শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বাজার নিয়ন্ত্রণে নতুন কর্মসূচি

রোজার আগেই চাল পাচ্ছে আরও ৩০ লাখ পরিবার

উবায়দুল্লাহ বাদল

দেশে আমনের ভরা মৌসুমেও বাড়ছে চালের দাম। রাজধানীর খুচরা বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে মানভেদে প্রতি কেজি চালে ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অথচ দেশের ধান-চালের বড় বড় মোকাম ও হাট-বাজারে এখন নতুন আমন ধানের প্রচুর সরবরাহ। এমন পরিস্থিতিতে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাদ্য নিরাপত্তা-সংক্রান্ত চলমান কর্মসূচির বাইরে নতুন বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করতে যাচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এই কর্মসূচির আওতায় সরকারি সহায়তা বঞ্চিত দেশের আরও ৩০ লাখ পরিবারকে চাল দেওয়া হবে। পাশাপাশি আমনের ভরা মৌসুমেও (ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) ওএমএস কর্মসূচি চলবে। সাধারণত এই তিন মাস ওএমএস কর্মসূচি বন্ধ রাখা হয়।

করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে দেশে প্রথমবারের মতো এই তিন মাস ওএমএস চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদ্যসচিব মো. ইসমাইল হোসেন নিজ দফতরে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা মহামারি সরকার সফলভাবে মোকাবিলা করেছে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের সব দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ এর বাইরে নয়।

নানা কারণেই খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে। দেশে আমনের ভরা মৌসুমেও কমছে না চালের দাম। স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট কমাতে খাদ্য নিরাপত্তা-সংক্রান্ত সব কর্মসূচি চলমান রাখা হয়েছে। এসব কর্মসূচির বাইরে থাকা সরকারি সহায়তা বঞ্চিত মানুষের কথা চিন্তা করে নতুন বিশেষ কর্মসূচি চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আওতায় দেশের আরও ৩০ লাখ পরিবারকে আগামী রোজার আগেই চাল সহায়তা দেওয়া হবে। তবে নতুন কর্মসূচি, নাকি ওএমএস কর্মসূচির মাধ্যমে এ সহায়তা দেওয়া হবে- তা অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের আর কী উদ্যোগ রয়েছে- জানতে চাইলে খাদ্যসচিব ইসমাইল হোসেন বলেন, সাধারণত আমন, বোরো ও আউশ মৌসুমে সরকারের ওএমএস কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। কারণ ওই সময় বাজারে নতুন চাল আসায় দাম কম থাকে। বৈশ্বিক মন্দার কারণে এ বছর পরিস্থিতি ভিন্ন। তাই স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা চিন্তা করে আমনের ভরা মৌসুমেও (ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) ওএমএস কর্মসূচি চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অতীতে কখনই এই তিন মাসে ওএমএস কর্মসূচি চালু রাখা হয়নি। এ ছাড়া ঈদুল ফিতরের আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সারা দেশের ১ কোটি পরিবারকে ‘ফ্যামিলি কার্ড’-এর মাধ্যমে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। জানা গেছে, সারা দেশে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিদিনই হাট-বাজারগুলোতে ধান-চালের এ সরবরাহ বাড়ছে। এর পরও বাজারে চালের দাম কমছে না।

চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে পরিবহন খরচ অনেক বেড়েছে। আগে মোকাম থেকে চাল আনতে যে ট্রাক ভাড়া ছিল ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা, এখন তা নেওয়া হচ্ছে ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এই বাড়তি ভাড়া চালের দামের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এ ছাড়া ডিজেলের পাশাপাশি সব ধরনের সারের মূল্য বৃদ্ধির ফলে ধানের উৎপাদন খরচ অনেকটা বেড়ে গেছে। এর ফলে গত বছরের চেয়ে এবার মণপ্রতি ধানের দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি। এর প্রভাবও স্বাভাবিকভাবেই চালের দামের ওপর পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সারা বিশ্বে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা ও সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেছে, যুদ্ধের ফলে ক্ষুধা এখন সারা বিশ্বকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। বাইরে থেকে সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে আগামী বছর ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলা করতে হবে এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশকে। এসব দেশের তালিকায় নাম রয়েছে বাংলাদেশেরও। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও ২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করে দেশের মানুষকে সচেতন করেছেন। অসাধু ব্যবসায়ী চক্র আগেভাগেই ব্যাপকভাবে ধান-চাল কিনে মজুদ করছে। এর প্রভাবেও চালের বাজার ভরা মৌসুমে অস্থির হয়ে উঠেছে।

রাজধানীর খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি নাজিরশাইল/মিনিকেট ৭২ থেকে ৮০ টাকা, পাইজাম/লতা ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং ইরি/স্বর্ণা ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। অথচ এক দিন আগে নাজিরশাইল/মিনিকেট ৫৬ থেকে ৬৮ টাকা, পাইজাম/লতা ৪৮ থেকে ৫৬ টাকা ও ইরি/স্বর্ণা ৪৪ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) গতকাল তাদের নিত্যপণ্যের বাজারদরের প্রতিবেদনে চালের দাম বাড়ার এ তথ্য জানিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এসব উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার।

সর্বশেষ খবর