মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইয়াবা আসে তিন রুটে

♦ মজুদ করা হয় নাফ নদের ৯ চরে ♦ নজরদারি বাড়িয়েছে প্রশাসন

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

ইয়াবা আসে তিন রুটে

বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী নাফ নদের বুকে জেগে ওঠা চরে মজুদ করা হচ্ছে মারণ নেশা ইয়াবা। মাদক রাজধানী মিয়ানমারের সান স্টেট থেকে কমপক্ষে তিন রুট দিয়ে এ চরগুলোয় আসছে ইয়াবার চালান। ৬৩ কিলোমিটার দীর্ঘ নদের কমপক্ষে নয়টি চরে এসব চালান মজুদ হচ্ছে। এ চরগুলোর তিনটির অবস্থান নদের বাংলাদেশ অংশে। বাকি ছয়টির অবস্থান মিয়ানমার অংশে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

বিজিবি টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নে অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার বলেন, ‘নাফ নদে জেগে ওঠা কিছু চরে ইয়াবা মজুদ করা হচ্ছে- এমন তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এরই মধ্যে বেশ কিছু সফল অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ওই চরগুলোয় গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।’ মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘নাফ নদে জেগে ওঠা চরে ইয়াবা মজুদ করা হচ্ছে এমন তথ্য আমরা পেয়েছি। এরই মধ্যে ওই সব এলাকায় গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিছু অভিযানও পরিচালনা করা হয়েছে।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজারভিত্তিক ইয়াবা মাফিয়ারা এক সময় ইয়াবা মজুদের   জন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং স্থলভাগকে ব্যবহার করলেও সাম্প্রতিক সময়ে তারা পরিবর্তন এনেছে কৌশলে। তারা ইয়াবা মজুদের জন্য স্থলভাগের পাশাপাশি ব্যবহার করছে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী নাফ নদের বুকে জেগে ওঠা চরকে। ৬৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর, যেগুলো স্থানীয়দের কাছে দ্বীপ হিসেবে অধিক পরিচিত। এ দ্বীপগুলোকেই তারা ইয়াবা মজুদের জন্য ব্যবহার করছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে নাফ নদে ইয়াবা মজুদ হয় এমন ৯টি দ্বীপ বা চরের সন্ধান মিলেছে। যার মধ্যে মিয়ানমার অংশে রয়েছে ছয়টি এবং বাংলাদেশ অংশে তিনটি দ্বীপ। মিয়ানমার অংশে থাকা চরগুলোর মধ্যে রয়েছে নাকপুরা দ্বীপ, লাল দ্বীপ, চাকমা কাটা দ্বীপ, রংমংখালী দ্বীপ, কুয়াং চিবং দ্বীপ ও খুরইখালী দ্বীপ। বাংলাদেশে থাকা চরগুলোর মধ্যে রয়েছে জালিয়ার দ্বীপ, খুরইছড়া দ্বীপ ও বিলাইছড়া দ্বীপ। মিয়ানমারভিত্তিক মাদক মাফিয়ারা মাদকের রাজধানী খ্যাত মিয়ানমারের সান স্টেট থেকে তিনটি আন্তর্জাতিক রুট ব্যবহার করে নাফ নদের ইয়াবা ভাগাড়ে মজুদ করে। এ রুটগুলোর একটি হচ্ছে শান স্টেট-মান্দালে-তুয়াঙ্গী-মাগওয়ে-মিনবু-পাদান-সিত্তেই-মংডু হয়ে নাফ নদ। ইয়াবা পাচারের অন্য রুটটি হচ্ছে সান স্টেট-তুয়াঙ্গী-পেথেইন-না থিয়াং চু-সিত্তেই-মংডু হয়ে নাফ নদ। ইয়াবা পাচারের তৃতীয় আন্তর্জাতিক রুট হচ্ছে সান স্টেট-পাইয়ে-পান দং-টংগাপ-সিত্তেই হয়ে মংডু। এ তিন রুট দিয়ে ইয়াবার চালান এনে রাখা হয় চরগুলোয়। পরে সুবিধা মতো সময়ে পাচার করা হয় বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কক্সবাজার পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আগে ইয়াবা মজুদের জন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং স্থলভাগের বিভিন্ন জায়গাকে ব্যবহার করত মাদক মাফিয়ারা। সাম্প্রতিক সময়ে তারা মজুদের কৌশলে পরিবর্তন এনেছে। নাফ নদের বুকে জেগে ওঠা বিভিন্ন চরকে তারা ইয়াবা মজুদের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। মংডু থেকে ইয়াবার চালান এনে মজুদ করা হচ্ছে নাফ নদের বিভিন্ন চরে। পরে সুবিধা মতো সময়ে ওই চালান পাচার করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। বিষয়টি নজরে আসার পর নাফ নদের বুকে জেগে ওঠা চরগুলোয় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বৃদ্ধি করা হয়েছে অভিযান। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু সফল অভিযান পরিচালনা করেছে প্রশাসন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের টেকনাফ বিশেষ জোনের সহকারী পরিচালক মো. সিরাজুল মোস্তাফা বলেন, ‘নাফ নদের বুকে জেগে ওঠা চর ও দ্বীপে ইয়াবা মজুদের তথ্য আমাদের কাছেও রয়েছে। তাই বাংলাদেশ অংশে থাকা চরগুলোয় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর