহম্মেদকে অচেতন করার জন্য ইনজেকশন দিতে গেলে তিনি বাধা দেন। তখন তাকে মারধর করেন ডাকাতি করতে আসা তরুণেরা। মারধরের একপর্যায়ে মুনসুর আহম্মেদ মারা যান। এরপর ডাকাত দলের সদস্য তরুণরা বাসা থেকে ৯২ হাজার টাকা নিয়ে যান। ঘটনার পর ১৯ নভেম্বর নিহতের ছেলে আসগার আহম্মেদ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় দস্যুতাসহ হত্যার মামলা করেন। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে মুনসুর আহম্মেদ হত্যায় তার পরিবারের সদস্যরা জড়িত। মঙ্গলবার রাতে পুরান ঢাকার বকশিবাজার, চাঁদপুর আর মুন্সীগঞ্জ থেকে মুনসুর আহম্মেদের দুই নাতি ও নাতনির প্রেমিকসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে চকবাজার থানা পুলিশ। তারা হলেন- মুনসুর আহম্মেদের মেয়ের দুই ছেলে-মেয়ে আনিকা তাবাসসুম ও শাহাদাত মুবিন আলভী। তাবাসসুমের প্রেমিক রাজু ও রাজুর ভাই রায়হান এবং তাদের পরিচিত সাঈদ। এদের মধ্যে তিনজন মুনসুরকে ইনজেকশন দেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে বাধা দেন মুনসুর। তখন রায়হান এবং সাঈদ তাকে মারধর করে ঘরে থাকা ৯২ হাজার টাকা নিয়ে যান। টাকাগুলো খুঁজে বের করে দেন আলভী। ওই ঘটনায় আনিকা ও আলভী জড়িত থাকার বিষয়টি পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারলেও তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ডিজিটাল ফরেনসিক, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করা হয়। কার কী দায় রয়েছে তা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারও করেছেন পাঁচজন। যুগ্ম-কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার জানান, ৯২ হাজার টাকা লুট হয়। লুট হওয়া টাকার ৬২ হাজার টাকা আনিকার বাসা থেকে জব্দ করা হয়েছে। তিনি বলেন, পারিবারিক মূল্যবোধ ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে এ হত্যাকান্ড।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর