শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

তানিলের ইউরোপ স্বপ্নের মর্মান্তিক পরিণতি

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

নিজের ভবিষ্যৎ গড়তে আর পরিবারের স্বপ্ন পূরণে দালালের মাধ্যমে ইরানে গিয়েছিলেন সুনামগঞ্জ শান্তিগঞ্জের সম্ভাবনাময় তরুণ তানিল আহমদ (২২)। আরও বড় স্বপ্নচূড়ায় আরোহণের আশায় ইরান থেকে তুরস্ক হয়ে অবৈধ পথে গ্রিসে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন তানিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিণতি, তুরস্কে যাওয়ার পথে তীব্র শীতে অসুস্থ হয়ে বরফের মধ্যে সলিল সমাধি হয়েছে তার। তানিল আহমদের বাড়ি সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের ঠাকুরভোগ গ্রামে। গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে সে। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তানিল সবার বড়। পড়ালেখায় ও খেলাধুলা ভালো হলেও বাবার মৃত্যুর পর অভাবের সংসারে পরিবারের স্বপ্ন পূরণে গেল বছরের অক্টোবরে স্থানীয় দালালের মাধ্যমে ইরানে পারি জমান তানিল। তার স্বপ্ন ছিল- সেখানে থেকে ইউরোপে গিয়ে সবাইকে নিয়ে সুখে-শান্তিতে দিনযাপন করার। তবে ইরান থেকে তুরস্কে যাওয়ার পথে তীব্র ঠান্ডায় বরফে জমে ইউরোপ স্বপ্নের সলিল সমাধি হয় তানিলের। ৯ জানুয়ারি বরফের স্তূপে পড়ে থাকা তানিলের মরদেহের ছবি পরিবারকে পাঠালে মুহূর্তেই তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। তানিলের মৃত্যুতে গ্রামের বাড়িসহ সর্বত্র চলছে শোকের মাতম। তানিলের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবেশী শাহীন নামের এক দালালের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা চুক্তিতে ইরান যান তানিল। সেখানে অবস্থানরত শাহীনের কাছে দুই মাস অবস্থান করার পর আরও ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা চুক্তি করে তুরস্ক প্রবেশ করার কথা ছিল তানিলের। তীব্র শীতের মধ্যে গেইমে (দলে) না দেওয়ার কথা ছিল দালাল শাহীনের সঙ্গে। পরিবারের নিষেধ থাকার পরও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চাপ প্রয়োগ করে ৩৪ জন অধিবাসীর সঙ্গে ইরান সীমান্তে বর্ডার ক্রস করতে নিয়ে যাওয়া হয় তানিলকে। তুরস্কে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ইরানে ফেরত আসে দলটি। আর তীব্র ঠান্ডায় বরফে আটকা পড়ে মৃত্যু হয় তানিল আহমদের। ৯ জানুয়ারি মধ্যরাতে তানিলের লাশের ছবি পাঠায় গেইমে থাকা সঙ্গীরা। তানিলের লাশ ইরানের পুলিশ ক্যাম্পে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তানিলের মৃত্যুর সংবাদে অসহায় হয়ে পড়েছে পিতৃহারা পরিবারটি। কেঁদে কেঁদে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তানিলের মা। পরিবারের নিষেধ থাকার পরও দালাল চাপ প্রয়োগ করে গেইমে নিয়ে মৃত্যুরমুখে ফেলেছে বলে দাবি তানিলের বিধবা মা সেলিনা বেগম ও তার ছোট ছেলে জামিল আহমদের। তানিলের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে আকুতি জানিয়েছেন তারা। এদিকে লাশ দেশে আনতে যাবতীয় আইনি সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা সকিনা আক্তার বলেন, পরিবার আবেদন করলে প্রত্যয়নপত্রসহ ইমেইলের মাধ্যমে দুতাবাসে যোগাযোগ করে লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে যাবতীয় সহযোগিতা করা হবে।

সর্বশেষ খবর