মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ইয়াবার নতুন ট্রানজিট আনোয়ারা

ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করছেন নিম্ন আয়ের মানুষ

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

ইয়াবার নতুন ট্রানজিট আনোয়ারা

ইয়াবার নতুন ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা। পুরনো রুটে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর তৎপরতা বাড়ায় মাদক মাফিয়ারা মিয়ানমার থেকে সরাসরি ইয়াবার চালান নিয়ে আসছে এ উপজেলার উপকূলীয় এলাকায়। পরে তা পাচার হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। ইয়াবার নতুন ট্রানজিট পয়েন্টের বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসার পর নড়েচড়ে বসেছে চট্টগ্রামের প্রশাসন।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ীরা ইয়াবা পাচারের নতুন রুট হিসেবে আনোয়ারার উপকূলকে ব্যবহার করছে এ তথ্য আমাদের কাছেও রয়েছে। নৌপথে সরাসরি টেকনাফ থেকে আনোয়ারায় ইয়াবার চালান নিয়ে আসছে এমন তথ্য পাওয়ার পর ওই এলাকায় গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই এলাকায় অভিযান চালানো হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বলেন, ‘ওই এলাকাগুলোতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান সব সময় কঠোর। যেই ইয়াবা পাচারের সঙ্গে যুক্ত হবে, তাকে গ্রেফতারের আওতায় আনা হবে।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, ইয়াবা পাচারের ট্রানজিট পয়েন্ট কক্সবাজারের টেকনাফ এবং পুরনো রুটগুলোতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তৎপরতা বৃদ্ধি করায় পাচারের জন্য নতুন রুট তৈরি করেছে মাদক মাফিয়ারা। তৈরি করেছে নতুন ট্রানজিট পয়েন্ট। মাফিয়ারা মাদকের রাজধানী খ্যাত মিয়ানমারের সান রাজ্য থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে আসে তুয়াঙ্গি-ইয়াঙ্গুন নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশি জল সীমানায়। তারপর সাগরেই দুই থেকে তিন দফা হাত বদল হয় ইয়াবার চালান। পরে মাছের ট্রলারে ইয়াবার চালান নিয়ে আসা হয় বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় উপজেলা চট্টগ্রামের আনোয়ারায়। এ উপজেলার উপকূলের কমপক্ষে ১০টি পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবার চালান প্রবেশ করে চট্টগ্রামে। এ পয়েন্টগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গহিরা ইউনিয়নের রায়পুর ও প্যারাবন এলাকা। বরুমচড়া ইউনিয়নের ভরাচর এবং জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নের কমপক্ষে তিনটি পয়েন্ট নিয়ে প্রবেশ করে ইয়াবার চালান। এ ছাড়া বাঁশখালী হয়েও স্থল পথে আসছে ইয়াবা চালান। পরে তা নগরীর কর্ণফুলী নদীর ১২ নম্বর ঘাট, ১৫ নম্বর ঘাট, মাতব্বরঘাট, ডাঙারচর সল্টগোলা ক্রসিং, অভয়মিত্র ঘাট এবং সড়ক পথে চট্টগ্রাম নগরী হয়ে ইয়াবার চালান চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। আনোয়ারা উপজেলাকে ইয়াবার ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত করার নেপথ্যে রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত কমপক্ষে ১০ ইয়াবা ব্যবসায়ী। যাদের কেউ কেউ আবার কক্সবাজারের টেকনাফের বাসিন্দা। তাদের এ কাজে সহযোগী হিসেবে রয়েছেন আনোয়ারা উপজেলার কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা। ইয়াবার ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করছেন রিকশাচালক, সিএনজি ট্যাক্সিচালক ও দিন মজুরসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রায়পুর ইউনিয়নের কয়েকজন অধিবাসী বলেন, ‘এক সময় টেকনাফকে ইয়াবার স্বর্গরাজ্য বলা হতো। এখন আনোয়ারা টেকনাফকেও ছাড়িয়ে গেছে। এ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ইয়াবা ব্যবসায় যুক্ত হয়ে পড়েছেন। ইয়াবা পাচার রোধ এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে টেকনাফের চেয়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি বরণ করবে আনোয়ারা উপজেলা।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর