শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
আড়াই শ বছরের ঐতিহ্য

সবাই মেতেছে মার্বেল খেলায়

রাহাত খান, বরিশাল

সবাই মেতেছে মার্বেল খেলায়

বরিশালের আগৈলঝাড়ার প্রত্যন্ত রামানন্দের আঁক গ্রামে আড়াই শ বছরের ঐতিহ্যবাহী মার্বেল মেলা বা মার্বেল উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। করোনার কারণে বিগত দুই বছর মেলা বন্ধ থাকায় এবার বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় উৎসবে মাতোয়ারা বিভিন্ন বয়সের হাজারো নারী, পুরুষ ও শিশু। প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তির দিন ঘটা করে মার্বেল উৎসব পালন করে স্থানীয়রা। মার্বেল মেলা হলেও পৌষসংক্রান্তি, বৈষ্ণব সেবা, চাল-জল, মার্বেল খেলা এবং পৌষমেলার মধ্য দিয়ে দুই দিনব্যাপী এই উৎসব পালন করেন তারা। এবার মেলা আয়োজন করা হয়েছে রামানন্দের আঁক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। মানবতার কল্যাণ, আত্মিকভাবে সুস্থ থাকা এবং ধনসম্পদে পরিপূর্ণ হওয়ার প্রার্থনা করা হয় এই আয়োজনে। উৎসবে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী ওই এলাকার মানুষ গ্রামে ফিরেছেন দু-এক দিন আগেই। এ ছাড়া আশপাশের বিভিন্ন এলাকার বহু মানুষ অংশ নিয়েছে মার্বেল মেলায়। ওই গ্রামের আউলিয়া বাড়ির ডা. বিধান চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, এই গ্রামে ছয় বছর বয়সের সোনাই চাঁদ নামে এক শিশুর বিয়ের এক বছর না যেতেই তার স্বামী মারা যায়। স্বামীর মৃত্যুর পর শ্বশুরবাড়িতে একটি নিম গাছের নিচে আরাধনা ও পূজার্চনা শুরু করেন সোনাই চাঁদ। এক সময় সোনাই চাঁদের অলৌকিক কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে পড়ে। সোনাইয়ের জীবনকালে ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে সোনাই চাঁদ আউলিয়া মন্দির স্থাপন করা হয়। তার মৃত্যুর পর মন্দির আঙিনায় চলে নাম সংকীর্ত্তন ও নবান্ন উৎসব। স্থানীয়দের উদ্যোগে ২০১২ সালে মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। সোনাই চাঁদের মৃত্যুর পর ওই বাড়িটি সোনাই আউলিয়ার বাড়ি হিসেবে পরিচিতি পায়। হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম পার্বণ পৌষ সংক্রান্তিতে গত প্রায় আড়াই শ বছর ধরে ওই গ্রামে মার্বেল মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মলিনা রানী জানান, গত শনিবার পৌষ সংক্রান্তির আগের রাতভর ধর্মীয় সংকীর্তন ও বৈষ্ণব সেবা করেন তারা। গত রবিবার সকালে সিদ্ধ চালের গুঁড়া, গুড় ও নারিকেল দিয়ে তৈরি তরল প্রসাদ (চাল-জল) বিতরণ করা হয়। সকাল ৮টার পর থেকেই শুরু হয় মার্বেল উৎসব। আউলিয়া বাড়ি মূল কেন্দ্র হলেও মার্বেল খেলা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের বিভিন্ন বাড়ি, রাস্তাঘাটসহ সর্বত্র। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, যুবক-শিশু সব শ্রেণি-বয়স-পেশার মানুষ অংশ নিয়েছে মার্বেল খেলায়। চারদিকে হাজারো মানুষের মার্বেল খেলার আবহে এক অভূতপূর্ব পরিবেশের সৃষ্টি হয় রামানন্দের আঁক গ্রামে। মার্বেল খেলাকে কেন্দ্র করে মার্বেল বেচাকেনাও জমজমাট হয় এই দিনে। মার্বেল উৎসবে রং বাড়াতে প্রতি বছর এই দিনে পৌষমেলার আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। স্থান সংকট থাকায় এবার রামানন্দের আঁক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পৌষমেলার আয়োজন করে তারা।

ডা. বিধান বিশ্বাস জানান, ওই গ্রামের বিভিন্ন বয়সের মানুষ এই দিনটির অপেক্ষায় থাকেন। গতকাল সব বয়সের মানুষ মার্বেল খেলায় মেতে ওঠেন। মার্বেল খেলায় এত আনন্দ তা এই উৎসবে অংশ না নিলে বোঝার উপায় নেই। স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মিহির বিশ্বাস জানান, শীতকালে মাঠ-ঘাট শুকিয়ে যাওয়ায় তাদের পূর্ব পুরুষরা এই দিনে মার্বেল খেলার প্রচলন করেন। বংশ পরস্পরায় এই উৎসব চলে আসছে। আগামীতে উৎসব আরও জাঁকজমকপূর্ণ করতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান তিনি। আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এখানে যোগদানের পরই মার্বেল মেলার বিষয়টি তিনি জেনেছেন। এটি স্থানীয়দের আড়াই শ বছরের ঐতিহ্য। বর্তমান সরকার ঐতিহ্য লালন করে। এই দিনে সারা বছরের ক্লান্তি ভুলে সব বয়সের মানুষ মার্বেল খেলায় মেতে ওঠেন। পরিণত হয় উৎসবে। এটি আরও আকর্ষণীয় করতে আগামীতে মার্বেল মেলায় সব ধরনের সহযোগিতা করার কথা বলেন তিনি। এদিকে মার্বেল মেলা উৎসবমুখর এবং শান্তিপূর্ণ করতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আগৈলঝাড়া থানার ওসি গোলাম সরোয়ার।

 

সর্বশেষ খবর