জুলাইয়ে চালু কনটেইনার টার্মিনাল

আগামী বছরের জুলাইয়ে চালু হতে পারে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল। কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মনোনীত সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের (আরএসজিটি) একটি প্রতিনিধি দল চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিদর্শন করেছে। এ ছাড়া বৈঠক করেছে টার্মিনাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। বৈঠকসূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল চালু হলে দীর্ঘ ১৫ বছর পর নতুন টার্মিনাল পাবে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর। নতুন টার্মিনালে একসঙ্গে তিনটি কনটেইনার জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানো যাবে। এ ছাড়া ডলফিন জেটিতে তেলবাহী জাহাজ থেকে সরাসরি খালাস করা যাবে তেল। টার্মিনাল-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আরএসজিটির একটি প্রতিনিধি দল ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে টার্মিনাল               পরিদর্শন করেছে। কার্যক্রম পরিচালনার জন্য টার্মিনালে বিনিয়োগ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেতে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, নৌপরিবহন সচিব মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (সিপিএ) চেয়ারম্যান এম শাহজাহান, পিপিপিএর নির্বাহী পরিচালক মো. মুশফিকুর রহমানসহ অন্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। আগামী বছর জুলাইয়ে চালুর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে নৌপরিবহন সচিব মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, টার্মিনালের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের তালিকা এবং বিনিয়োগ মূল্যায়ন করতে আরএসজিটি পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিদর্শন করেছে। বৈঠকসূত্র জানান, সরকার-টু-সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটির (পিপিপিএ) অধীনে ২৪ কোটি ডলার বিনিয়োগে নির্মিত টার্মিনালটি আরএসজিটিকে পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে গত জুলাইয়ে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বৈঠকে সৌদি আরবের আরএসজিটির কাছে বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনা ও আইএফসির কাছে লেনদেন নিষ্পত্তির বিষয়ে একটি প্রতিবেদন চেয়েছে পিপিপিএ। কর্মকর্তাদের মতে, চলতি বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি অনলাইন প্ল্যাটফরমে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-সৌদি আরবের প্রথম বৈঠকে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য জেদ্দা ইসলামিক বন্দরকে অপারেটর হিসেবে মনোনীত করা হয়। প্রাথমিকভাবে মনোনীত জেদ্দা ইসলামিক বন্দরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেনস ফ্লোইর নেতৃত্বে আরএসজিটি প্রতিনিধি দলের এটি প্রথম সফর। এর আগে চলতি বছর ১৮ আগস্ট এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার খবর দিয়েছিল আরএসজিটি। নৌপরিবহন সচিব মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল আরও বলেন, রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের সঙ্গে লেনদেনের জন্য বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনকে (আইএফসি) লেনদেন উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উভয় দেশ যাতে সমানভাবে লাভবান হয় সে বিষয়ে আইএফসির কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেছে আরএসজিটি। এজন্য একটি ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করছে আইএফসি। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ৩২ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে বছরে প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। ১ হাজার ২২৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম বন্দর। ৩২ একর জায়গায় নির্মিত পিসিটিতে বছরে প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। পিসিটিতে তিনটি কনটেইনার ও একটি তেল খালাসের (ডলফিন) জেটি থাকছে। একসঙ্গে ভেড়ানো যাবে চারটি জাহাজ। সমুদ্রপথে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯২ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়। বর্তমানে এ বন্দরে জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি), চট্টগ্রাম কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ও নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) নামে তিনটি টার্মিনালে ১৯টি জেটি রয়েছে। পতেঙ্গা টার্মিনাল চালু হলে জেটির সংখ্যা দাঁড়াবে ২৩টিতে। বর্তমানে বন্দরে সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফট ও ১৯০ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভিড়তে পারে। পিসিটিতে সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজও ভিড়তে পারবে।