রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনায় জঙ্গিরা

নির্বাচন সামনে রেখে ছক

সাখাওয়াত কাওসার ও আলী আজম

নির্বাচন সামনে রেখে আরও ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা রয়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি)। আদালতে হামলা চালিয়ে সহযোগীদের ছিনিয়ে নেওয়াকে বড় সফলতা মনে করছে তারা। পরবর্তী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে তাদের আসকারি (সামরিক) শাখায় শতাধিক সদস্য প্রস্তুত রয়েছে। বাইরে থাকা আসকারি শাখার নেতাদের সঙ্গে কারাগারের জঙ্গি সদস্যদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। নিজেদের অস্তিত্বের জানান ও সক্ষমতা দেখানোর জন্য তারা আদালতে হামলা চালিয়ে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়। এরপর তাদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা হলে অমি নামে এক জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়।

অমিসহ রিমান্ডে থাকা আরও ১০ জঙ্গি সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পেয়েছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। এমন তথ্য পেয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। পাশাপাশি রিমান্ডে ১১ জনকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার চেষ্টা চলছে। রিমান্ডে নেওয়া জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আনসার আল ইসলামের আসকারি শাখার সদস্যরা নতুন করে সংগঠিত হয়ে দেশে আরও হামলার পরিকল্পনা করছেন। তাদের সঙ্গে অপর নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীরের যোগাযোগ রয়েছে। এদের গ্রেফতার করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

সিটিটিসি সূত্র বলছে, দীর্ঘ পরিকল্পনার পর আদালত থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা মনে করছেন না তারা। গত এক বছর ধরে নিজেদের প্রশিক্ষিত ও পুরনো সদস্যদের একত্রিত করেছে তারা। এরপর কারাগার থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে মাঠপর্যায়ে সক্রিয় থাকার ম্যাসেজ দিতে চেয়েছে তারা। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে বড় কোনো জঙ্গি কার্যক্রম করার জন্য চেষ্টায় ছিল সংগঠনটি। সেই চেষ্টা সফল হওয়ায় ফের তারা হামলা চালাতে পারে বলেও তথ্য দিয়েছেন রিমান্ডের আসামিরা। আদালত থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করেন অমি। বাইরে থেকে সমন্বয় করছিলেন আসকারি শাখার গুরুত্বপূর্ণ নেতারা।

অমি জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, আদালত থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা সফল হওয়ায় তাদের সহযোগীরা এখন আরও সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করবে। এতে পরবর্তী হামলাও সফল হবে। যেহেতু হামলায় সফল হয়েছে তারা, তাই তাদের সহযোগীরা এখন আরও সংগঠিত। তবে সিটিটিসি বলছে, শুধু এবিটি নয়, সব জঙ্গি সংগঠনের বিষয়ে তারা এখন আরও সতর্ক। আদালতের ঘটনার পর আরও নড়েচড়ে বসেছে তারা। জঙ্গিদের সব পরিকল্পনা নস্যাৎ করার জন্য তারা কাজ করছে। সংগঠনের অধিকাংশ সদস্য বিভিন্ন মামলায় কারাগারে বন্দি রয়েছেন। গত কয়েক বছর ধরে তাদের ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা ছিল তাদের। হামলার পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে কারাগার থেকে সদস্যদের জামিনে বের করে নিয়ে আসার কাজ করছে তারা। সিটিটিসি সূত্র জানিয়েছে, এবিটি তাদের সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে পুরনো ও প্রশিক্ষিত সদস্যদের পাশাপাশি অনলাইন প্লাটফরম ব্যবহার করে নতুন সদস্য সংগ্রহেও তৎপর রয়েছে। তারা নানা ধরনের ‘এনক্রিপটেড অ্যাপ’ ব্যবহার করে নতুন সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ ও বিভিন্ন ধরনের বৈঠক করে আসছে। বর্তমানে তারা আদর্শগত মতবাদ ছড়ানো ও সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতেই মূলত অনলাইন মাধ্যমকে বেছে নিয়েছে। এবিটি সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সমান তালে অর্থ সংগ্রহের দিকেও বেশ মনোযোগী। দেশ ও দেশের বাইরে নামে-বেনামে বিভিন্নভাবে অর্থ সংগ্রহ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। তারা অত্যন্ত গোপনে অর্থ সংগ্রহ করছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও তাদের অর্থ সংগ্রহের কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া এবিটির বেতনভুক অনেক সদস্য আছেন যারা প্রতি মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সংগঠনের হাতে তুলে দেন। গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে সিটিটিসি কর্মকর্তা বলেন, এবিটির অনেক সদস্য কারাগারে রয়েছে। বর্তমানে কারাগারের এমন অবস্থা যে, টাকা দিলে জঙ্গিরা সারা রাত নিজেদের সেলে ফোন ব্যবহার করতে পারছে। সেখানে বসেই তাদের যাবতীয় পরিকল্পনা হয়। গত ২০ নভেম্বর দুপুরে দুই জঙ্গিকে একটি মামলায় আদালতে হাজির করা হয়। হাজিরা শেষে পুলিশ সদস্যরা তাদের নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশের চোখে-মুখে স্প্রে করে জঙ্গি সদস্য মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এই দুই জঙ্গি দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি। যে মামলায় হাজিরা দিতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিরা আদালতে এসেছিল, সেই মামলার মেহেদী হাসান অমিও একজন আসামি। জামিন পাওয়ার পর থেকে নিয়মিতভাবে সে হাজিরা দিত। প্রতি তারিখেই হাজিরা দিতে আসায় কারাগারে থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে কথাবার্তা হতো তার। এর বাইরে কারাগারে থাকা জঙ্গিদের বাইরের মেসেজ আদান-প্রদান করত অমি। সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জামিন পাওয়ার পর নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত মেহেদী হাসান অমি। অমি একসময় আনসার আল ইসলামের দাওয়াহ বিভাগের প্রধান ছিল।

এ কারণে সংগঠনে তার প্রতি কোনোভাবেই বিশ্বাসের চিড় ধরেনি। জঙ্গিরা অত্যাধুনিক এনক্রিপ্টেড অ্যাপ ব্যবহার করে। সম্প্রতি জঙ্গি সম্পৃক্ততায় দুজন চিকিৎসককে গ্রেফতার করা হয়। রোগী দেখার মধ্যেই তারা গোপনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

সর্বশেষ খবর