শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ফারদিন মৃত্যু রহস্যে নতুন মোড়

আত্মহত্যা করেছেন : ডিবি । আত্মহত্যা করতে পারে না : বাবা আমরা আশ্বস্ত তবে তদন্তে গ্যাপ রয়েছে : বুয়েট শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফারদিন মৃত্যু রহস্যে নতুন মোড়

বুয়েটের শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পক্ষ থেকে আত্মহত্যা বলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ফারদিনের সহপাঠীদের কাছে বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়। তারা এটা মানতে নারাজ। তাই প্রকৃত ঘটনা জানতে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ডিবি কার্যালয় আসেন বুয়েটের প্রায় ৪০ শিক্ষার্থী। তিন ঘণ্টা অবস্থান করে তারা ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যান।

এ সময় তারা বলেন, ‘ডিবির পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়েছে। তদন্তে ডিবি আত্মহত্যার বিষয়টি পেয়েছে এটি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছে। অনেক বিষয় আমাদের সামনে তুলে ধরেছে। আমরাও অনেক বিষয় জেনেছি। তবে আমাদের মনে হয়েছে, কিছু বিষয়ে গ্যাপ রয়েছে। আমরা মনে করি ভবিষ্যতে কর্মকর্তারা তদন্ত করে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হবেন। কর্মকর্তারা আমাদের জানিয়েছেন, তারা এখনো কাজ করছেন। আমাদের কাছে যেসব পয়েন্ট মনে হয়েছে, আমরা সেসব বিষয়ে কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। ডিবি কর্মকর্তাদের বক্তব্য আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। তাদের তদন্তের ধরন ও এফোর্ড সম্পর্কে কিছু গ্যাপ রয়েছে, কিছু অস্পটতা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে আরও পরিষ্কার হওয়া দরকার।’ সহপাঠীরা বলেন, ‘ফারদিনকে ব্রিজ থেকে নামিয়ে দেওয়ার পর তার সঙ্গে কে ছিল, সে একেবারে একা ছিল কি না, এসব বিষয় সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি ডিবি কর্মকর্তারা। তবে তারা আমাদের জানিয়েছেন, লেগুনাচালক তাদের জানিয়েছেন দুজনকে নামানো হয়েছিল। তার সঙ্গে আরেকজনকে নেমেছিল। সে বিষয়গুলো ডিবি তদন্ত করে দেখবে। এ বিষয়টি ছাড়া আর যেসব বিষয়ে আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন তারা, সেগুলো মনে হয়েছে কংক্রিট এভিডেন্স। ডিবির কার্যকলাপে আমরা অনেকটাই আশ্বস্ত। পুরোপুরি তদন্ত তো এখনো শেষ হয়নি। এখনো চার্জশিট দেওয়া হয়নি। উনারা এখন পর্যন্ত অনেক কাজ করেছেন। সে জন্য আমরা কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানাই।’

ফারদিন আত্মহত্যা করতে পারে না : বাবা

বুয়েটছাত্র ফারদিনের আত্মহত্যা নিয়ে পুলিশ ও র‌্যাব যে বক্তব্য দিয়েছে সেটি প্রত্যাখ্যান করেছেন তার বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানা। তার দাবি, ফারদিন আত্মহত্যা করতে পারেন না। আত্মহত্যার নাটক সাজানো হচ্ছে। তিনি তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন। গতকাল তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি নারাজি দেব, ১০০ বার নারাজি দেব। আমার ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না।’ এর আগে বুধবার বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিনের মৃত্যুর ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করে ডিবি। সংবাদ সম্মেলনে ফারদিনের আত্মহত্যার পেছনের কিছু কারণের কথাও উল্লেখ করেন ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। ডিবির বক্তব্যের পর গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানা।

ফারদিনকে হত্যার প্রমাণ পাওয়া যায়নি : ডিবিপ্রধান

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, বুয়েটশিক্ষার্থী ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন। তাকে হত্যা করার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফারদিন তার বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আত্মহত্যার ইঙ্গিত দিতেন। এমনকি তিনি পরিবার দ্বারা সীমাবদ্ধ ছিলেন, যা তিনি চাইতেন না। গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে বুয়েটের শিক্ষার্থী এবং তার বাবার সঙ্গে ফারদিনের মৃত্যুর তদন্তের বিষয়ে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের ডিবিপ্রধান এসব কথা বলেন।

হারুন বলেন, ‘ডিবি ৩৮ দিন ধরে মামলাটি তদন্ত করছে। আমরা আগেও বলেছি, তার (ফারদিন) স্বাস্থ্যের কথা, মানসিক অবস্থার কথা। তিনি একা একা ঘুরে বেড়িয়েছেন। কোথাও কোনো জায়গায় তার সঙ্গে কেউ ছিল না। তিনি রাত ১০টা-১১টার দিকে একবার অ্যাটেম নিয়েছিলেন বাবুবাজার ব্রিজে। কিন্তু সেখানে ওই সময় অনেক লোকজন থাকায় তিনি ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। আবার তিনি নিজের সঙ্গে নিজেই কথা বলে জনসন রোড, সেখান থেকে গুলিস্তান, সেখান থেকে যাত্রাবাড়ী গেলেন। যাত্রাবাড়ী থেকে লেগুনায় করে রাত ২টা ৩৪ মিনিটে সুলতানা কামাল ব্রিজে যান ফারদিন।’

ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, ‘বুধবার সংবাদ সম্মেলন করার পর আজ (গতকাল) ডিবিতে বুয়েটের প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী আসেন। কীভাবে আত্মহত্যা করেছেন ফারদিন, তারা আমাদের কাছ থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় নিয়ে কথা বলেছেন। আমরা তাদের পুরো বিষয়টি বুঝিয়েছি। তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনকেও আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে বুঝিয়েছি। বুশরাকে ফারদিন নামিয়ে দিয়ে রাত সাড়ে ৯টা থেকে একা একা ঘুরে বেড়িয়েছেন। এমনকি ফারদিন গত দুই বছরে ৫২২টি নম্বরে কথা বলেছেন। আমরা সবার সঙ্গেই কথা বলেছি।’ তিনি বলেন, ‘‘ফারদিন উপন্যাস পড়তেন, আলবার্ট ফেমো ও নিটসের বই পড়তেন। সেখানে তিনি পরিবার, জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার এক বান্ধবীকে বলেছিলেন, ‘৩০ বছরের বেশি কারও বাঁচার এখতিয়ার হওয়া উচিত নয়।’ আবার আরেক কথা বলেছেন, ‘আমি যদি মারা যাই, বন্ধু সাজ্জাদ সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবে।’ আরেক জায়গায় তার বন্ধুকে বলেছেন, ‘এক শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবা হয়তোবা কেউ...।’ আত্মহত্যার কথা বলেছেন। এবং শুক্রবারই কিন্তু তিনি আত্মহত্যা করেছেন।” বুশরার বিষয়ে ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, ‘বুশরাকে নামিয়ে দেওয়ার পর বুশরার সঙ্গে তার এমন কোনো কথা হয়নি। শুধু একবার বুশরা জানতে চেয়েছেন, ফারদিন বাসায় ঠিকমতো গেছেন কি না। উত্তরে ফারদিন শুধু ইয়েস বলেছেন। স্বাভাবিকভাবে বুশরার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তার মুক্তির বিষয়টি আদালতের। আমরা (ডিবি) প্রতিবেদনে জানিয়ে দেব, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।’

সর্বশেষ খবর