শনিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

অভিজাত এলাকায় পয়োবর্জ্যে তোলপাড়

যেখানে সেখানে পয়োবর্জ্য রোধে আরও কঠোর হতে হবে : আদিল মোহাম্মদ খান, অভিযান অব্যাহত থাকবে : ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী

নিজস্ব প্রতিবেদক

অভিজাত এলাকায় পয়োবর্জ্যে তোলপাড়

রাজধানীর ৮০ শতাংশের বেশি পয়োবর্জ্য যাচ্ছে খাল, বিল ও নদীতে। এতে দূষণের শিকার হচ্ছে পরিবেশ। এসব দূষণ রোধে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বিভিন্ন সময় নিজস্ব উদ্যোগে সেপটিক ট্যাংক নির্মাণ করে পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনা করার কথা বলে আসছে। কিন্তু কেউ উদ্যোগ নেয়নি। গত বুধবার গুলশানে যেখানে-সেখানে পয়োবর্জ্যরে লাইন বন্ধ করতে অভিযান পরিচালনা করলে তখনই টনক নড়ে এলাকাবাসীর। এখন অনেকে পয়োবর্জ্য লাইন ড্রেনে ফেলতে ওয়াসার কাছে অনুমতি চাইছে। তবে নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যত্রতত্র পয়োবর্জ্য লাইন বন্ধ করতে ডিএনসিসিসহ সব ধরনের সেবা সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে আর্থিক জরিমানাসহ পয়োবর্জ্য লাইন বন্ধ করতে আরও কঠোর হতে হবে। জানা যায়, গত বছর ডিএনসিসি পয়োবর্জ্যরে একটি জরিপ পরিচালনা করে। এ জরিপে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন এলাকায় ৩ হাজার ৮৩০টি বাড়িতে জরিপ করা হয়। এ বাড়িগুলোর মধ্যে ৩ হাজার ২৬৫টি বাড়ির পয়োবর্জ্য সরাসরি সারফেস ড্রেন ও লেকে পড়েছে। মাত্র ৪১টি বাড়িতে পয়োবর্জ্যরে সংযোগ সঠিকভাবে দেওয়া আছে এবং ৫২৪টি বাড়িতে আংশিকভাবে পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনা করেছে। এ জরিপের পর যেসব ভবনমালিক সারফেস ড্রেন, খাল বা লেকে পয়োবর্জ্যরে (স্যুয়ারেজ) সংযোগ দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে গত বুধবার অভিযান পরিচালনা করেছে ডিএনসিসি। অভিযানে দুটি ভবনের পয়োবর্জ্যরে সংযোগ কলাগাছ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। উভয় ভবনের মালিকই ডিএনসিসির সারফেস ড্রেনে পয়োবর্জ্যরে সংযোগ দিয়ে রেখেছিলেন। এ দুটি ভবন গুলশান ২ এর ১০২ ও ১১২ নম্বর রোডে। কিন্তু ভবনমালিকদের কোনো জরিমানা করা হয়নি। এ অভিযানের পর কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে অভিজাত এলাকার বাসিন্দারা। তৎক্ষণাৎ সেপটিক ট্যাংক নির্মাণ করতে না পারায় অনেকে ড্রেনে অস্থায়ীভাবে পয়োবর্জ্যরে লাইন দিতে ওয়াসার কাছে আবেদন করছে। আবার অনেকে সেপটিক ট্যাংক নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির অভিযানে বন্ধ হওয়া ১০৪ নম্বর ভবনের মালিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, বিষয়টি আমরা জানতাম না। ওয়াসাকে পয়োনিষ্কাশনের বিল নিয়মিত পরিশোধ করছি। তিনি আরও বলেন, সিটি           করপোরেশনের কাছে সড়ক কাটার অনুমতির জন্য আবেদন করেছেন। আর ওয়াসার কাছে পয়োবর্জ্যরে সংযোগ পুনরায় পয়োনিষ্কাশন নালার সঙ্গে যুক্ত করার আবেদন করেছেন। সিটি করপোরেশন থেকে রাস্তা কাটার অনুমতি দিলেই কাজ শুরু করা হবে। অনুমতি পেতে দেরি হলে বাসিন্দাদের সমস্যা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পয়োবর্জ্যরে যে পিটগুলো রয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ তিন থেকে চার দিনের তরল বর্জ্য জমা হতে পারবে। এরপর এগুলো উপচে পড়া শুরু হবে। তাই দ্রুত অনুমতি পেলে ভালো হয়।

এ বিষয়ে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ও নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন যে উদ্যোগটি নিয়েছে তা প্রশংসনীয়। সংস্থাটি বিগত বছরের বিভিন্ন সময় পয়োবর্জ্যরে লাইন ড্রেনে না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। একইসঙ্গে নিজস্ব ব্যবস্থায় সেপটিক ট্যাংক নির্মাণ করার জন্য প্রচারণা চালিয়েছিল। তবে সিটি করপোরেশন গত সপ্তাহে যে অভিযান পরিচালনা করেছে, তা নামমাত্র। তবে বিষয়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে একধরনের তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এক ধরনের সচেতনতাবোধ কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে দূষণের জন্য মালিককে নির্দিষ্ট পরিমাণে ফি দিতে হয়। এটা আমাদের দেশে নেই। এই পদ্ধতিটা চালু করতে হবে। একইসঙ্গে যারা পয়োবর্জ্যরে লাইন ড্রেনে দেয় তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। বড় ধরনের আর্থিক জরিমানা করে লাইনগুলো বন্ধ করতে হবে। তবে যত্রতত্র পয়োবর্জ্য রোধ সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থা রাজউক, ওয়াসাসহ সব সেবাদাতা সংস্থাকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। 

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভবন মালিকরা পয়োবর্জ্যরে লাইন ড্রেনে দিয়ে খাল, লেকসহ নদী দূষণ করছে। দীর্ঘদিন এভাবেই ঢাকার চারপাশের লেক ও খালগুলো দূষিত হচ্ছে। এই দূষণ রোধে ডিএনসিসি গত বছর থেকে ভবন মালিকদের নিজস্ব ব্যবস্থায় সেপটিক ট্যাংক নির্মাণের কথা বলে আসছে এবং একটা নির্দিষ্ট সময়ও বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু ভবন মালিকদের তেমন একটা সাড়া পাওয়া যায়নি। এ জন্য করপোরেশন অভিযান পরিচালনা করছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে জনগণকে সচেতন করতে সভা, সেমিনার করেছি। নগরবাসীকে আরও সচেতন করতে আমাদের প্রচার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আমরা খাল সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। এর মধ্যে যদি পয়োবর্জ্য খালে থাকে তাহলে তো আমাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না।

 

সর্বশেষ খবর