এবারও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেরেছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। বিগত ২০১৭ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ হেরেছিল। এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীসহ সাত প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।
সরকারদলীয় এই প্রার্থীর হারের কারণ খুঁজতে গিয়ে নানা সমীকরণ উঠে এসেছে। কেউ বলছেন, প্রার্থী নির্ধারণ ঠিক হয়নি। আবার কেউ বলছেন, যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তারা শেষ মুহূর্তে গা ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ বলছেন, বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় হেরেছে। আবার কেউ বলছেন, এই অঞ্চলে লাঙ্গলের জনপ্রিয়তাই হারার মূল কারণ। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদটি হাতছাড়া হওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ও ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্র থেকে প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল ছিল। অ্যাডভোকেট ডালিয়াকে মনোনয়ন না দিয়ে তরুণ কাউকে মনোনয়ন দিলে বিজয়ের সম্ভাবনা ছিল। প্রার্থী বাছাই ঠিক হলে রসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতত। এক ভোটার বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী যে ভোট পেয়েছেন এটা অনেক বেশি। কারণ আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নিজস্ব কোনো ভোট ছিল না, যা ভোট পেয়েছেন তা নৌকাপ্রেমিকদের কারণে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, নীতিগতভাবে আওয়ামী লীগের বিপক্ষ ধারার রাজনীতির কারণে হার হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত ভোটে অংশগ্রহণ না করলেও নৌকা মার্কা হারার পিছনে তাদের একটি ভূমিকা ছিল। তারাই জাতীয় পার্টিকে সমর্থন দিয়ে নৌকা প্রতীককে হারিয়ে দেওয়ার পিছনে কাজ করেছে।
এ ছাড়া রসিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগের যেসব মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে থেকে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে জানান দিয়েছিলেন, মনোনয়ন না পাওয়ায় ভিতরে ভিতরে তারা ক্ষুব্ধ ছিলেন। মৌখিকভাবে ডালিয়াকে সমর্থন দিলেও অন্তর থেকে কেউ সর্মথন দেননি। ফলে ভোট যুদ্ধের সময় তারা মাঠে কর্মী নামাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন নির্বাচন করায় দলের একটি অংশ নীরব এবং সরব সমর্থন দিয়েছে মিলনকে। অনেক নেতা-কর্মী মিলনের পক্ষে কাজ করেছেন।
এ ছাড়া অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী নেতা-কর্মীদের পিছনে টাকা খরচ করেননি। জাতীয় পার্টি যেমন ঐক্যবদ্ধ ছিল, সেই ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। আবার কেউ বলছেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন তাই রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে গুরুত্ব না দিয়ে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
সরকারদলীয় প্রার্থী ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়ার চেয়ে জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা লাঙ্গল ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৫৯ ভোট বেশি পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়াল হাতপাখা মার্কা পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন। তিনি হাতি প্রতীকে পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৮৮৩ ভোট। ভোট ব্যবধানে চতুর্থ অবস্থানে থাকা আওয়াামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২২ হাজার ৩০৬ ভোট। এ ছাড়া বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির প্রার্থী আবু রায়হান ডাব প্রতীকে ১০ হাজার ৫৪৯ ভোট, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন গোলাপ ফুল প্রতীকে ৫ হাজার ৮০৯, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের শফিয়ার রহমান মশাল প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ১৫৬ ভোট। খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মন্ডল রাজু দেওয়াল ঘড়ি প্রতীকে ২ হাজার ৮৬৪ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান বনি হরিণ প্রতীকে ২ হাজার ৬৭৯ ভোট পেয়েছেন। নির্বাচনের বিধি মোতাবেক প্রদানকৃত ভোটের ৮ ভাগের এক ভাগ ভোট না পাওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীসহ সাত প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। বৈধ ভোটের সংখ্যা ২ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩৬ এবং বাতিল হয়েছে ১ হাজার ৩৬ ভোট, যা মোট ভোটের ৬৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ।