সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ছাদ থেকে পড়ে রহস্যজনক মৃত্যু মা ও শিশুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর ডেমরায় পাঁচ তলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মোছা. হালিমা (২২) ও তার শিশুসন্তান সাদমানের (১৪ মাস) মৃত্যু হয়েছে। তবে এ মৃত্যু নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল ভোরে পশ্চিম সানারপাড় দারুস সালাম মসজিদ সংলগ্ন তাজুল ইসলামের পাঁচ তলা ভবনে এ ঘটনা ঘটে। তারা ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া। এদিকে, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করে ডেমরা থানা পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থলেই হালিমার মৃত্যু হলেও শিশু সাদমানকে তার চাচা কবির হোসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে তার মৃত্যু হয়। মা ও ছেলের মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় হালিমার স্বামী মো. শাহিনুর রহমানকে আটক করেছে পুলিশ। হালিমার বাবার নাম আবদুল ওহাব। তার গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ থানার শ্রীখাতায়। শাহিনুর একই এলাকার বুলিয়ারহাট গ্রামের জেহের উদ্দিনের ছেলে। তিনি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে একটি সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। মৃতের বড় বোন রাহেনা ও ভাই আবু সাঈদ বলেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে আমার বোন ও ভাগিনাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে শাহিনুর। হত্যার পর লাশ বাড়ির পাশের জমির ডোবায় ফেলে রেখে ছাদ থেকে পড়ে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে শাহিনুর ও তার পরিবার। গত তিন বছর আগে ভগ্নিপতি শাহিনুর তার প্রথম বিয়ে ও সন্তানের কথা গোপন করে আমার বোনকে বিয়ে করে। আমার ভাগিনা সাদমানের জন্মের ছয় মাস পর বিষয়টি জানতে পারলে হালিমার ওপর প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাত শাহিনুর। গত রমজানের ঈদের পর রাগ করে হালিমা গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। পরে তার শাশুড়ি গ্রাম থেকে বুঝিয়ে হালিমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসলেও নির্যাতন চালাত শাহিনুর। এ বিষয়ে গত তিন মাস আগেও ডেমরা থানায় শাহিনুরের নির্যাতনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন হালিমা। শাহিনুরের সঙ্গে তাদের পারিবারিক আত্মীয় অন্য এক মহিলার সম্পর্ক থাকার কারণে প্রায়ই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বাগবিতন্ডা হতো। রবিবারও পারিবারিক কলহের জের ধরেই আমার বোনকে হত্যা করার সময় ভাগিনার মাথায় আঘাত লেগেছে বলে ধারণা করছি। আমার বোনের মৃত্যু হলে ভাগিনাসহ ভবনের পাশের ডোবা জমিতে লাশ ফেলে রেখে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে শাহিনুর ও তার পরিবার।

স্থানীয়রা জানায়, হালিমা যদি পাঁচতলা ভবনের ছাদ থেকে তার শিশু ছেলেসহ লাফিয়ে পড়ত তাহলে তাদের দেহ ক্ষতবিক্ষত হয়ে ডোবার নিচে চলে যেত। কিন্তু লাশ পাশের জমির ডোবায় থাকা ময়লার ওপরে পড়েছিল। এতে স্পষ্ট বুঝা যায় হালিমা ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েনি। এ বিষয়ে ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে হালিমার লাশ উদ্ধার করি। দুপুরের দিকে তার ছেলে সাদমানের লাশ নিজের ভাশুর কবির হোসেন থানায় নিয়ে আসেন। এটি হত্যা না আত্মহত্যা বিষয়টি ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বেরিয়ে আসবে। আত্মহত্যায় প্ররোচনায় অভিযোগে নিহতের বড় বোন রাহেনা বাদী হয়ে ডেমরা থানায় একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় নিহত হালিমার স্বামী শাহিনুরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর