মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ১ হাজার শ্রমিকের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ১ হাজার শ্রমিকের মৃত্যু

গেল বছরে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৩৪ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আর আহত হয়েছেন ১ হাজার ৩৭ জন শ্রমিক। দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে ১ হাজার ২৭ জন পুরুষ ও সাতজন নারী। আহতদের মধ্যে ৯৬৪ জন পুরুষ ও ৭৩ জন নারী।

গতকাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) জরিপ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিন ‘বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি বিষয়ে সংবাদপত্রভিত্তিক বিলস জরিপ-২০২২’ প্রকাশ করা হয়।

এর আগে ২০২১ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৫৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় এবং আহত হন ৫৯৪ জন শ্রমিক। এ ছাড়া ২০২০ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় বিভিন্ন খাতে ৭২৯ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় এবং আহত হন ৪৩৩ জন শ্রমিক।

বিলসের জরিপ অনুযায়ী, দুর্ঘটনার পাশাপাশি নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেকে মারা গেছেন এবং আহত হয়েছেন। গত বছর নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যান ১৩৫ জন, আর আহত হন ১৫৫ জন। নির্যাতনের ধরনগুলোর মধ্যে রয়েছে- শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ, ছুরিকাঘাত, খুন, রহস্যজনক মৃত্যু, অপহরণ, মারধর ইত্যাদি।

২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রের বাইরে নির্যাতনের শিকার হন ৩৩০ জন শ্রমিক। এর মধ্যে ২১৩ জনের মৃত্যু, ৭৪ জন আহত, একজন নিখোঁজ এবং ৪২ জন আত্মহত্যা করেন। ৩৩০ জনের মধ্যে ২৫২ জন পুরুষ ও ৭৮ জন নারী শ্রমিক। আগের বছর ২০২১ সালে ৩০০ জন ও ২০২০ সালে ৩৬৪ জন কর্মক্ষেত্রের বাইরে নির্যাতনের শিকার হন।

কর্মক্ষেত্রে খাত অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি (৪৯৯ জন) শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে পরিবহন খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১৮ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে নির্মাণ খাতে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ১১২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় কৃষি খাতে। এ ছাড়া দিনমজুর ৪৬ জন, কনটেইনার ডিপোতে ৪৪ জন, মৎস্য ও মৎস্য শ্রমিক ৪৩ জন, ইলেকট্রিক শ্রমিক ২২ জন, নৌপরিবহন খাতে ১৫ জন, হোটেল রেস্টুরেন্ট শ্রমিক ১২ জন, ইটভাটা শ্রমিক ১০ জন, জাহাজভাঙা শিল্পের শ্রমিক সাতজন, কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি শ্রমিক ছয়জন এবং অন্যান্য খাতে ১০০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। গত বছর কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৩৭ জন শ্রমিক আহত হন। এর মধ্যে মৎস্য খাতে সর্বোচ্চ ৫০৩ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কনটেইনার ডিপোতে ১২৫ জন। তৃতীয় সর্বোচ্চ তৈরি পোশাক খাতে ৯০ জন শ্রমিক আহত হন। এ ছাড়া পরিবহন খাতে ৮৭ জন, নির্মাণ খাতে ৮৬ জন, নৌপরিবহন খাতে ২৫ জন, জাহাজভাঙা শিল্পে ২৩ জন, উৎপাদন শিল্পে ১৫ জন, কৃষি শিল্পে ১৫ জন, মেডিসিন ফ্যাক্টরিতে ১২ জন, দিনমজুর নয়জন, স্টিল মিলে সাতজন এবং অন্যান্য খাতে ৪০ জন শ্রমিক আহত হন।

সড়ক দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, বজ্রপাত, অগ্নিকাণ্ড, সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়ে ট্রলারডুবি, পড়ন্ত বস্তুর আঘাত, মাথায় কিছু পড়া, বিষাক্ত গ্যাস, নৌদুর্ঘটনা, দেয়াল অথবা ছাদ ধসে পড়া, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ইত্যাদি কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে জানিয়েছে বিলস। গেল বছর বিভিন্ন সেক্টরে সব মিলিয়ে ১৯৬টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি ১১৫টি (৭৯ শতাংশ) শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে তৈরি পোশাক খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫টি (৮ শতাংশ) শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে বিড়ি শিল্পে। এ ছাড়া পরিবহনে ১১টি, টেক্সটাইল শিল্পে ১০টি, হোটেল-রেস্টুরেন্ট খাতে পাঁচটি, রেলওয়েতে চারটি এবং অন্যান্য খাতে ২২টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে।

 

সর্বশেষ খবর