শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
নিষেধাজ্ঞা, ডলার ও এলসি সংকটের জের

বিলাসী পণ্য আমদানি কমেছে ভোগ্যপণ্যের গতি স্বাভাবিক

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

বিলাসী পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা, ডলার সংকট এবং ব্যবসায়ীরা প্রত্যাশিত এলসি খুলতে না পারার প্রভাব পড়েছে পণ্য আমদানিতে। ফলে গত আগস্ট থেকে দেশের পণ্য আমদানির গ্রাফ হচ্ছে নিম্নমুখী। ব্যবসায়ীদের দাবি, পণ্য আমদানি নিম্নমুখী হলেও তার কোনো প্রভাব পড়ছে না ভোগ্যপণ্যের বাজারে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম চৌধুরী বলেন, বিলাসী পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা এবং ব্যবসায়ীরা প্রত্যাশিত এলসি খুলতে না পারার প্রভাব পড়েছে পণ্য আমদানিতে। ফলে দেশে অন্য সময়ের চেয়ে কম আমদানি হচ্ছে। আমদানি কম হলেও ভোগ্যপণ্যের বাজারে তা কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ সরকার ভোগ্যপণ্যে আমদানি চেইন স্বাভাবিক রেখেছে। 

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘করোনা প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে ভালোই গতি পেয়েছিল পণ্য আমদানি। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের নতুন রেকর্ড করেছে। কিন্তু আগস্টে থেকে নিম্নমুখী হচ্ছিল কনটেইনার হ্যান্ডলিং। মূলত বৈশি^ক অর্থনৈতিক সংকট, বিলাসী পণ্য আমদানি নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে আমদানিতে।’

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, করোনা প্রাদুর্ভাব পরবর্তী বৈশি^ক অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার আগেই চলতি বছরের শুরুতে শুরু হয় রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। তার ওপর নতুন করে যুক্ত হয়েছে বৈশি^ক অর্থনৈতিক সংকট। এ ছাড়া দেশে ডলার সংকট থাকার কারণে আমদানিকারকরা প্রত্যাশিত আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারেননি।

ডলার সংকটের কারণে বিলাসী পণ্য আমদানিতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা তো রয়েছেই। এসব কারণে দেশের পণ্য আমদানির গ্রাফ গত আগস্ট নিম্নমুখী হতে থাকে। যা বর্তমানেও চলমান রয়েছে। আমদানি কম হওয়ায় নিম্নমুখী হতে থাকে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণও।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে সাড়ে ৩১ লাখ টিইইউএস, যা গত বছর ছিল ৩২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৮ টিইইউএস। অথচ এ বছরের শুরু থেকেই ঊর্ধ্বমুখী ছিল চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ। আগস্টে এসে ধাক্কা খায় আমদানিতে। বছরের শুরুতে জানুয়ারিতে ২ লাখ ৯১ হাজার ৮৯৩ টিইইউস হ্যান্ডলিং হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ২ লাখ ৫৮ হাজার ১৩১ টিইইউএস, মার্চে ২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৩৯ টিইইউএস, এপ্রিলে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৯৬০ টিইইউএস, মে মাসে ২ লাখ ৭৭ হাজার ১৯১ টিইইউএস, জুনে ২ লাখ ৭৮ হাজার ১৫ টিইইউএস, জুলাইয়ে ২ লাখ ৬৩ হাজার ৯৩৪ টিইইউএস, আগস্টে ২ লাখ ৭১ হাজার টিইইউএস, সেপ্টেম্বরে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৫৪ টিইইউএস, অক্টোবরে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৪৬৫ টিইইউএস এবং নভেম্বরে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৮৪৮ টিইইউস হ্যান্ডলিং হয়। অথচ গত সাত বছর ধরেই কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের একের পর এক রেকর্ড গড়ছিল চট্টগ্রাম বন্দর। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২২ লাখ ৬১ হাজার ৩০২ টিইইউএস, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৫ লাখ ৪ হাজার ৪৭৬ টিইইউএস, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৮ লাখ ৯ হাজার ৩৫৪ টিইইউএস, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৯ লাখ ১৯ হাজার ২৩ টিইইউএস, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩০ লাখ ৪ হাজার ১৪২ টিইইউএস এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ২৩৬ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করে চট্টগ্রাম বন্দর।

সর্বশেষ খবর